মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চণ্ডীমঙ্গল থেকে পালাগান এবং যাত্রাপালার মতো বিনোদনের আসর। সঙ্গে আশপাশের গ্রাম ভেঙে মানুষের ভিড়। সব মিলিয়ে গণ উৎসবে পরিণত হত দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার পতিরাম এলাকার জমিদার বাড়ির পুজো (Durga Puja 2024)। ৩০১ বছরেরও বেশি আগে ঘোষ এস্টেটের জমিদার প্রয়াত রামসুন্দর ঘোষ দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। শূন্যে দোনলা বন্দুকের পর পর গুলির শব্দে দেবীর বোধনের বার্তা পৌঁছে যেত দূরের অঞ্চলে। গরুর গাড়িতে চড়ে, কেউ ছেলে-বউ নিয়ে পায়ে হেঁটে এসে জমিদারের তৈরি অতিথিশালায় ঠাঁই নিতেন। দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করে মণ্ডপে হত মোষ বলি এবং পর পর পাঁঠাবলি। আনন্দের জোয়ারে খুশি প্রজাগণের চওড়া হত মুখের হাসি। পুজোর কটা দিন জমিদার বাড়িতেই পাত পেড়ে দু'বেলা প্রসাদ খাওয়া তো ছিলই। সঙ্গে বড় বড় হ্যাজাকের আলোয় ভরা সামিয়ানায় বসে রাতভর পালাগানের আসরে মজে থাকতেন মানুষ। আর তাঁদের ভিড়ে উৎসবের দিনগুলিতে সকলে মেতে উঠতেন।
বোধনে নারায়ণ পুজোর রীতি (Durga Puja 2024)
আজ জমিদারও নেই। নেই সেই জমিদারির জৌলুস। পুরনো সেই মন্দির সংস্কার করে সাত পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ বারেও দু্র্গাপুজোর আয়োজন করছেন বৃদ্ধ বংশধর সাগর ঘোষ। পুরনো দিনের সেই যাত্রাপালা উৎসব আর হয় না। তবে কলকাতা ও জলপাইগুড়ি থেকে আত্মীয় স্বজনরা সময় পেলে পুজোয় আসেন। আত্রেয়ী নদীপথে বাণিজ্যের সুবাদে পূর্ববঙ্গ থেকে পতিরামে এসে জমিদারি পত্তনের সঙ্গেই পারিবারিক দুর্গাপুজো শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। এখনও রীতি মেনে জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় জমিদার বাড়ির প্রতিমা গড়ার কাজ। পঞ্চমীতে দেবীর বোধনে নারায়ণ পুজোর রীতি এখনও ধরে রেখেছেন সাগরবাবু। ঐতিহ্যের নিদর্শন প্রতীকী নৌকাও (Symbolic Boat) মণ্ডপে পুজো হয়।
অষ্টমীতে চণ্ডীপুজো হলেও বলি প্রথা বন্ধ
বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এক সময় এই পুজো ঘিরে এলাকা-জুড়ে চলত উৎসব। এখন এলাকার ক্লাব কমিটির সাড়ম্বর পুজোয় (Durga Puja 2024) অনেক জৌলুস।’’ লোকবলের অভাব। পাশাপাশি আর্থিক সমস্যার কারণে জৌলুস হারালেও তিথি-নক্ষত্র মেনে নিষ্ঠাচারে দেবীর পুজোর আয়োজন করে জমিদারের বংশধর সাগরবাবু এখনও সাতপুরুষের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। এবিষয়ে জমিদার বাড়ির উত্তরসূরী সাগরকুমার ঘোষ বলেন, "আমাদের এই পুজো ৭ পুরুষের পুরনো। প্রতিমা বিসর্জনের দিন থেকে পরের বছর পুজোর প্রস্তুতি চলে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে এই বাড়িতে থাকি। আমরা দুজনে প্রস্তুতির কাজকর্ম করি। আমাদের পুজোতে আগে বলি ছিল। আমরা এখন বলি প্রথাটা উঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের পুজোর বিশেষত্ব হল নৌকাকে ডিঙি করে সেই নৌকাতে পুজো হয়। দশমীর দিন সেই ডিঙিকে (Symbolic Boat) বিভিন্নভাবে সাজিয়ে মণ্ডপে পুজো করে পুজোর পর বাড়িতে যে বয়স্ক মানুষ থাকে, সে মাথায় করে বসত বাড়িতে আনে। এটাই আমাদের পুজোর বিশেষত্ব। পুজোর পাঁচদিন এলাকার সমস্ত মানুষ এখানে এসে আনন্দ করে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours