মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কেনার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিল ‘বন্ধু’ ভারত। সেই ইচ্ছাপূরণ করতে ভারতকে ৩১টি এমকিউ-৯বি ‘প্রিডেটর’ (MQ-9B Predator) ড্রোন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবারই, এই মর্মে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। চুক্তির মোট মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৩ হাজার ২০০ কোটি)। ৩১টি ড্রোন ছাড়াও এই চুক্তির আওতায় থাকছে ১৭০টি এজিএম-১১৪আর হেলফায়ার মিসাইল, ৩১০টি জিবিইউ-৩৯বি/বি লেজার বম্ব এবং ১৬১ জিপিএস সিস্টেম।
নৌসেনা নেবে ১৫টি, স্থল-বায়ুসেনা ৮টি করে
জানা গিয়েছে, ৩১টি ড্রোনের মধ্যে ভারতীয় নৌসেনা পাবে ১৫টি। স্থল ও বায়ুসেনা ৮টি করে ‘প্রিডেটর’ (MQ-9B Predator) ড্রোন পাবে। ড্রোনের নির্মাতা সংস্থা জেনারেল অ্যাটোমিক্স গ্লোবাল কর্পোরেশনের তরফে এই বিক্রির সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, এর (প্রিডেটর ড্রোন হাতে এলে) ফলে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিপদ সহজেই সামলাতে সক্ষম হবে ভারত। বিশেষ করে, মানববিহীন নজরদারি ও সমুদ্রে প্যাট্রলিং অনেক সহজ হবে। নিজেদের সামরিক শক্তির আধুনিকীকরণ করতে বদ্ধপরিকর ভারত। ফলে, এই ড্রোন (Hunter-Killer Drones) অন্তর্ভুক্ত করতে কোনও সমস্যা হবে না ভারতীয় বাহিনীর।
চিনের ওপর নজর রাখার প্রয়োজনীয়তা
হান্টার-কিলার ড্রোনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আগেও হয়েছে। পূর্ব লাদাখে গালওয়ানে চিনা ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষের পর থেকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা উপস্থিতির ওপর নজর রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২টি এমকিউ-৯বি ‘সি-গার্ডিয়ান’ ড্রোন লিজে নিয়েছিল ভারতীয় নৌসেনা। পরবর্তীকালে, সেই লিজের মেয়াদা একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ছ’বছর আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় প্রিডেটর কেনার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। বছর দেড়েক আগেই এ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিল দু’পক্ষ।
কেন ভারত এই ড্রোন কিনতে আগ্রহী?
কেন ভারত এই ড্রোন (MQ-9B Predator) কিনতে আগ্রহী? কেন-ই বা এই ড্রোনকে ‘নিঃশব্দ-শিকারী’ বলে ডাকা হয়? তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমর, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রধান বায়তুল্লা মেহসুদ, সিরিয়ার আল কায়দা প্রধান সেলিম আবু আহমেদ থেকে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলেমানি এবং আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছিল এই ড্রোন। দেখে নেওয়া যাক, এমকিউ-৯বি ‘প্রিডেটর’ ড্রোন কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা একে এনে দিয়েছে জগৎজোড়া খ্যাতি—
‘নিঃশব্দ-শিকারী’ এমকিউ-৯বি
এই ড্রোনটি এমকিউ-৯ ‘রিপার’ (Hunter-Killer Drones) ড্রোনের একটি সংস্করণ। মূলত, মার্কিন বায়ুসেনা এটি ব্যবহার করে। ড্রোনটি আদতে হাই অল্টিটিউড লং এনডিওরেন্স চালকবিহীন বিমান। ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ‘প্রিডেটর’। আবার মাটি থেকে মাত্র ২৫০ মিটার উঁচুতেও উড়তে পারে এমকিউ-৯বি ‘প্রিডেটর’ (MQ-9B Predator)। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৪৪২ কিলোমিটার। একটানা ৩৫-ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এটি। রিফুয়েলিং ছাড়া এটি একটানা ২ হাজার মাইল দূরে অনায়াসে যেতে পারে। ফলে, একেক বারে অনেকটা সময় ধরে ও বিশাল এলাকা জুড়ে তা নজরদারি চালাতে পারে। কন্ট্রোল রুম থেকে অনেকটা দূরে থাকলেও, এই প্রাণঘাতী ড্রোনের কার্যকারিতায় কোনও হেরফের ঘটে না। এর অত্যাধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘটনাস্থলের ‘রিয়েল-টাইম সিচুয়েশন’ বা একেবারে সেই সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে। সবচেয়ে বড় কথা, এটি একেবারে নিঃশব্দে চলে। যা একে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
‘নরকের আগুন’ ছুড়তে পারে
এমকিউ-৯বি ‘প্রিডেটর’ (Hunter-Killer Drones) ড্রোন বিভিন্ন ধরনের বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বহন সক্ষম। যার মধ্যে অন্যতম হল ‘নরকের আগুন’ বা ‘হেলফায়ার’ মিসাইল। এই মিসাইল দিয়েই খতম করা হয়েছিল আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরিকে। আকাশ থেকে আকাশ ও আকাশ থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এমকিউ-৯বি ‘প্রিডেটর’ (MQ-9B Predator)। এছাড়া, একাধিক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম এই ড্রোন। যেমন— ভূ ও জলসীমা নজরদারি, অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার, অ্যান্টি-সারফেস ওয়ারফেয়ার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার এবং সামরিক অভিযান।
১৭০০ কেজির পেলোড বহনে সক্ষম
এর দুটি ভেরিয়েন্ট বা ভেরিয়েন্ট রয়েছে। একটি স্কাই গার্ডিয়ান। অন্যটি সি-গার্ডিয়ান। ২০২০ সাল থেকে ভারতীয় নৌসেনায় অন্তর্ভুক্ত এই দ্বিতীয় ভেরিয়েন্টটি। এই ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেক-অফ ও ল্যান্ডিং করতে পারে। দিন হোক বা রাত, স্থল হোক বা জল— এই ড্রোন যে কোনও পরিবেশে উপযোগী। ৪৫০ কেজি বোমা সহ মোট ১৭০০ কেজির পেলোড বহন করতে সক্ষম এমকিউ-৯বি ‘প্রিডেটর’ (MQ-9B Predator)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours