মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (JNU) উপাচার্য নিয়োগ করার পরেই মোদি সরকারের মুণ্ডপাত করেছিলেন বিজেপি-বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতারা। অথচ মাত্র দু’বছরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোল বদলে দিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে গিয়েছেন উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার এক নম্বরে। এখন তাঁর নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন এক সময়কার সমালোচকরাও। পুণের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে নিয়োগ করা হয় জেএনইউয়ের উপাচার্য হিসেবে।
জেএনইউয়েরই প্রাক্তনী শান্তিশ্রী (JNU)
শান্তিশ্রী জেএনইউয়েরই প্রাক্তনী। এমফিল এবং পিএইচডিও করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল, ‘নেহরুর আমলে ভারতের সংসদ ও বিদেশনীতি’। তাঁকেই বসানো হয় জেএনইউয়ের উপাচার্য পদে। তারপরেই দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা। সেসব পাত্তা না দিয়েই দায়িত্ব নিয়েছিলেন শান্তিশ্রী। বিশ্ববিদ্যালয়কে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিয়ে তিনি বলছেন, “জেএনইউ (JNU) কখনওই দেশ-বিরোধী ছিল না, টুকরে টুকরে গ্যাং ছিল না। এই বিশ্ববিদ্যালয় চিরকালই ভিন্নমত, বিতর্ক এবং গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে।” শান্তিশ্রী জেএনইউয়ের প্রথম মহিলা উপাচার্য। তিনি বলেন, “জেএনইউতে গৈরিকীকরণ হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এ নিয়ে কোনও চাপও নেই।” উপাচার্য বলেন, “আরএসএসের সঙ্গে আমার যে যোগ রয়েছে, তা নিয়ে আমি দুঃখিত নই, এই পরিচয় আমি লুকোতেও চাই না।”
'জেএনইউয়ের নির্দিষ্ট কোনও পরিচয় নেই'
শান্তিশ্রীর জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পরে তিনি ফিরে আসেন চেন্নাইয়ে দেশের বাড়িতে। মধ্যবিত্ত সাউথ ইন্ডিয়ান পরিবারে বেড়ে ওঠা তাঁর। আরএসএসের সঙ্গে যোগ থাকায় পড়ুয়ারা তাঁকে আবডালে ‘সঙ্ঘী ভিসি’ বলে ডাকেন। সেই তিনিই হাল ফিরিয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের (JNU)। QS ranking-এ বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে নিয়ে গিয়েছেন শীর্ষস্থানে। উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের উচিত এসবের (গৈরিকীকরণ) উর্ধ্বে ওঠা। জেএনইউ দেশের প্রতিষ্ঠান, তার নির্দিষ্ট কোনও পরিচয় নেই। জেএনইউ অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশের প্রতীক। আমি সব সময়ই বলি, এই বিশ্ববিদ্যালয় সাত ‘ডি’-এর প্রতীক। এই সাত ‘ডি’ হল ডেভেলপমেন্ট, ডেমোক্রেসি, ডিসেন্ট, ডাইভার্সিটি, ডিবেট ও ডিসকাশন, ডিফারেন্স এবং ডেলিবারেশন।”
দু’তরফেই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল
শান্তিশ্রী যখন জেএনইউয়ের দায়িত্ব নেন, তখন ছাত্রবিক্ষোভ তুঙ্গে। দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল ছাত্রদের একাংশের বিরুদ্ধে। দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ায় যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা ‘টুকরে গ্যাং’য়ের সদস্য বলে দেগে দেওয়া হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, “সেটা একটা ফেজ ছিল। দু’তরফেই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমার মনে হয়, নেতারা আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।” তিনি বলেন, “যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু অন্যধারার পড়ুয়া থাকেন, কেবল জেএনইউতেই (JNU) নয়। সেক্ষেত্রে নেতাদেরই দায়িত্ব বর্তায় কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু আমি মনে করি না যে আমরা দেশ-বিরোধী অথবা টুকরে টুকরে গ্যাং।”
কী বললেন সঙ্ঘী ভিসি?
সঙ্ঘী ভিসি বলেন, “আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই পর্বটা খারাপ ছিল। দু’তরফেই কিছু ভুল হয়েছিল। এর কারণ মেরুকরণ এবং নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব। আপনাদের বুঝতে হবে প্রতিটি মানুষ আলাদা। তাঁদের যুক্তিও আলাদা হবে। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয় কখনওই দেশ-বিরোধী ছিল না।” তিনি বলেন, “আমি যখন এখানে পড়াশোনা করতাম, তখন এখানে বামেরা রাজত্ব করত। তখনও কেউ দেশ-বিরোধী ছিলেন না। তাঁরা সমালোচক। সমালোচক ও ভিন্নমত পোষণ করলেই কাউকে দেশ-বিরোধী বলে দেগে দেওয়া যায় না।” উপাচার্য বলেন, “আমার মনে হয়, প্রশাসন জেএনইউকে বুঝতে পারেনি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে পার হতে হয়েছে দুর্ভাগ্যের সেই পর্ব।”
আরও পড়ুুন: প্রত্যাঘাত করল ইজরায়েল, ইরানের ‘লক্ষ্যবস্তু’তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তেল আভিভের
স্কুলে বরাবরই প্রথম হতেন শান্তিশ্রী। মেডিক্যাল জয়েন্ট পাশ করে নয়াদিল্লির এইমসে যোগ দিয়েছিলেন। তিন মাস পরে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। কারণ তাঁকে বলা হয়েছিল হয় গাইনোকোলজি নয়ত চাইল্ড স্পেশালিস্ট হতে হবে। নিউরোলজি নৈব নৈব চ। এইমসের পড়া ছেড়ে শান্তিশ্রী ভর্তি হন কলেজে। পরে হন পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন। তাঁর বাবাই আরএসএস অনুমোদিত সেবিকা সমিতির সামার ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর আরএসএসের সঙ্গে সখ্যতা। শান্তিশ্রী বলেন, “আমার জীবনে সংঘের সদর্থক প্রভাব রয়েছে। তবে জেএনইউয়ে (JNU) আমাদের গৈরিকীকরণ হয়নি।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours