Valabhi University: নালন্দার সঙ্গে তুলনা হতো, কেমন ছিল প্রাচীন ভারতের বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়?

জানুন প্রাচীন ভারতের বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে
Untitled_design(620)
Untitled_design(620)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রাচীন ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বল্লভী (Valabhi University)। বর্তমানে পশ্চিম গুজরাটের ভাবনগর অঞ্চলে এর ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত এবং এই  স্থান বল্লবীপুর নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার এবং প্রসার কেন্দ্র হিসেবে বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব প্রাচীন ভারতবর্ষে খুব বেশি ছিল। ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এটি একটি প্রধান বৌদ্ধ ধর্মের জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা মৈত্রক রাজ্যে আক্রমণ চালায়

ঐতিহাসিকদের মতে, বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়ে (Valabhi University) হীনযান মতেই শিক্ষা দান করা হতো এবং এই মতকেই প্রচার করা হতো। প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ধর্মের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তা তিনটি প্রধান সম্প্রদায় বিভক্ত হয়ে যায়। যথা হীনযান, মহাযান এবং বজ্রযান। ৬০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজা মৈত্রক ভট্টর্কা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থাপন করেন বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত, বল্লভী ছিল মৈত্রক রাজ্যের রাজধানী। মৈত্রক রাজারা অত্যন্ত শিক্ষানুরাগীও ছিলেন। সেই কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত পৃষ্ঠপোষক হয়ে ওঠেন তাঁরা। ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানরা মৈত্রক রাজ্যে আক্রমণ চালায়। এই কারণে বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Valabhi University) ওপরেও আঘাত আসে।  কিন্তু পরবর্তীকালে মৈত্রক রাজ বংশের উত্তরসূরীরা একইভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

কোন কোন বিষয় পড়ানো হতো


ঐতিহাসিকদের মতে, বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি এখানে বিজ্ঞানও পড়ানো হতো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় বিজ্ঞান ছাড়াও নীতি পড়ানো হতো। রাজনৈতিক বিজ্ঞানও পড়ানো হতো। ব্যবসা, কৃষি, প্রশাসন, দর্শন, ধর্মীয় চিন্তাধারা, অর্থনীতি, হিসাব শাস্ত্র, আইন উল্লেখযোগ্যভাবে পড়ানো হতো। তৎকালীন ভারতবর্ষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বল্লভীতেও একটি বৃহৎ গ্রন্থাগার ছিল বলে জানা যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্ব সম্পূর্ণ উত্তর ভারত জুড়েই ছিল। মৈত্রক রাজবংশ এই বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, সারা দেশের পাশাপাশি আশেপাশের দেশগুলি থেকেও ছাত্ররা এই বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ নিতে আসতেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের (Valabhi University) ডিগ্রিধারীদের অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হতো। সমাজের এবং রাজ দরবারে তাঁরা উচ্চ প্রশাসনিক পদে নিযুক্ত হতেন বলে জানা যায়।

গুণামতি এবং স্থিরমতি নামের দুই সুপরিচিত বৌদ্ধ পণ্ডিত এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়াতেন 

গবেষকরা জানিয়েছেন, গুণামতি এবং স্থিরমতি নামের দুই সুপরিচিত বৌদ্ধ পণ্ডিত এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়াতেন। জানা যায়, তাঁরা উভয়েই আচার্য বসুবন্ধের শিষ্য ছিলেন। পড়ুয়ারা বল্লভীতে ভর্তি হয়ে তাঁদের শিক্ষা শেষ করার জন্য দুই তিন বছর সেখানে আবাসিক হিসেবেই থাকতেন। শিক্ষার সমাপ্তির পরে রাজ দরবারে তাঁরা হাজির হতেন এবং সেখানেই তাদের বিভিন্ন চাকরিতে নিযুক্ত করা হতো। কথাসরিতসাগরেও বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ মেলে। সেখানে একজন জনৈক ব্রাহ্মণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যিনি তাঁর সন্তানকে নালন্দা বেনারসে ভর্তি না করে বল্লভীতে (Valabhi University) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কথাসরিতসাগর অনুসারে ব্রাহ্মণের নাম ছিল বাসুদত্ত এবং তাঁর ছেলের নাম ছিল বিষ্ণুদত্ত।

চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ কী বলছেন

চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর মতে, বল্লভীর গুরুত্ব কোনও অংশেই নালন্দার থেকে কম কিছু ছিল না। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ছয় হাজার বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এখানে পাঠ নিতেন বলে জানা যায়। জানা যায় খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Valabhi University) গুরুত্ব সবথেকে বেশি ছিল। চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল থেকেই অনেক ছাত্র সেখানে শিক্ষার জন্য আসতেন। এমনকি দূরবর্তী গাঙ্গেয় সমভূমি থেকেও বিশেষত ব্রাহ্মণ সমাজের ছেলেরা উচ্চ শিক্ষার জন্য তাঁদের সন্তানদের ওই বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাতেন।

এখানে ছাত্ররা আবাসিকভাবে থাকতেন

জানা যায়, বল্লভীর প্রথম বিহার দুধ বিহার নামে পরিচিত এবং এটিকে বিহার মণ্ডল নামেও ডাকা হতো। সমুদ্র তীরবর্তী জায়গায় অবস্থিত হওয়াতেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই বিশ্ববিদ্যালয়। অসংখ্য ধনী বণিক এই জায়গায় বসবাস করতে বলে জানা যায়। এরা প্রত্যেকেই বল্লভীর অত্যন্ত পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলে জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এখানে ছাত্ররা আবাসিকভাবে থাকতেন এবং তাঁদের বাসস্থানের জন্য অসংখ্য আশ্রম গড়ে তোলা হয়েছিল। যার সংখ্য়া ছিল শতাধিক।

প্রতি পাঁচ জন পড়ুয়ার জন্য একজন করে পণ্ডিত নিযুক্ত করা হতো 

ঐতিহাসিকদের মতে, বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিষয় ১০ বছর ধরে পড়ানো হতো এবং প্রতি পাঁচ জন পড়ুয়ার জন্য একজন করে পণ্ডিত নিযুক্ত করা হতো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যে সকলেই এখানে সমানভাবে বিবেচিত হতেন অর্থাৎ কোনও রকমের জাতিভেদ প্রথা শ্রেণিকক্ষে বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কাজ করত না। একজন ধনীর ছেলে তথা গরীবের ছেলে একই সঙ্গে বসে পড়াশোনা করত। এখানের পড়াশোনা সম্পূর্ণভাবে বিনামূল্যে ছিল।

২০১৭ সালের বৌদ্ধ সম্মেলন 

জানা যায় ছাত্রদের জন্য বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয় (Valabhi University) কর্তৃপক্ষ আলাদা ইউনিফর্মেরও ব্যবস্থা করেছিল। ২০১৭ সালের গুজরীটের বরোদায় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সম্মেলনে বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে গড়ে তোলার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এই মর্মে একটি আবেদনপত্র লেখা হয় এবং যা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles