শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: মন্দিরে বিগ্রহের পুজো কী শুধু ব্রাহ্মণরাই করতে পারবে? এনিয়ে জোর চর্চা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। পুজো, যজ্ঞ, শাস্ত্র আলোচনা এসবই ব্রাহ্মণরা করতেন প্রাচীন ভারতে। তবে তা জন্মগত ছিল কি? বৈদিক সভ্যতায় সমাজের শ্রেণি বিভাগ ছিল গুণ, কাজ এবং আগ্রহের ভিত্তিতে। বলা ভাল পেশার ভিত্তিতে। পরবর্তী বৈদিক যুগ থেকে গুণ এবং কাজের ভিত্তিতে শ্রেণি বিভাগ আর থাকল না। পরিবর্তে তা হয়ে গেল জন্মগত। অর্থাৎ ব্রাহ্মণের পরবর্তী প্রজন্ম হল ব্রাহ্মণ। ক্ষত্রিয়ের পুত্র ক্ষত্রিয়। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র গীতা, বৈদিক সাহিত্যের অন্যতম প্রধান গ্রন্থ। ভক্তদের বিশ্বাস গীতা হল ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মুখের বাণী। গীতার চতুর্থ অধ্যায়ের ত্রয়োদশ শ্লোকে বলা হচ্ছে, চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ অর্থাৎ সমাজে চারটি বর্ণ তৈরি করা হয়েছে গুণ এবং কর্মের ভিত্তিতে।
তামিলনাড়ুর ঐতিহাসিক মন্দিরে পূজা-অর্চনা করেন অব্রাহ্মণ পুরোহিতরা (Non Bramhin Priest)
ভারতবর্ষের অন্যতম বিখ্যাত মন্দির হল তামিলনাড়ুর ভায়লুর মুরুগান মন্দির। এখানে ভগবান শিবের আরাধনা করা হয়। নবম শতাব্দীতে এই মন্দির চোলরাজারা স্থাপন করেন বলে জানা যায়। বর্তমানে মন্দিরের অন্যতম পুরোহিত হলেন, এস প্রভু এবং এস জয়বালান। দুজনেই অব্রাহ্মণ (Non Bramhin Priest)। দেশের অন্যতম বিখ্যাত এবং প্রাচীন এই মন্দিরের পুরোহিত অব্রাহ্মণ (Non Bramhin Priest)! বলা ভাল তাঁরা ব্রাহ্মণের কাজ করে চলেছেন। যেমনটা ঠিক বৈদিক সভ্যতায় হত। জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৪ অগাস্ট ২৪ জন প্রশিক্ষিত পুরোহিতকে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন মন্দিরে পুজোর কাজে নিয়োগ করা হয়, যাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন অব্রাহ্মণ(Non Bramhin Priest)। সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ, পুজোর রীতি সবকিছুর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এঁরা। এঁদের প্রত্যেকের উপনয়নেরও ব্যবস্থা করা হয় মন্দিরের পক্ষ থেকে।
কী বলছেন ভায়লুর মুরুগান মন্দিরের দুই অব্রাহ্মণ পুরোহিত (Non Bramhin Priest)
ভায়লুর মুরুগান মন্দিরের অন্যতম পুরোহিত ৩১ বছর বয়সী এস জয়বালন বলেন, আমার পরিবারে পুজো পাঠের রীতি ছোট থেকেই দেখে আসছি। তখন থেকেই আমি লক্ষ্য বানিয়েছিলাম যে পুরোহিত হব। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর অবশেষে তা হতে পেরেছি। অন্যদিকে এই মন্দিরের অন্যতম অব্রাহ্মণ (Non Bramhin Priest) পুরোহিত ৩০ বছর বয়সী এস প্রভু একজন দর্জির পুত্র। তিনি বলেন,আমার কাছে এটা স্বপ্নের থেকে কম কিছু নয় যে ইতিহাস বিখ্যাত এই মন্দিরে আমি পুরোহিত হতে পেরেছি। ১৭ বছর বয়স থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি এই কাজে। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে আমি শিখেছি পুজোপাঠ, সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ। শুধুমাত্র ভারতেই নয় সিঙ্গাপুরেরও অনেক মন্দিরে আমি পুজো করেছি। উপনয়ন, বিবাহ, অন্নপ্রাশনেরও কাজ করে থাকি আমি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours