তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
হাসপাতালে পৌঁছালেও মৃত্যুর আশঙ্কা থাকছেই! গ্রাম থেকে শহর, রাজ্যে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসবের প্রবণতা বাড়লেও, প্রসূতি মৃত্যুও (Cesarean Death) বাড়ছে! তার জেরেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আর তারপরই নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য ভবন।
কী নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র?
কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার অনেক বেশি। অপ্রয়োজনীয় সিজারের সংখ্যাও বেশি। আর তার জেরেই প্রসূতির স্বাস্থ্যে অবনতি ঘটেছে। এমনকী মৃত্যুর ঝুঁকিও (Cesarean Death) বাড়ছে। আর অপ্রয়োজনীয় সিজারের প্রবণতা শুধু শহরে আটকে নেই। রাজ্যের গ্রামগুলোতেও এক অবস্থা। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে প্রসবের পরে, সিজার কেন করা হল, সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। এমনকী বেসরকারি হাসপাতালেও এই নিয়ম কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক। অপ্রয়োজনীয় সিজার কমিয়ে, মায়েদের প্রাণের ঝুঁকি কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
সমীক্ষায় কী তথ্য জানা যাচ্ছে?
কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে রাজ্যে সিজারের প্রবণতা মারাত্মক ভাবে বেড়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা রাজ্যের শহরাঞ্চলে ৪৩.৫ শতাংশ সিজারের মাধ্যমে প্রসব হয়। আর গ্রামে হয় ২৮.৬ শতাংশ। শহরের সরকারি হাসপাতালে মোট প্রসবের ৩১.৭ শতাংশ হয় সিজার। আর গ্রামে সংখ্যাটা ২১.৩ শতাংশ। শহরের বেসরকারি হাসপাতালে সিজারের সংখ্যা ৮০.২ শতাংশ। গ্রামে সেটা আরও বেশি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালের ৮৪.৪ শতাংশ প্রসূতির সিজারের মাধ্যমে প্রসব হয়।
অপ্রয়োজনীয় সিজারে কেন নারাজ কেন্দ্র?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ সমস্যা বা অন্য কোনও শারীরিক ঝুঁকি কিংবা গর্ভস্থ শিশু বা মায়ের অন্য কোনও শারীরিক জটিলতা না থাকলে সিজারের মাধ্যমে প্রসব অপ্রয়োজনীয়। সিজারে মায়ের বাড়তি ঝুঁকি (Cesarean Death) তৈরি হয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সিজারের মাধ্যমে প্রসবে প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। সাধারণ প্রসবে প্রসূতির ২৫০ মিলিলিটার রক্তক্ষরণ হয়। সেখানে সিজারের মাধ্যমে প্রসব করলে ১০০০ মিলিলিটার রক্তক্ষরণ হয়। তাছাড়া ও অস্ত্রোপচার পরবর্তী নানান সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে। তাই অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধ জরুরি বলেই জানাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
কী পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন?
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ম্যাটারনিটি ডেথ (Cesarean Death) অডিট গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও হাসপাতালে প্রসব কালে বা প্রসবের পরে মা মারা গেলে, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা করতে হবে। পাশাপাশি সিজারের মাধ্যমে প্রসবের কারণও স্পষ্ট করতে হবে। জুনের প্রথম থেকেই এই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সরজমিনে তদন্ত শুরু হয়েছে। সরকারির পাশাপাশি শহর থেকে গ্রাম, ইতিমধ্যেই ২৫টি বেসরকারি হাসপাতালেও সরজমিনে রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম সকলকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সরকারের নির্দিষ্ট পোর্টালে প্রসব সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নিয়মিত আপডেট করতে হবে।
কী বলছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা?
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলছেন, শিশু ও মাকে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরানোই প্রধান লক্ষ্য। তাই সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেই এই পরিস্থিতির (Cesarean Death) পরিবর্তন করা সম্ভব। তাই দ্রুত কাজ করা হচ্ছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours