Nalanda University: ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়! শুরু শিক্ষাদান

ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, দেশ-বিদেশ থেকে ছাত্ররা আসছে শিক্ষা গ্রহণ করতে
Nalanda_University
Nalanda_University

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রাচীন ভারতের শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতি কেমন ছিল, তা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস জানলেই আমরা বুঝতে পারি। সমগ্র এশিয়া মহাদেশ ও বিশ্বজুড়ে এর খ্যাতি ছিল। প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Nalanda University) ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেলেও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে সঠিক অবস্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানান বিবাদ আছে। প্রাচীন ভারতের ১৬ টি মহাজনপদের অন্যতম শক্তিশালী জনপদ মগধের রাজধানী রাজগৃহ, যা বর্তমনকালের রাজগীর। সেই রাজগীরের কাছেই এই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এসেছিলেন শিক্ষা গ্রহণ করতে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি এখানে অধ্যাপক হিসাবে বহুদিন কাজ করেন। 

কেমন ছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়?

এটি ছিল একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়  (Nalanda University)। এখানে সবরকম সুযোগসুবিধা পাওয়া যেত। এখানে ছিল এক মস্ত বড় গ্রন্থাগার, যার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এই গ্রন্থাগারটি ছিল সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বিশাল গ্রন্থাগার, যেখানে অজস্র বইয়ের সমাহার ছিল। দূর দূর থেকে ছাত্ররা ছুটে আসতেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চিন, কোরিয়া, তিব্বত, সুমাত্রা ইত্যাদি দেশ থেকে দলে দলে ছাত্ররা আসতেন। এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষাদান করা হত। সমগ্র বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এটি। ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নালন্দা মহাবিহার ছিল ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বখতিয়ার খিলজি এই মহাবিহার ধ্বংস করেন, যার ধ্বংসাবশেষ ১৯৯৫ সালে খনন করা হয়। বেদ, ‘হেতুবিদ্যা’ (ন্যায়শাস্ত্র), ‘শব্দবিদ্যা’ (ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্ব), ‘চিকিৎসাবিদ্যা’ (ভেষজবিদ্যা), জাদুবিদ্যা-সংক্রান্ত অন্যান্য গ্রন্থ (অথর্ববেদ) ও সাংখ্য দর্শন সম্মন্ধে এখানে শিক্ষাদান করা হত। গবেষণা অনুযায়ী আইন, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও নগর-পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদান করা হত।

নালন্দার পুনরুজ্জীবন, আবার শুরু হয়েছে শিক্ষাদান

প্রথমে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম ২০০৬ সালে নালন্দাকে (Nalanda University) আবার ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন। তার বছর চারেক বাদে অর্থাৎ ২০১০ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে পাশ হয় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বিল, যেখানে প্রস্তাব রাখা হয় নতুন আকারে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং তাতে পড়ানো হবে ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, পররাষ্ট্রনীতি, পরিবেশবিদ্যা বা বৌদ্ধ দর্শনের মতো নির্বাচিত কিছু বিষয়। যাতে নালন্দা আবার সেই আগের মতো এক উচ্চশিক্ষা দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। তার জন্য গড়ে তোলা হয় ‘নালন্দা মেন্টর গ্রুপ’-যার নেতৃত্বে ছিলেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর অমর্ত্য সেন আচার্যের পদে মনোনীত হন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় আজ আবার তার শিক্ষাদান শুরু করেছে। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, দেশ বিদেশ থেকে আসছে ছাত্ররা, এখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে। 

কী কী বিষয় এখন পড়ানো হয়?

বর্তমানে এখানে (Nalanda University) ৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পড়ানো হয়। সেগুলি হল-হিন্দু স্টাডিজ, বিশ্ব সাহিত্য, Sustainable Development, বাস্তুশাস্ত্র ও পরিবেশ বিদ্যা, ইতিহাস, বুদ্ধিস্ট স্টাডি এবং দর্শন। 
তাছাড়া এই বিষয় গুলিতে PhD ও করানো হয় এখান থেকে। আবার ধীরে ধীরে পুরনো জায়গা ফিরে পাচ্ছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের গর্ব, ভারতবাসীর গর্ব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles