Emergency: জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তি, অমলিন সংবিধানের গায়ে ইন্দিরার ‘কলঙ্কে’র স্মৃতি

PM Mod: জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তি, কী কী বদল হয়েছিল সংবিধানে?...
indira-gandhi_f
indira-gandhi_f

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “যারা জরুরি অবস্থা (Emergency) জারি করেছিল, সংবিধানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার কোনও অধিকার তাদের নেই।” দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ৫০ বছর পূর্তিতে এই ভাষায়ই কংগ্রেসকে আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

কী বলছেন প্রধানমন্ত্রী (Emergency)

এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, “যারা জরুরি অবস্থা জারি করেছিল, সংবিধানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার কোনও অধিকার তাদের নেই। এরা একাধিকবার দেশে ৩৫৬ ধারা জারি করেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য বিল এনেছে, সংবিধানের প্রতিটি দিক লঙ্ঘন করেছে।” তিনি লিখেছেন, “জরুরি অবস্থার কালো অতীত আমাদের স্মরণ করায় কীভাবে কংগ্রেস দল দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। যে সংবিধানকে দেশবাসী সম্মান করে, তাকে পদদলিত করা হয়েছিল। কেবল ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য তৎকালীন কংগ্রেস সরকার গণতন্ত্রকে কার্যত মুছে দিয়ে গোটা দেশকে একটা কারাগারে পরিণত করেছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে একমত না হওয়া প্রতিটি ব্যক্তির ওপর ভয়ঙ্কর রকম নির্যাতন চালায় তৎকালীন সরকার।”

‘অভিশপ্ত’ সেই দিন

ফেরা যাক, ১৯৭৫ সালের ‘অভিশপ্ত’ সেই দিনটিতে। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ইন্দিরা গান্ধী। রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ। ২৫ জুন জারি হয় জরুরি অবস্থা। এই অবস্থা জারি ছিল ২১ মাস। এই সময় সংবিধান সংশোধন করে নিজেকে ডিক্রি দ্বারা শাসক করার ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন ইন্দিরা। ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধন হয়। অনেকে অবশ্য একে সংশোধনী না বলে ‘মিনি সংবিধান’ বলতেই পছন্দ করেন। এই সময় সংবিধান সংশোধন করতে গিয়ে বদল আনা হয় সংবিধানের প্রস্তাবনায়ও। ৪০ আর্টিকেল, ৭ শিডিউলের পাশাপাশি ১৪টি নতুন আর্টিকেলও যোগ করা হয়। সংবিধানে দুটি নতুন অংশও যোগ করা হয়।

মৌলিক অধিকারে আঘাত

সংবিধান সংশোধন করতে (Emergency) গিয়ে ইন্দিরা প্রথমেই আঘাত হেনেছিলেন দেশবাসীর মৌলিক অধিকারে। আক্রমণ করেছিলেন বিচারব্যবস্থাকেও। মূল আঘাত নেমে এসেছিল সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং কনস্টিটিউশনাল রেমেডির অধিকারের ওপর। ডানা ছেঁটে দিয়েছিলেন জুডিশিয়াল রিভিউয়ের। ক্ষমতা খর্ব করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা এবং রিটের এক্তিয়ার হ্রাস করা হয়েছিল।   

ক্ষমতার লোভ

ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে আরও একটি কাজ করেছিলেন ইন্দিরা। লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে রাশিয়ার ধাঁচে ছ’বছর করে ফেলেছিলেন। সংসদের কোরাম ব্যবস্থাও তুলে দিয়েছিলেন। কমিয়ে দিয়েছিলেন লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির আসন সংখ্যা। জরুরি অবস্থায় সময় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে প্রাণপণ করেছিলেন ইন্দিরা। যাঁরাই জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে – তা তিনি কংগ্রেসই হোন কিংবা বিরোধী। এই সময়ই গ্রেফতার করা হয়েছিল মোরারজি দেশাই, জেপি নারায়ণ, চৌধুরী চরণ সিং, অটল বিহারী বাজপেয়ী, এলকে আডবাণী, আচার্য কৃপালনী-সহ বিরোধী নেতাদের। খর্ব করা হয়েছিল নাগরিক স্বাধীনতা।

সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ

ভারতের প্রতিরক্ষা বিধি ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইন রক্ষণাবেক্ষণের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছিল বেশ কয়েকজন কর্মী ও সাংবাদিককেও। কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল সংবাদপত্রের। গুরুত্বপূর্ণ কোনও খবর প্রকাশ করতে হলে তা পাশ করাতে হতে হত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে। এই সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরখাস্ত করা হয়েছিল অ-কংগ্রেসি রাজ্য সরকারগুলিকে। পুলিশ বিনা বিচারে গ্রেফতার করেছিল বহু নিরীহ নাগরিককে। জরুরি অবস্থার (Emergency) সময় দেশে সংসদকেই চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়। জুডিশিয়াল কোনও রিভিউ ছাড়াই সংবিধান সংশোধনের অধিকারও দেওয়া হয় সংসদকে। ইন্দিরার এই সংশোধনীর ফলে জরুরি অবস্থার সময় দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবস্থা।

সংবিধানের প্রস্তাবনায় বদল

সংবিধানের (Emergency) প্রস্তাবনায় তিনটি নতুন শব্দ ‘সমাজতান্ত্রিক’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘অখণ্ডতা’ যোগ করা হয়। ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ শব্দবন্ধের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ‘সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ শব্দগুলি। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা বলা হলেও, কী ধরনের সমাজতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে, তার কোনও দিক নির্দেশ ছিল না। ‘জাতির ঐক্য’ শব্দবন্ধের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছিল ‘জাতির ঐক্য ও অখণ্ডতা’ শব্দবন্ধ। নাগরিকদের জন্য ১০টি মৌলিক কর্তব্য যোগ করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালে যখন সংবিধান কার্যকর হয়েছিল, তখন তাতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

এই সংশোধনীতে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল এবং অন্যান্য বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল যোগ করা হয়। নির্দেশমূলক নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত আইনগুলি কিছু মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের কারণে আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করা যাবে না বলেও বলা হয়। লোকসভার স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ বিবেচনার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল। সংসদ আইনটি মন্ত্রিসভার পরামর্শের মধ্যেই বেঁধে দেয় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে। সংঘাতপূর্ণ কিংবা দাঙ্গা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যে বাহিনী মোতায়েনের অনুমতিও দেয় সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনী।

আর পড়ুন: চাবাহার-সিটওয়ের পর এবার ভারতের লক্ষ্য বাংলাদেশের মংলা বন্দর, কেন জানেন?

বিরোধীদের মতে, সংবিধান সংশোধনের নামে ইন্দিরা আদতে ধ্বংস করেছিলেন ভারতের সংবিধানকে। ছুরিকাঘাত করেছিলেন আম্বেডকরের ভাষায়। প্রয়াত হয়েছেন ইন্দিরা। অতীত হয়েছে তাঁর জমানা। তবে রয়ে গিয়েছে সংবিধানের গায়ে তাঁর লাগানো ‘কালো দাগ’। এই সংবিধানকে রক্ষা করতে পেরেই তৃপ্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর অঙ্গীকার, “আমরা গৌরবের সঙ্গে সংবিধান রক্ষা করতে পেরেছি। দেশবাসী সঙ্কল্প নেবে যে ভবিষ্যতে আর কেউ এই কালো দিন আনার সাহস দেখাতে পারবে না (Emergency)।”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles