মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় রেলের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক হল ভারতীয় রেল। দেশের সমস্ত ব্রডগেজ লাইনে ইলেক্ট্রিফিকেশনের কাজ শেষ করতে উদ্যোগী ভারত। ভারতীয় রেলে ইলেক্ট্রিফিকেশন বা বৈদ্যুতিকরণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯২৫ সালে। তখন দেড় হাজার ভোল্ট ডিসি লাইনের বৈদ্যুতিক লাইন বসানো হয়েছিল। পরে তা তিন হাজার ভোল্টে রূপান্তরিত হয়। ১৯৫৭ সালে রেল মন্ত্রক সব বৈদ্যুতিক লাইনকে ২৫ কিলোভোল্ট এসি ট্রাকশনে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যমাত্র নেয়। দেশের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন চলেছিল সেন্ট্রাল রেলওয়েতে। বম্বে টার্মিনাস (এখন ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস) থেকে কুরলা পর্যন্ত চলেছিল সেই ট্রেন। এখন দেশে অধিকাংশ ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন বা ইএমইউ ট্রেন চলে। গত কয়েক বছর ধরেই প্রতি বছর ৬ হাজার কিলোমিটার রেলপথে ইলেক্ট্রিফিকেশন করা হয়েছে। বর্তমানে এটি ৯৬ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুতায়িত। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রে এই হার মাত্র ১ শতাংশ!
ভারতের নেট-জিরো লক্ষ্য
ভারতীয় রেলওয়ে, ২০৩০ সালের মধ্যে নেট-জিরো অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ১০০ শতাংশ ব্রডগেজ লাইন বৈদ্যুতিক করবে রেল। সম্প্রতি রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশের ৯৬ শতাংশ ব্রডগেজ লাইনে ইলেক্ট্রিফিকেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৪ শতাংশ কাজও খুব শীঘ্রই শেষ করা হবে। গত কয়েক বছর ধরেই রেললাইনে ইলেক্ট্রিফিকেশনের কাজে জোর দেওয়া হয়েছে রেলের তরফে। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে নিরন্তর। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, ভারতীয় রেলওয়ে ১৪,৫০০টি ট্রেনের মধ্যে ১০,০০০টিরও বেশি বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিচালনা করছিল। কিছু ক্ষেত্রে, পুরানো ডিজেল ট্রেনগুলোকে বৈদ্যুতিক ট্রেনে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, তবে বেশিরভাগই ছিল নতুন। গত বছর ১,৩০০টি নতুন বৈদ্যুতিন লোকোমোটিভের জন্য একটি অর্ডার ছিল, যা সিমেন্স মবিলিটি তাদের বৃহত্তম অর্ডার হিসেবে উল্লেখ করেছে।
কেন বিদ্যুতায়ন
ডিজেল ট্রেনের ব্যবহার বন্ধ করার প্রধান উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা নয় বা দূষণ থেকে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমানো নয়। বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানো সস্তাও। এসব ট্রেন বেশি পরিমাণ মাল বহন করতে পারে বা ডিজেল লোকোমোটিভগুলোর চেয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী পরিবহণ করতে সক্ষম। এছাড়া এই পরিবর্তন দেশের আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেয়। “ডিজেল রেল সিস্টেম থেকে বিদ্যুতায়িত রেল সিস্টেমে দ্রুত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভারত একটি চমৎকার উদাহরণ” বলেছেন পরিবেশ সংরক্ষণে নিবেদিত অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠান আর্থজাস্টিস-এর সিনিয়র অ্যাটর্নি ইয়াসমিন আগেলিডিস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি দুর্দান্ত মডেল হতে পারে ভারত, এমনই দাবি তাঁর। একসময় ভারতেও প্রচুর ডিজেল ট্রেন ছিল, এখন যুক্তরাষ্ট্রে সেই একই পরিস্থিতিতে রয়েছে।
ভারত কীভাবে এগিয়ে গেল
২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে ১২,০০০ মাইল রেলপথ বিদ্যুতায়িত হয়েছিল, এবং ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আরও ১২,০০০ মাইল রেলপথ বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে। এর জন্য সবরকম সাহায্য করেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। আগেলিডিস-এর কথায়, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি দেশের ১০০ শতাংশ রেলপথ বিদ্যুতায়িত চান। আমি মনে করি এই স্পষ্ট নির্দেশনা এবং নীতিগত লক্ষ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” রেলপথ সরকারের মালিকানাধীন হওয়ার কারণে এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। সরকার ভূমি, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট অ্যাক্সেস এবং নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডব্লিউআরআই ভারতের পরিবহণ কর্মসূচির প্রধান পাওয়ান মুলুকুটলা।
আরও পড়ুন: ভয় পাচ্ছে চিন-পাকিস্তান! পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম দ্বিতীয় ডুবোজাহাজ পেল নৌসেনা
আমেরিকা কেন পিছিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রে, বেশিরভাগ রেলপথ বেসরকারি মালিকানাধীন, সেখানে বৈদ্যুতিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগের প্রতি কম আগ্রহ দেখা গিয়েছে। আগেলিডিস বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বৈদ্যুতিক রেল আসলে ডিজেলের চেয়ে সস্তা হতে পারে কারণ এটি একটি অনেক সস্তা জ্বালানি উৎস।” তাঁর দাবি, “এটি একটি বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারীও বটে। তবে আমি মনে করি বেসরকারি রেলওয়ের মডেলটি শুধু স্বল্পমেয়াদী লাভের দিকে তাকিয়ে আছে এবং তারা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কী দিতে পারে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। এটি একটি বড় সমস্যা, কারণ এটি শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফাকে জনস্বাস্থ্য এবং আমাদের জলবায়ু লক্ষ্যগুলোর চেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours