মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আমচুরের টক ও বড়ি দিয়ে ভোগ দেওয়া হয় চিন্ময়ী মাকে। এমন অনেক ঐতিহ্য বহন করে আজও জমজমাট নন্দকুমারের ব্যবত্তাবাটির বনেদি বাড়ির পুজো, যার ইতিহাসও কম চমকপ্রদ নয়। স্বার্থকরাম ছিলেন তাম্রলিপ্ত, অধুনা তমলুকের তাম্রধ্বজ রাজার ব্যবস্থাপক। জানা যায়, স্বার্থকরামের মা বাড়ির অদূরে একটি পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে চরম অপমানিত করা হয়। মা বাড়িতে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মায়ের সেই কান্নাকাটি দেখে স্থির থাকতে পারেননি স্বার্থকরাম। মায়ের চোখের জল দেখে বাড়িতেই শুরু করে দেন চিন্ময়ী মায়ের পুজো। সেই থেকে আজও নন্দকুমারের ব্যবত্তাহাটের ব্যবত্তাবাটিতে হয়ে আসছে মা দুর্গার পুজো।
নিজেরাই পুজো করেন মায়ের
জন্মাষ্টমীর পরের দিন নন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে এক কিলোমিটার দূরে পুরনো ব্যবত্তাহাটে পতিতাপল্লির মাটি নিয়ে এসে মায়ের প্রতিমা গড়া হয়। এদিন গ্রামের ও পরিবারের সদস্য সদস্যারা কাদা মাখার খেলা খেলেন। এই পুজো শুধু বাড়ির পুজো নয়, এলাকার মানুষের প্রাণের পুজো, আদি ও প্রাচীন পুজো। নিয়মনিষ্ঠা মেনে আজও এই ব্যবত্তাবাটির পুজো হয়ে আসছে। সার্থকরাম রাজা পরিবারের ব্যবস্থাপক ছিলেন বলেই সেই থেকে এই এলাকার নাম হয় ব্যবত্তারহাট। সপ্তমীর দিন মায়ের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান, যা বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে। ব্রাহ্মণ পরিবারের এই পুজোতে নিজেরাই পুজো করেন মায়ের। গোস্বামী মতে পুজো হয়। বিল্লধিবাস অর্থাৎ ষষ্ঠীর দিন এক মন ছ-সের চালের নৈবেদ্য অর্থাৎ ভোগ হয়, সপ্তমীর দিন ১ মন ৭সের, অষ্টমীর দিন এক মন আট-সের-এরকম করে প্রত্যেকদিন ভোগ দেওয়া হয় মাকে।
ভোগে থাকে রকমারি বড়ি
মায়ের ভোগ রান্নার আয়োজন করেন পরিবারের মহিলারা। মায়ের ভোগে থাকে রকমারি বড়ি। সেই বড়ি সারা বছর ধরে মহিলারা প্রস্তুত করেন। বর্তমান সময়ে থিমের রমরমা থাকলেও প্রাচীন সাবেকি পুজোয় মানুষের ঢল নামে। এখনে নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে পুজো হয় বলেই দূর দূরান্তের মানুষ পুজোয় ভিড় জমান।পরিবারের সদস্যরা সকলে ভিন রাজ্য, ভিন দেশে কর্মসূত্রে থাকলেও পুজোর সময় সকলে বাড়ি ফিরে উৎসবে মেতে উঠেন। তবে এই বাড়ির মায়ের ভোগে থাকে বিভিন্ন ধরনের বড়ির সঙ্গে আমচুরের টক। যা মায়ের প্রসাদ হিসেবে পেতে প্রতিদিন ভিড় জমান বহু মানুষ। নবীন ও প্রবীণদের মিলিত প্রয়াসে আজও ব্যবত্তাবাটির পুজো জমজমাট।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours