শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: বাংলা ক্যালেন্ডারের দশম মাস হল মাঘ। আবার রাষ্ট্রীয় শকাব্দের একাদশ তম মাস হল মাঘা। দুটো আসলে একই। মনে করা হয় মঘা নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে এই মাসের নামকরণ হয়েছে মাঘ। ভারতীয় ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মাঘ মাসের পূর্ণিমা হল অতি পবিত্র। এবছর মাঘী পূর্ণিমা হল ৫ ফেব্রুয়ারি। হিন্দু এবং বৌদ্ধ উভয় সমাজের কাছেই মাঘী পূর্ণিমার তাৎপর্য, ইতিহাস, মাহাত্ম্য এবং গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে এই দিনটিকে ঘিরে। আমরা সেগুলি জানব।
হিন্দু ধর্মের প্রচলিত কাহিনী
পুরাকালে কান্তিকা নগরীতে ধনেশ্বর নামে একজন গরীব ব্রাহ্মণ বাস করতেন। ব্রাহ্মণের কোনও সন্তান ছিলনা। ব্রাহ্মণের দিন কাটছিল খুবই দুঃখে। ভিক্ষা করে কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছিল। এমনই একদিন ভিক্ষায় বের হলেন ব্রাহ্মন, সেসময় নগরীর বাইরে কোনও এক জনৈক ধনীর বাড়িতে তিনি ঢুকলেন ভিক্ষা করতে। কিন্তু সেখান থেকে ব্রাহ্মনকে খালি হাতেই ফিরতে হল কারণ নিঃসন্তান ব্রাহ্মনকে ভিক্ষা দিতে চাননি বাড়ির মালিক। ব্রাহ্মন ঘরে ফিরে কাঁদতে লাগল আর তার স্ত্রীকে সবটা খুলে বলল। সব শুনে স্ত্রী রূপবতী উপায় খুঁজতে লাগল। তখনই জনৈক একজন এসে বলল তোমরা মা কালীর পুজো কর এবং চন্দ্রিকা দেবীর আরাধনা কর, এতে তোমরা সন্তান লাভ করতে পারবে। তাই শুনে ব্রাহ্মন নাকি মাঘী পূর্নিমার এই পুজো করে এবং ব্রাহ্মন দম্পতির সন্তান লাভ হয়।
বৌদ্ধ ধর্মের আখ্যান
বিশ্বাস মতে মাঘী পূর্ণিমার এই বিশেষ দিনেই ভগবান বুদ্ধ তাঁর মহাপরিনির্বাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই বিশেষ তিথিতে তাই ভগবান বুদ্ধের পুজো করা হয়। বুদ্ধের এই ঘোষণায় তাঁর ভক্তকূল শোকবিহ্বল হয়ে পড়লে ভগবান তাঁদের তখন উপদেশ দিয়েছিলেন, তোমরা শোক করোনা, জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যধি সবই এই সংসারের নিয়ম। তাকে অগ্রাহ্য করা যাবেনা। সকল প্রকার মায়া থেকে মুক্তি লাভ করতে পারলেই জীবনে কোনও দুঃখ থাকবে না। এইদিন তাই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রদীপ পুজো করেন, আরতি করেন। বৌদ্ধদের কাছে এই দিনটির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।
অনেক জায়গায় মাঘী পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে নানা রকমের উৎসব ও মেলা বসে। ভক্তদের বিশ্বাস এইদিন দেবতারা স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন। এই দিন নদী স্নানকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours