মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পুজোর (Durga Puja 2023) কটা দিন জমিদার বাড়ি সেজে উঠত আলোর রোশনাইয়ে। নহবতের মূর্ছনা আর ঢাকের বাদ্যিতে মুখর হত ঠাকুর দালান। থাকত যাত্রাপালা, কবিগান, রামলীলা, পুতুল নাচের আসর। এখন সে সব অতীত। জমিদারির রমরমা আর নেই। নেই আগের মতো পুজোর জৌলুস। তবে পরম্পরা মেনে আজও পাল পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম ফি বছর ব্রতী হন দেবী দুর্গার আরাধনায়। গত কয়েক বছর কোভিডের জেরে এই পুজোর ছন্দপতন ঘটেছিল। গত বছর থেকে পুরনো ছন্দে ফেরা শুরু। এবার স্বাভাবিক ভাবেই পুজোর আয়োজনে খানিক জৌলুস বাড়াতে চাইছেন পাল পরিবারের সদস্যরা।
ইট, কাঠ, পাথরে জমিদারির সাক্ষ্য
জেলার অন্যতম প্রাচীন এই জমিদার বাড়ির পুজোর (Durga Puja 2023) সঙ্গে রয়েছে কলকাতার চাঁদপাল ঘাটের যোগসূত্র। কথিত আছে, যার নামে চাঁদপাল ঘাট, তাঁর পোশাকি নাম চন্দ্রমোহন পাল। তিনিই সোমসারের এই দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন৷ এই চন্দ্রমোহন পাল সেই সময় কলকাতায় বিলিতি কাপড়ের ব্যবসা করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছিলেন। তিনিই কাপড়ের ব্যবসার জন্য গঙ্গায় গড়ে তুলেছিলেন ফেরি ঘাট, যা বর্তমানে চাঁদপাল ঘাট নামে পরিচিত। চন্দ্রমোহনবাবুই আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর আগে বর্ধমান রাজাদের কাছ থেকে ইন্দাসের ৬ টি মৌজা কিনে নিয়ে জমিদারির পত্তন করেন। সোমসারে গড়ে তোলেন সুবিশাল জমিদার বাড়ি। সেই বাড়ি আজও ইতিহাস বহন করে চলেছে। তবে সেই বাড়ি জুড়ে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। ২৫০ বছরের পুরনো এই বাড়ির প্রতিটি ইট, কাঠ, পাথর জমিদারির সাক্ষ্য বয়ে চলেছে আজও। চন্দ্রমোহন পাল সেই সময় সোমসারের প্রজাদের জন্য দামোদর ঘাটে কলকাতা থেকে পুজো উপলক্ষ্যে বিলিতি কাপড় আনতেন এবং বিলি করতেন গ্রাম জুড়ে।
অষ্টমী ও নবমীতে মাসকলাই বলি (Durga Puja 2023)
চন্দ্রমোহনের আমল থেকে এখানে হিন্দু, মুসলিম সকলেই সমান ভাবে অংশ নেন পুজোর উৎসবে। ফলে পুজোর (Durga Puja 2023) চার দিন মিলন মেলায় পরিণত হয় সোমসারের পালবাড়ির ঠাকুর দালান। পালবাড়ির সকল সদস্য, আত্মীয়স্বজন সবাই পুজোর কটা দিন সোমসারে আসেন। এই পরম্পরা সমানে চলে আসছে। সোমসার পালবাড়ির অন্যতম সদস্য উদয়কুমার পাল তাঁর ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, ছোটবেলায় এই পুজোর যে জৌলুস ও জাঁকজমক ছিল, তা দিন দিন ফিকে হয়ে আসছে। তবে সেই পুজোর গোড়পত্তনের দিন থেকে একই নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে পুজো চলে আসছে। সেই রীতি মেনে এখনও অষ্টমী ও নবমীতে মাসকলাই বলি দেওয়া হয়। এখন পঞ্জিকা দেখে বলিদান হলেও আগে বর্ধমানের রাজবাড়ির সর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দিরের তোপধ্বনি শুনে সন্ধিক্ষণ নির্ধারণ করা হত। এখন অবশ্য সেই প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে, পাল পরিবারের দেশে-বিদেশে যেখানে যাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, তাঁরা এই দুর্গাপুজোর সময় এসে মিলিত হন। ফলে কার্যত এই পুজো চাঁদপাল ঘাটের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটায় সোমসারের। জমিদারি নেই, নেই এই পুজোর আগের মতো আড়ম্বর। তবে জমিদারির ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবার এখানে পুজোর বাদ্যি বেজে ওঠে। এবারও পাল বাড়িতে মা আসছেন। চলছে সাজ সাজ রব।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours