মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পূর্ববঙ্গের জমিদারের পুজোয় মহানবমীতে দেবীর নৈবেদ্যর পাতে থাকত থরে থরে পাকা কাঁঠালের কোয়া। ময়মনসিংহের আকুয়াপাড়ায় সেন পরিবারের বাগানে কাঁঠাল গাছের সংখ্যাও ছিল অগুনতি। আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল মিলত গাছগুলি থেকে। পূর্ববঙ্গের সেই ঐতিহ্যের পুজো (Durga Puja 2023) ঠাঁইনাড়া হয়ে এখন হয় ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেন পরিবারের উত্তরসূরীদের বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে।
কাঁঠালের বদলে এঁচড় (Durga Puja 2023)
ভাদ্রের পর ঝাড়গ্রামের বাজারে পাকা কাঁঠাল মেলে না। সেনদের চারটি গাছেও এই সময় পাকা কাঁঠাল থাকে না। তাই সাবেক প্রথা ধরে রাখতে কাঁঠালের পরিবর্তে মহানবমীর দিন দেবীকে নিবেদন করা হয় এঁচড়। তবে দক্ষিণ ভারতের সেই এঁচড় কিনে আনা হয় কলকাতার বাজার থেকে। ময়মনসিংহের আকুয়াপাড়ায় সেনবাড়ির দুর্গাপুজোর জাঁক ছিল দেখার মতো। ১২৩৫ বঙ্গাব্দে পুজোটি শুরু করেছিলেন ভূস্বামী রামরতন সেনশর্মা। সেই ঐতিহ্যের পুজো (Durga Puja 2023) ঠাঁইনাড়া হয় দেশভাগের পরে। রামরতনের উত্তরসূরীরা চলে আসেন ঝাড়গ্রামে। পূর্ববঙ্গে পুজো হত একচালার প্রতিমায়। পঞ্চাশের দশকের গোড়ায় ঝাড়গ্রামে পুজো শুরু হয় ঘটে। প্রায় ছ'দশক পরে ২০১৩ সাল থেকে ফের মূর্তি গড়ে পুজো হচ্ছে। পূর্ববঙ্গের সময় থেকে ধরলে এ বার পুজোর ১৯৬তম বর্ষ। এ ছাড়াও সেনবাড়িতে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোও হয়। আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও পারিবারিক ঐতিহ্যের পুজো ও অনুষ্ঠান বন্ধ হতে দেননি রামরতনের উত্তরসুরীরা।
নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ছোঁয়া (Durga Puja 2023)
পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুবোধ সেন জানালেন, পূর্ববঙ্গের পুজোর (Durga Puja 2023) দিনগুলিতে হাজার খানেক পাত পড়ত। যাঁরা প্রসাদ গ্রহণ করতেন, তাঁদের সকলকে নতুন কাপড় ও নগদ পঞ্চাশ পয়সা দেওয়া হত। জমিদারের পুজোর সেই জৌলুস আজ ইতিহাস। তবে সেন পরিবারের পুজোয় রয়েছে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ছোঁয়া। এখনও দর্শনার্থীদের দেবীর প্রসাদ দেওয়া হয়। দেবীপক্ষের প্রতিপদে দেবীর ঘট ওঠে। চণ্ডীপাঠও হয়। সাধ্যমতো আয়োজন হয়। পুজোর সময় পরিবারের কেউই আমিষ স্পর্শ করেন না। পুজোয় বলিদানের প্রথা নেই। সপ্তমী থেকে নবমী তিনদিনই দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। প্রথা অনুযায়ী, মহাষ্টমীর নৈবেদ্যে আম এবং মহানবমীর নৈবেদ্যে কাঁঠাল দিতেই হয়।
পরিবারের সকলকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে পুজো
সেন পরিবারের আর এক প্রবীণ সদস্য বরুণকুমার সেনের আক্ষেপ, “পূর্ববঙ্গে পুজোর (Durga Puja 2023) সময় কাঁঠাল মিলত। কিন্তু আশ্বিন মাসে ঝাড়গ্রামের বাজারে কাঁঠাল পাওয়া যায় না। সেই কারণে এখন কলকাতা থেকে এঁচড় কিনে আনা হয়। মহানবমীতে দেবীকে অন্নভোগের সঙ্গে এঁচড়ের ডালনা দেওয়া হয়। পরিবারের তরুণ সদস্য দেবব্রত সেন বলেন, “করোনা কালে এঁচড় পেতে খুবই সমস্যা হয়েছিল। তাই সেবার অনলাইনে বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থার কাছ থেকে অনলাইনে এঁচড় কেনা হয়।” দেবব্রত জানালেন, পুজোর সময় দূরে থাকা সদস্যরা আসেন। পরিবারের সকলকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে পুজোর চারটে দিন ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours