মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামপন্থী সংগঠন, জামাত-এ-ইসলামি (JEI)। ভারত-বিরোধী এই ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন কাশ্মীর এবং বাংলাদেশে সক্রিয়। যাদের একমাত্র লক্ষ্য হল গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে দেশে শরিয়ত আইন প্রতিষ্ঠা করা। এদের হাতে ক্ষমতা গেলে আফগানিস্তান বা পাকিস্তান হতে খুব একটা দেরি হবে না বাংলাদেশ বা কাশ্মীরের। ইসলামি শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী এই সংগঠন অমুসলিম ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে ইসলাম রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
অতীতের কথা
স্বাধীনতার আগে, ১৯৪১ সালে পরাধীন ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় জামাত-ই-ইসলামি (JEI)। সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। ইসলামি রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়েই তৈরি হয় এই সংগঠন। ইসলামি অনুশীলনগুলিকে সংস্কার করে ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারমূল্যবোধের পরিবর্তে শরিয়ত আইন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল জামাত (Jamaat-e-Islami)। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর দলটি দুটি সংগঠনে ভাগ হয়। জামাত-এ-ইসলামি পাকিস্তান ও জামাত-এ-ইসলামি হিন্দ। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জামাত-এ-ইসলামি কাশ্মীর, যা ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জামাত-ই-ইসলামি আজাদ কাশ্মীর নাম গ্রহণ করে। জামাত-ই-ইসলামি বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে পুনর্যাত্রা শুরু করে মেজর জিয়ার শাসনকাল থেকে। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলামি। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির। ১৯৮০ এর দশকে পাকিস্তানি জামাত কাশ্মীরের জামাত-ই-ইসলামির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং কাশ্মীরের সশস্ত্র বিদ্রোহে সমর্থন জোগায়।
আরও পড়ুন: তমলুকে গড়ে ওঠে পরাধীন ভারতের স্বাধীন সরকার, ফিরে দেখা অগাস্ট ক্রান্তি দিবস
১৯৪৭-এর পাকিস্তান বিরোধিতার মতো তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশেরও বিরোধিতা করেছিল। এর অন্যতম কারণ হিসেবে তারা মনে করত, পাকিস্তান ভাগ হলে বাংলাদেশ হবে ভারতের কলোনি। তাদের আরেকটি বড় অসুবিধা ছিল আদর্শিক জায়গায়। আদর্শগত কারণেই জামাতের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
কাশ্মীরে সক্রিয় জামাত
কাশ্মীর উপত্যকায়, জামাত ইসলামের ঐতিহ্যবাহী সুফি চর্চার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়। সুফিরা উগ্র ইসলামকে সমর্থন করে না। এখানে ইসলামিক বিশ্বাসের সঙ্গে স্থানীয় হিন্দু ঐতিহ্যের মিশ্রণ দেখা যায়। কাশ্মীরি সুফি ঐতিহ্য এবং সুফি-সাধকেরা, যা আধ্যাত্মিক বহুত্ববাদ এবং মেলবন্ধনের জন্য পরিচিত, জামাতের আক্রমণের লক্ষ্য হয়। কাশ্মীরে সুফির পরিবর্তে কঠোর এবং রক্ষণশীল ইসলামের বিকাশ ঘটাতে থাকে জামাত। তাদের মতাদর্শ সংঘর্ষ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবকে উস্কে দেয় এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির উত্থানের পথ প্রশস্ত করে। এরা কাশ্মীরে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
কাশ্মীরে নিষিদ্ধ জামাত
২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ তকমা প্রত্যাহার ও অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদের সময়ে সংগঠনটিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ জানিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেওয়া থেকে শুরু করে হিংসা ছড়ানো, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, এমন বহু অভিযোগ রয়েছে জামাতের বিরুদ্ধে। রয়েছে পাক যোগাযোগের অভিযোগও। তবে সম্প্রতি এই সংগঠন কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ছোট বালুকণার মধ্যেও অসীমের স্পর্শ পেতেন, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা কবিগুরুকে
বাংলাদেশে জামাতের বিস্তার
কাশ্মীরের মতোই বাংলাদেশেও জামাতের প্রভাব সমানভাবে ধ্বংসাত্মক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়, জামাতের আধা-সামরিক বাহিনী, রাজাকাররা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে বাঙালি নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার চালায়, যার মধ্যে মুসলমান ও হিন্দু উভয়ই অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বর্বর অত্যাচার বাংলাদেশের জাতীয় চেতনায় স্থায়ী ক্ষত রেখে যায়। এর প্রভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে অস্থির করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের পর, জামাতের প্রভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিকে বারবার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সংগঠনটি শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে সরিয়ে তাদের ইসলামপন্থী এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সদা সক্রিয় থাকে। বর্তমানেও সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ক্রমশ রাজনৈতিক বিক্ষোভের রূপ ধারণ করে, যা ছিনিয়ে নিয়েছে ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন আর ভারত-বিরোধী অংশ। বাংলাদেশে উৎখাত হয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। শেষপর্যন্ত, বাংলাদেশ পরিচালনায় তৈরি করা হয়েছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। যার রাশ বকলমে জামাত গোষ্ঠীর হাতেই।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours