Guhyakalika Temple: বীরভূমের নলহাটিতে পূজিতা হন দেবী গুহ্যকালী, জানুন ভীষণ দর্শনা এই দেবী সম্পর্কে

আকালীপুরের দেবী গুহ্যকালীকে ভক্তেরা অতিশয় "জাগ্রত" দেবী মনে করেন।
debi-gujhyakali
debi-gujhyakali

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হলো বীরভূম জেলা। এই জেলার তারাপীঠ, ফুল্লরা তলা সমেত সর্বত্র মাতৃসাধনার রীতি রয়েছে। এমনই এক মাতৃ আরাধনা সম্পন্ন হয় নলহাটি শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আকালীপুরে। ভীষণ দর্শনা এই দেবী গুহ্য কালিকা ( গোপন কালী) নামে পরিচিত। আকালীপুরের মন্দিরে (Guhyakalika Temple) গুহ্য কালী হলেন অধিষ্ঠাত্রী দেবী। যে মন্দির ৩০০ বছরের অধিক প্রাচীন বলেই মনে করা হয়। মহারাজা নন্দকুমার এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন বলেই জানা যায়। গুহ্যকালী, দেবী কালীর একটি বিশেষ রূপ। দেবীভাগবত পুরাণ মতে, তিনি দেবী শতাক্ষীর শরীর থেকে উৎপন্না অন্যতমা মহাশক্তি। কোনও কোনও সাধক বা তান্ত্রিক এই রূপে কালীর আরাধনা করে থাকেন, তবে গৃহস্থের নিকট এই রূপ "অপ্রকাশ্য"। গুহ্যকালী দ্বিভুজা, সর্পভূষিতা ও খড়্গহস্তা। তাকে সূর্যকালী নামেও অভিহিত করা হয়। যে কোন কালী মূর্তির সাথে আমরা শায়িত অবস্থায় দেবাদিদেব মহাদেব কে দেখতে পাই‌। কিন্তু গুহ্য কালীর মূর্তির সাথে শিব শায়িত অবস্থায় থাকে না‌।

দেবী গুহ্যকালীর ধ্যানমন্ত্র অনুযায়ী দেবীর গাত্রবর্ণ গাঢ় মেঘের ন্যায়; তিনি লোলজিহ্বা ও দ্বিভুজা; গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা; কটিতে ক্ষুদ্র কৃষ্ণবস্ত্র; স্কন্ধে নাগযজ্ঞোপবীত; মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র; কর্ণে শবদেহরূপী অলংকার; হাস্যযুক্তা, চতুর্দিকে নাগফণা দ্বারা বেষ্টিতা ও নাগাসনে উপবিষ্টা; বামকঙ্কণে তক্ষক সর্পরাজ ও দক্ষিণকঙ্কণে অনন্ত নাগরাজ; বামে বৎসরূপী শিব; তিনি নবরত্নভূষিতা; নারদাদিঋষিগণ শিবমোহিনী গুহ্যকালীর সেবা করেন; তিনি অট্টহাস্যকারিণী, মহাভীমা ও সাধকের অভিষ্ট ফলপ্রদায়িনী। গুহ্যকালী নিয়মিত শবমাংস ভক্ষণে অভ্যস্তা। প্রতিবছর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন গুহ্য কালীর পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় আকালীপুরে। সাধারণত  কালীপুজো রাত্রিতে হলেও গুহ্য কালী পুজো রাত্রে হয় না। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে গুহ্য কালীমাতা রাত্রিতে লীলা করতে বের হন। তাই রাত্রিতে মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখার রীতি দেখা যায়। কালী পুজোতেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়না‌‌। 

আরও পড়ুন: কথিত আছে, দেবী নীল সরস্বতীর আশীর্বাদে জন্ম তারাশঙ্করের, কথাসাহিত্যিক-এর পৈতৃক ভিটের পুজোর কথা জানুন

মহারাজা নন্দকুমার মন্দির স্থাপন করলেও এই বিচিত্র কালীমূর্তিটি তাঁর দ্বারা নির্মিত হয়নি বলেই কথিত আছে। জনপ্রিয় জনশ্রুতি হলো, মগধরাজ জরাসন্ধ এই মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন। কালক্রমে বিভিন্ন রাজার হাতে পূজিত হওয়ার পর কাশীরাজ চৈত সিংহের রাজ্যের এক কৃষক তার জমিতে মূর্তিটি খুঁজে পান। সংবাদ পেয়ে চৈত সিংহ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবী গুহ্যকালিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। এদিকে ওয়ারেন হেস্টিংসও এই মূর্তির সন্ধান পেয়ে এটিকে লন্ডনের জাদুঘরে প্রেরণে উদ্যোগী হন। মূর্তিটি হেস্টিংসের হাত থেকে রক্ষা করতে, চৈত সিংহ সেটিকে গঙ্গাবক্ষে লুকিয়ে রাখেন। মহারাজা নন্দকুমার স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেটিকে কাশী থেকে নিজ জন্মস্থান বীরভূমের ভদ্রপুর গ্রামে নিয়ে আসেন। নন্দকুমার নিজে ছিলেন পরম শাক্ত ও দেবী মহাকালীর ভক্ত। ১৭৭৫ সালের গোড়ায় তিনি মুর্শিদাবাদ-বীরভূমের সীমান্তবর্তী আকালীপুর গ্রামে দেবী গুহ্যকালীর মন্দির নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু ওই বছর জুন মাসে তিনি ইংরেজের হাতে বন্দী হলে, মন্দির নির্মাণে ছেদ পড়ে। ফাঁসির পূর্বে তিনি পুত্র গুরুদাসকে তান্ত্রিক মতে দেবী গুহ্যকালীর প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়ে যান। লোকশ্রুতি, ওই বছর ১৫ জুলাই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হয়েছিল।

মন্দিরের দক্ষিণে "পঞ্চমুণ্ডী" নামে পরিচিত একটি সিদ্ধাসন রয়েছে। আকালীপুরের দেবী গুহ্যকালীকে ভক্তেরা অতিশয় "জাগ্রত" দেবী মনে করেন। দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা এই মন্দিরে "মানসিক" করে পূজা দেন।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles