মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মেধস মুনির আশ্রম (Medosh Munir Ashram) বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার করলডাঙা পাহাড়ে অবস্থিত। প্রথম দুর্গাপুজোর (Durga Puja) প্রচলন এই আশ্রমেই হয়েছিল বলে বিশ্বাস হিন্দুদের। বাংলাদেশের হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান হল পাহাড়ের ওপর অবস্থিত মেধস মুনির আশ্রম। প্রতিবছর দুর্গাপুজোতে ভক্তদের ভিড়ে ঠাসা থাকে এই আশ্রম। শিব মন্দির, চন্ডী মন্দির সমেত অনেকগুলি মন্দিরও রয়েছে এখানে। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা এই আশ্রমকে ভেঙে দেয়। পরবর্তীকালে এই আশ্রম পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন স্বরূপ চৌধুরী। তিনি জানান, ৩০জন লোক নিয়োগ করা হয়েছে মন্দিরকে দেখাশোনার জন্য। অন্যদিকে, আশ্রমেরই এক সন্ন্যাসী শ্রীমৎ বুলবুলানন্দ মহারাজ অভিযোগ এনেছেন যে শ্রী শ্রী চণ্ডী তীর্থ ও মেধস মুনির আশ্রমের মোট জমির পরিমাণ ছিল ৬৮.১৯ একর। কিন্তু বেশ কিছু প্রভাবশালী মানুষজন নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে এই জমি দখল করেছেন। জমি দখলের পরিমাণ ৫৫ একর।
মেলেনি সরকারি সাহায্য (Medosh Munir Ashram)
বোয়াখালী থেকে মন্দির যাওয়ার পথ একেবারেই দুর্গম কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন এই আশ্রমে (Medosh Munir Ashram)। আশ্রমকে ঘিরে রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ। নির্জন ও শান্ত পরিবেশ আশ্রমের। কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, যদি যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা যেত তাহলে মন্দিরে ভক্তদের ভিড় আরও বাড়তে পারত। ভক্তদের দানের ওপর নির্ভর করেই চলে এই মন্দির, সরকারি সাহায্য মেলেনি বলেও অভিযোগ মন্দির কর্তৃপক্ষের।
রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য
দেবী মাহাত্ম্যে এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্ত বংশীয় রাজা অর্থাৎ চিত্রগুপ্তের বংশধর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তাঁর রাজত্ব, সম্পত্তি সবকিছুই হারিয়েছিলেন। দাস দাসী, আত্মীয় স্বজন, তাঁর পোষ্য জন্তু-জানোয়ারদের কাছেও তিনি মর্যাদা হারিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এরা কেউ তাঁর কথা শুনতো না। অসহায় রাজা মনের দুঃখে রাজ্য ছাড়েন। যদুবংশীয় এই রাজা বৈরাগী হয়েছিলেন। রাজ্য ছাড়ার পর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এক বণিকের। ওই বণিকও ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, একেবারে দেউলিয়া হয়েছিলেন তিনি। বণিকের নাম ছিল সমাধি বৈশ্য। তাঁর নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজনের প্রতারণার জন্যই তিনি দেউলিয়া হয়েছিলেন বলে পুরাণে জানা যায়। একদিকে এক ভাগ্যহীন রাজা অন্যদিকে এক ভাগ্যহীন বণিক। দুজনের সাক্ষাৎ যেন দৈব নির্ধারিত ছিল। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মেধস মুনির (Medosh Munir Ashram)।
মেধস মুনির আশ্রমে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) পৌরাণিক আখ্যান
রাজা সুরথ এবং বণিক সমাধি বৈশ্য দুজনে মেধস মুনির শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের ভাগ্য বিপর্যয়ের কথা মুনিকে শোনাতে থাকেন। মেধস মুনি তাঁদের দেবী মাহাত্ম্য শোনান। মহিষাসুরমর্দিনীর স্তব করে শোনান। মুনি পরামর্শ দেন, একমাত্র দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার আরাধনা এবং পুজো করলেই তাঁদের ভাগ্য ফিরবে। মুনির পরামর্শ মতো রাজা সুরথ ও বণিক সমাধি বৈশ্য মাটির প্রতিমা নির্মাণ করে ওই আশ্রমেই দুর্গাপুজো করেন। কথিত আছে মাতৃ আরাধনার পর রাজা সুরথ তাঁর রাজত্ব পুনরায় ফেরত পেয়েছিলেন, পরিবার পরিজনের কাছে তাঁর মর্যাদা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অপরদিকে বণিক সমাধি বৈশ্যও একই ভাবে সৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে, হারানো সমস্ত কিছু ফেরত পেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার মেধস মুনির আশ্রমে এই পুজো বসন্ত কালে সংঘটিত হয়েছিল। শরৎকালের দুর্গাপুজো শ্রী রামচন্দ্রের অকাল বোধনের কারণে হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours