মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জগন্নাথদেবের (Lord Jagannath) মন্দির অত্যন্ত পবিত্র। বিশেষ করে বিষ্ণু ও কৃষ্ণ উপাসকদের নিকট এটি একটি তীর্থস্থান। জগন্নাথ মন্দির (Jagannath Temple) ওড়িশার সৈকতশহর পুরীর (Puri) পূর্ব সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বপ্নাদেশ পালনার্থে প্রাথমিকভাবে মন্দিরটি নির্মাণের পর, জগন্নাথ মন্দিরটি দ্বাদশ শতাব্দীতে পুনঃনির্মাণ করেন গঙ্গা রাজবংশের রাজা অনন্তবর্মণ চোদাগঙ্গা। কিন্তু মন্দিরটির কাজ সমাপ্ত করেন তার বংশধর অঙ্গভিমা দেব। যদিও মন্দিরের নির্মাতাদের নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
১০.৭ একর জমিতে ২০ ফুট প্রাচীর দিয়ে ঘেরা জগন্নাথ মন্দির। ভোগমন্দির, নটমন্দির, জগমোহনা এবং দেউল নামে চারটি বিশেষ কক্ষ আছে মন্দিরে। ভোগমন্দিরে খাওয়া দাওয়া হয়, নটমন্দিরে আছে নাচ-গানের ব্যবস্থা, জগমোহনায় ভক্তরা পূজাপাঠ করেন এবং দেউলে পূজনীয় বিগ্রহগুলো স্থাপিত।
আরও পড়ুন: প্রতিবছর রথযাত্রার আগে জ্বর আসে জগন্নাথদেবের, কেমন করা হয় চিকিৎসা?
প্রধান মন্দিরের কাঠামো মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে নির্মিত এবং দুটি আয়তাকার দেওয়াল দ্বারা আবৃত। বহিঃপ্রাঙ্গণকে মেঘনাদ প্রাচীর বলা হয় (২০০মিটার/১৯২ মিটার) এবং অভ্যন্তরীণ ঘাঁটিটি কুর্মাবেদ নামে পরিচিত (১২৬ মিটার/৯৫ মিটার)। মন্দিরে চারটি প্রবেশদ্বার রয়েছে- সিংহদ্বার, হষ্বদ্বার, খঞ্জদ্বার এবং হস্তীদ্বার।
জগন্নাথ মন্দিরের আশেপাশে প্রায় তিরিশটি ছোট-বড় মন্দির লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরের দেউলে রয়েছে জগন্নাথ, জগন্নাথের দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রাদেবীর সুসজ্জিত মূর্তি। তাঁদের বিগ্রহের পাশাপাশি সুদর্শন, শ্রীদেবী, ভূদেবী এবং মাধব দেবতাও আরাধ্য হন।
প্রতিদিন ভোরে কিশোর ছেলেরা কিছু নির্দিষ্ট পূজাবিধি অনুসরণ করে মন্দিরের ৬৫ মিটার (২১০ ফুট) উঁচুতে উঠে চক্রের উপর পতাকাগুলো লাগায়। গ্রীষ্ম, বর্ষা সবসময়ই তারা প্রস্তুত পতাকা স্থাপনে। আগের দিনের পুরনো পতাকাগুলো জনগণের মাঝে নিলামে বিক্রয় করা হয়।
জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরকেও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রান্নাঘর মনে করা হয়। এখানে প্রায় ছাপান্ন রকম উপকরণ দিয়ে মহাপ্রসাদ তৈরি করা হয়। প্রত্যেকদিন এখানে প্রচুর পরিমাণ রান্না করা হয়, কিন্তু দেখা গেছে আজ পর্যন্ত মন্দিরের খাবার কখনওই নষ্ট হয়নি।
আরও পড়ুন: পুরীর রথযাত্রার তিন রথের আলাদা মাহাত্ম্য আছে, জানেন কি?
জগন্নাথ মন্দিরের অস্বাভাবিকতা এবং লোকবিশ্বাস—
জগন্নাথ মন্দিরের ওপরের অংশটিতে রত্নমূর নামের একটি বৃহৎ অদ্ভুত চৌম্বক শক্তি রয়েছে, যেটি মন্দিরটিকে যেকোনও রকমের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে বলে মনে করা হয়।
কথিত আছে, মন্দিরের উপর দিয়ে কিছু যেতে পারে না। কোনো পাখিকেও কখনও মন্দিরের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়নি।
এমনটা শোনা যায় যে, সূর্যের অবস্থান যে দিকেই থাকুক, মাটিতে মন্দিরের চূড়ার কোনও ছায়া পড়ে না।
পুরীর সমুদ্রের কাছেই স্থাপিত জগন্নাথ মন্দির। কিন্তু মন্দির চত্বরে ঢোকার সাথে সাথেই সমুদ্রের কোনও শব্দ পাওয়া যায় না। এর নেপথ্যে একটি পৌরাণিক গল্প রয়েছে। কথিত, সুভদ্রাদেবী চেয়েছিলেন মন্দিরের ভেতরে যেন সবসময় শান্তি বিরাজ করে, তাই কোনও প্রকার শব্দ মন্দিরের শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে না।
মন্দিরের চূড়ায় যে ধ্বজা বা পতাকা রয়েছে, তা প্রতিদিন ভোরে লাগানো হয়। পতাকাটি সবসময় হাওয়ার বিপরীতে উড়তে দেখা যায়।
+ There are no comments
Add yours