মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে একের পর এক নাম উঠে আসছে। সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষকে। তাঁকে জেরা করেও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। তাঁকে গ্রেফতার করার পরেই নাম উঠে আসে গোপাল দলপতির। ইডি সূত্রে খবর, গত মঙ্গলবার গোপালকে নিয়ে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র আঞ্চলিক দফতরে যান তাপস মণ্ডল। সেখানেই কুন্তল, তাপস ও গোপালকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানেই গোপাল তদন্তকারীদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থকে টাকা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করতেই ‘তাপসকে টাকা দেওয়া হয়েছে’ বলে চিৎকার শুরু করে দেন কুন্তল। ফলে ইডির অভিযোগ, তদন্তকারীদের লাগাতার বিভ্রান্ত করে বিপথে চালিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কুন্তল।
ইডির মুখোমুখি জেরা কুন্তল, তাপস ও গোপালকে
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র দফতরে আসেন গোপাল ও তাপস। রাত ১টা ২০ নাগাদ দু’জনে বের হন। মঙ্গলবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের মুখোমুখি বসিয়ে গোপাল দলপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি-র আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন একাধিকবার কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন কুন্তল ও গোপাল। কুন্তল ১৫ কোটি টাকা দেওয়ার দাবি করলেও, গোপাল তা অস্বীকার করেন। উল্টে জানতে চান কার সামনে টাকা দিয়েছেন কুন্তল? তার কোনও প্রমাণ রয়েছে কি না।
অভিযোগ অস্বীকার গোপালের
ইডি জানিয়েছে, গ্রেফতারের পরে কুন্তল দাবি করেছিলেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থকে তিনি সাড়ে ১৫ কোটি টাকা দিয়েছেন এবং সেই টাকা লেনদেনের অন্যতম সাক্ষী গোপাল। কিন্তু এই অভিযোগই অস্বীকার করেছেন গোপাল দলপতি। তিনি বলেছেন, পার্থের কাছে তিনি কোনও দিনই কোনও টাকা পৌঁছে দেননি। ইডি সূত্রে খবর, তার পরেই কুন্তল আচমকা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘গোপালদা, তুমি বলো। তাপস তোমার সামনেই আমার কাছ থেকে দশ কোটি টাকা নিয়ে কলেজ তৈরি করেছেন।’ কুন্তলের ওই দাবিও নস্যাৎ করে দিয়েছেন গোপাল।
আরও পড়ুন: পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে ২০১৭-এর টেটের ওএমআর শিট! কার নির্দেশে এমন কাজ, রিপোর্ট চাইলেন বিচারপতি
এমনকী নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানো আরেক যুব তৃণমূল নেতা ও হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেন গোপাল। এর পর ইডি-র তরফে জানানো হয়, ৭ দিনের মধ্যে গোপালকে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, সম্পত্তি সংক্রান্ত নথি ও পুরনো মামলার সমস্ত তথ্য জমা দিতে হবে। তাপস ও কুন্তলের সামনে বসে গোপাল দাবি করেন, ২০১৬ সালে তাপস মারফত কুন্তলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের নির্দেশে তিনি নানা কাজ করেছেন। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কুন্তল বেশ কয়েক বার তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট চার-পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সেই লেনদেনের নথিও তাঁর কাছে আছে।
তাপস মণ্ডল কী বললেন?
অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল মঙ্গলবার ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের পর দাবি করেন, গোপাল দলপতি তাঁর গ্রামের ছেলে। কিন্তু ৪ বছর পর দেখা হয়েছে। তিহার জেল থেকে গোপালের ছাড়া পাওয়ার কথা কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছ থেকে জেনে তিনিই পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের কসবা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে গোপালকে খুঁজে নিয়ে আসেন বলে দাবি করেন তাপস মণ্ডল।
ফের তলব শান্তনুকে
যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে চতুর্থ দিনও দীর্ঘ জেরা করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বুধবার প্রায় ৭ ঘণ্টা জেরার পর ইডির অফিস থেকে বেরোন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে শান্তনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল ইডি। বুধবার বেলা ১২টার কিছু পরে সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকেন যুব তৃণমূল নেতা। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আবার বেরিয়ে আসেন তিনি। ইডি সূত্রে খবর, শান্তনুর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলিই জমা দিতে ইডির অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছিলেন। সেগুলির বিষয়েও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বুধবার।
+ There are no comments
Add yours