তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিচ্ছে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার সমস্যা। বিশ্ব জুড়ে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অধিকাংশ প্রবীণ নাগরিক অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর জেরে জীবনযাপনের মান কমছে। স্বাভাবিক জীবন নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ভারতেও অ্যালজাইমারের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছে, এই রোগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, রোগ নির্ণয় না হওয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী অ্যালজাইমার (Alzheimer's Disease) আক্রান্ত কিনা, তা বুঝতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। পাশপাশি এই রোগ নিরাময়ে নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। তাই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। তাই প্রথম পর্যায়েই রোগ নির্ণয় করতে পারলে, নানান থেরাপির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয় বলেই জানাচ্ছে চিকিৎসকদের একাংশ।
কী বলছে নয়া গবেষণা? (Alzheimer's Disease)
বিশ্ব জুড়ে অ্যালজাইমার নিয়ে একাধিক গবেষণা চলছে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান-এর একদল চিকিৎসক-গবেষক জানিয়েছেন, অ্যালজাইমারের মতো রোগের কিছু উপসর্গ চল্লিশ বছরের পরেই স্পষ্ট হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই ধরনের উপসর্গকে অবহেলা করেন। কিন্তু সেই উপসর্গ দেখা দিলে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ঘরোয়া কিছু সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে ওই ব্যক্তির অ্যালজাইমারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতখানি! তাহলে নানান থেরাপির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করা সহজ হয়। ওই চিকিৎসক-গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা না বাড়ালে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে পারে।
অ্যালজাইমার্স কী?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছে, অ্যালজাইমার (Alzheimer's Disease) হল মস্তিষ্কের স্নায়ুঘটিত এক ধরনের সমস্যা। এই রোগে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের একাধিক স্নায়ু কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে, ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। নিজের পরিচয়, নাম এগুলোও আক্রান্ত ভুলে যান। আস্তে আস্তে শরীরের ক্ষমতাও হারিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছে, ষাট বছরের পরে অধিকাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ওই আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চল্লিশের পরে এই রোগের কিছু লক্ষণ স্পষ্ট হয়। কিন্তু কোন লক্ষণকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে গবেষণা?
দিনের সাধারণ ঘটনা মনে থাকছে তো!
সাম্প্রতিক ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দিনের খুব সাধারণ ঘটনা মনে থাকছে কিনা সেদিকে খেয়াল করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছে, চল্লিশের পরে অনেকেই খুব সাধারণ জিনিস ভুলে যান। অনেক সময়েই কাজের চাপে মনে রাখার ক্ষমতা কমে। কিন্তু অ্যালজাইমারের মতো রোগের অন্যতম উপসর্গ এই ভুলে যাওয়া। তাই খেয়াল রাখা জরুরি চল্লিশোর্ধ ব্যক্তি নিয়মিত সাধারণ জিনিস ভুলে যাচ্ছেন কিনা। ওই গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছে, দশ মিনিট আগে ঘটনা কোনও ঘটনা, হয়তো কাঁচের গ্লাস ভেঙে যাওয়া কিংবা পরিবারের কোনও সদস্যের বাইরে যাওয়ার মতো কথা একেবারেই মনে করতে না পারলে, নিয়মিত এই ধরনের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়লে সতর্ক হতে হবে। এটা অ্যালজাইমারের লক্ষণ।
বারবার মেজাজ বদল বিপজ্জনক! (Alzheimer's Disease)
পরিবারের চল্লিশোর্ধ্ব সদস্যের বারবার মেজাজ বদল হলে সচেতনতা জরুরি বলেই জানাচ্ছে চিকিৎসকদের একাংশ। তারা জানাচ্ছে, হঠাৎ করেই রেগে যাওয়া, অকারণে উত্তেজিত হয়ে থাকা, সামান্য বিষয়েও বিরক্তি বা মারাত্মক উদ্বিগ্ন হয়ে থাকা ব্যক্তিকে নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। মস্তিষ্ক নানান আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত দ্রুত এই মেজাজ বদল ইঙ্গিত দিচ্ছে মস্তিষ্ক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাই এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঘরের জিনিস রাখা মনে থাকছে কি?
গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছে, ঘরে কোথায় কোন জিনিস রাখা হয়, সেটা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে (Problems in Mid-forties) মনে থাকছে কিনা সেটা খেয়াল করা দরকার। তাঁরা জানাচ্ছেন, রান্নাঘরে চা তৈরির সামগ্রী কোথায় থাকে কিংবা ব্যাঙ্কের ডকুমেন্ট আলমারির কোথায় রাখা হয়, সেটা মনে রাখতে পারছেন কিনা সে নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে, বয়স পঞ্চাশের চৌকাঠে পা দেওয়ার আগেই অনেকে এই সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখতে পারছেন না। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছে, বেশ কিছু নির্দিষ্ট থেরাপি রয়েছে, যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই দ্রুত রোগ (Alzheimer's Disease) নির্ণয় হলে মোকাবিলা সহজ হবে। দরকার সচেতনতা। তবেই অ্যালজাইমারের মতো রোগের দাপট রুখতে পারবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours