মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: লোকবিশ্বাসের মহান উৎসব হল ছট। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ছট উৎসব পালিত হয়। চতুর্থী তিথিতে স্নানের মাধ্যমে শুরু হয় ছট আরাধনা। এই পুজোয় সূর্য দেবতার বোন ঊষা, প্রকৃতি, জল, বায়ু এবং ষষ্ঠী মাকে অর্ঘ্য উৎসর্গ করা হয়। ছট আরাধনার সময় বহু শতাব্দী ধরে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদনের প্রথা রয়েছে। শুধু বিহারে নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসব পালনের রীতি রয়েছে। হিন্দু সংস্কৃতিতে এই পুজোর গুরুত্ব অপরিসীম।
পৌরাণিক কাহিনী
ছট উৎসবে ছটি মাতা অর্থাত্ ষষ্ঠী দেবীর পূজা করা হয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও এর উল্লেখ রয়েছে। প্রথম মনু স্বয়ম্ভুর পুত্র রাজা প্রিয়ব্রতের কোন সন্তান ছিল না। এ কারণে তিনি মন খারাপ করতেন। মহর্ষি কাশ্যপ রাজাকে পুত্র লাভের জন্য যজ্ঞ করতে বললেন। মহর্ষির আদেশ অনুসারে রাজা যজ্ঞ করলেন। এর পরে, রানী মালিনী একটি পুত্রের জন্ম দেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শিশুটি মৃত জন্মগ্রহণ করে। এতে রাজা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গভীরভাবে শোকাহত হন। তারপর আকাশ থেকে একটি রথ মাটিতে অবতরণ করল যাতে মাতা ষষ্ঠী বসেছিলেন। রাজা তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন - আমি ব্রহ্মার মানস কন্যা ষষ্ঠী দেবী। আমি পৃথিবীর সকল শিশুকে রক্ষা করি এবং নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান লাভের বর দিই। এর পরে, দেবী মৃত শিশুর দিকে তার হাত বাড়িয়ে, তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, যা তাকে জীবিত করেছিল। দেবীর এই কৃপায় রাজা খুব খুশি হলেন এবং তিনি ষষ্ঠী দেবীর পূজা প্রচলন করলেন। এর পরেই ধীরে ধীরে এই পূজা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে বলে মনে করা হয়।
উৎসবের রীতি
এই উৎসবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সন্ধ্যা অর্ঘ্য। এটি ছট পুজোর গুরুত্বপূর্ণ পর্ব যা তৃতীয় দিনে পড়ে। এই দিনে পরিবারের সকল সদস্যরা ঘাটে যায় এবং অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এদিন ফল, ঠেকুয়া, চালের লাড্ডু ইত্যাদি সাজিয়ে কোমর-গভীর জলে প্রদক্ষিণ করে অর্ঘ্য নিবেদনের রীতি রয়েছে। হিন্দুমতে, ছটপুজোর সামগ্রীতে রয়েছে ভিন্ন সব জিনিস। বিবাহিত দম্পতির দীর্ঘায়ু, তাদের সন্তানদের সুখী জীবন এবং গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় ছট উপবাস পালন করা হয়।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’! দীঘা ও সুন্দরবন উপকূলে সতর্কতা
সূর্য আরাধনা কখন
হিন্দু ধর্মে সূর্য পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তিনিই একমাত্র দেবতা যাকে সরাসরি দেখা যায়। বেদে সূর্যকে জগতের আত্মা বলা হয়েছে। সূর্যের আলোর অনেক রোগ ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। সূর্যের শুভ প্রভাবে ব্যক্তি স্বাস্থ্য, গতি এবং আত্মবিশ্বাস লাভ করে। এই বছর, ছট পুজোর অস্তচলগামী অর্ঘ্য ১৯ নভেম্বর রবিবার দেওয়া হবে, আর ঊষা অর্ঘ্য দেওয়া হবে, ২০ নভেম্বর সোমবার। এই দিনে সূর্যোদয় হবে সকাল ০৬ টা ৪৭ মিনিটে। এর পরে, ভক্তরা প্রসাদ গ্রহণ করবেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours