তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বর্ষার দাপটে শক্তি বাড়াচ্ছে ম্যালেরিয়া (Malaria)। মশাবাহিত এই রোগের দাপট কলকাতার পাশপাশি হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, হুগলি জেলাতেও অব্যাহত। ম্যালেরিয়ার ওষুধ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও আশঙ্কা বাড়ছে। ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ঘটছে। তাই উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল!
কোন ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে?
সম্প্রতি লেকটাউনের বছর ৭০-এর বাসিন্দা ম্যালেরিয়ায় (Malaria) আক্রান্ত হয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। আর এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল। ওই প্রৌঢ় প্রায় আট দিন ম্যালেরিয়ায় ভুগেছিলেন। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তাই তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা করা যায়নি। তিনি মারা যান। আর এই ঘটনায় স্পষ্ট হচ্ছে, প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও ম্যালেরিয়ায় প্রাণনাশের ঘটনা ঘটতেই পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি (Malaria)?
ম্যালেরিয়া শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তবে, সাবধানতা অবশ্যই সকলের সমান নেওয়া দরকার। কিন্তু শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি বাড়তি চিন্তার। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়ায় (Malaria) জ্বরের পাশপাশি সর্দি, মাথাব্যথা হয়। তবে, জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে ডায়ারিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। অনেক সময়েই ম্যালেরিয়া হলে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ দেশে বয়স্ক ও শিশুরা নানান ফুসফুস ঘটিত রোগে ভোগেন। ফলে, তাঁদের নিউমোনিয়া ও অন্যান্য ফুসফুস ঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই পরিস্থিতি যে শ্বাসকষ্ট তৈরি করে, তা অত্যন্ত জটিল। তাই ম্যালেরিয়া শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ।
এছাড়াও চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া হলে ডায়ারিয়া হয়। ফলে, শরীরে জলের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাড়তি বিপদ। ডিহাইড্রেশন শিশু ও বয়স্কদের প্রাণনাশের কারণ হতে পারে।
কীভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল (Malaria)?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেওয়া চলবে না। আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। বাগান থাকলে তা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। টব বা অন্য কোনও জায়গায় যাতে জল না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। মশার আঁতুরঘর ভাঙতে পারলেই, মশাবাহিত রোগের দাপট কমানো সম্ভব। নিয়মিত নর্দমা ও আশপাশে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো জরুরি।
তবে, এরপরেও রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয় না। তাই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হলে কয়েকটি বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, জ্বর তিনদিনের বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। ম্যালেরিয়া হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথাব্যথা, হাতে-পায়ে যন্ত্রণা, সর্দি-কাশি এবং ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। তাই এই লক্ষণ স্পষ্ট হলে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করা উচিত নয়।
ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সব সময় আলাদা ঘরে মশারির ভিতরে থাকা উচিত বলেই পরামর্শ দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল। যাতে রোগ সংক্রমণ না হয়, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।
ম্যালেরিয়া আক্রান্তের জল খাওয়া দরকার। শরীরে যাতে কোনও ভাবেই ডিহাইড্রেশন না হয়, সেদিকে নজর রাখা জরুরি। কারণ, ডিহাইড্রেশন রুখতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সহজ হয়।
পাশপাশি, ম্যালেরিয়া (Malaria) আক্রান্তের শৌচালয় ব্যবহারের আগে ও পরে ভালোভাবে শৌচালয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তাতে আক্রান্তের ডায়ারিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে। আবার অন্যদের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে। তাই এদিকে বিশেষ নজরদারি জরুরি বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours