মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শহরের মঠবাড়ি হোক কিংবা দীনদয়াল ঠাকুরবাড়ি। প্রায় প্রতিটি বিগ্রহ বাড়িতে ব্যবহৃত বেলজিয়াম কাচের ফানুসগুলির একেকটির বয়স প্রায় ২০০ থেকে ৩৫০ বছর।উচ্চতা প্রায় দু' ফুটের মতো। ঢেউ খেলানো বিভিন্ন আকৃতির রংবাহারি কাচের উপর আঁকা থাকে বিভিন্ন নকশা। বেলজিয়াম কাচের ফানুসের প্রতিটির দাম ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কেন এত দাম? কারণ অবশ্যই তার সূক্ষ্ম কাজের কেরামতির জন্য। সারা বছর বাড়ির অন্দরমহলে সযত্নে রক্ষিত থাকে সেগুলি। রাস উৎসবের (Rash Yatra 2023) সন্ধ্যায় এই বেলজিয়াম ফানুস দিয়ে সাজানো হয় প্রতিটি বাড়ির মূল প্রাঙ্গণ। ভিতরে টিমটিম করে জ্বলতে থাকে মোমবাতির আলো। বাজারের সাধারণ মোম নয়, ফানুসের ভিতর বসানো হয় প্যারাসিন দিয়ে তৈরি সলতে পাকানো বিশেষ ধরনের মোম।
উপচে পড়ে ভিড় (Rash Yatra 2023)
এখনও বংশ-পরম্পরায় এই মোম তৈরি করেন শান্তিপুরের কয়েক ঘর মোমশিল্পী। ভাঙা রাসের দিন নগর পরিক্রমা দেখতে শহরের রাজপথে যে ভিড় উপচে পড়ে, আলো আঁধারির খেলা দেখতে বিগ্রহ বাড়ির রাস উৎসবে সেই ভিড়ের অন্তত তিনগুণ দর্শনার্থী থাকেন। নামে বেলজিয়াম ফানুস হলেও এগুলি এক সময় নিয়ে আসা হয়েছিল ফ্রান্স এবং ভেনিস থেকে। এখনও সেখানে এই ফানুস তৈরি হয়। বিগ্রহবাড়ির সদস্যদের কথায়, এখন আর ইউরোপ থেকে বেলজিয়াম ফানুস নিয়ে আসা হয় না। পরিবর্তে জায়গা নিয়েছে শহর কলকাতায় তৈরি কাচের অন্যান্য ফানুস। দামে কম হলেও আভিজাত্যে ধারেকাছেও যায় না।
তিনদিন সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন (Rash Yatra 2023)
রাসের তিনদিন সন্ধ্যার পর থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় শহরের মঠবাড়ি ও দীনদয়াল বাড়িকে। রাসের সময় অন্তত শতাধিক বেলজিয়াম কাচের ফানুসে আলোয় আলো হয়ে ওঠে এই বাড়ি। পরিবারের সদস্য সুশান্ত মঠ বলেন, দেখতে অতীব সুন্দর। কিন্তু ফানুসের ভিতর মোমবাতি বসানোর ধরন একেবারেই সহজ নয়। অসাবধানতা কিংবা ভিতরের জ্বলন্ত মোমবাতি প্রায় এক ইঞ্চি ছোট হয়ে এলেই তাপের কারণে ভেঙে যেতে পারে সেগুলি। এভাবেই ৩০০ বছরের বহু পুরনো ফানুস ভেঙে গিয়েছে এই বাড়িতে। এক সময় মঠবাড়িতে রাসের প্রাঙ্গণে নাকি অন্তত দেড়শোখানা বেলজিয়াম কাচের ফানুস ঝোলানো হত। আজ শুধুই যত্নের ওপর টিকে রয়েছে এই প্রথা (Rash Yatra 2023)।
জ্বালানো-নেভানোর কায়দা
জানা গিয়েছে, ফানুসগুলিতে মোমবাতি জ্বালানোর ধরন যেমন আলাদা, তেমনিই মোমবাতি নেভানোর কায়দা। সরু আকৃতির একটি লাঠির মাথায় ন্যাকড়া বেঁধে স্পিরিটে চোবানো হয়। এরপর তাতে আগুন ধরিয়ে ঝুলন্ত ফানুসের ভিতরে থাকা মোমবাতি জ্বালানো হয়। স্থানীয় ভাষায় একে বলে 'হুঁশ'। ঠিক একইভাবে লাঠির মাথায় ধাতব পাত্র ঝুলিয়ে কাচের ফানুসের উপরে আলতো চেপে ধরলে নিভে যায় মোমবাতি। এই পদ্ধতিকে স্থানীয়রা বলেন ফোঁস। শান্তিপুরের বাসিন্দারা বলছেন, এই শহরে রাসের (Rash Yatra 2023) মাহাত্ম্যের সঙ্গে যেন ওতপ্রোত সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে অভিজাত আলোকধারা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours