তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব চলছে! পাড়ার গলি থেকে রাজপথ, আলোয় সেজে উঠেছে চারপাশ! রাত বাড়লেই যেমন আলোর রোশনাই বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভিড়! ছোট থেকে বড়, সব বয়সীরাই ভিড় ঠেলে এক প্যান্ডেল থেকে আরেক প্যান্ডেল যাচ্ছেন (Durga Puja 2023)। আর রাত থেকে ভোর হচ্ছে! রাত জেগে দুর্গা ঠাকুর দেখা এখন পুজোর আরেক অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সারা রাত জেগে থাকা, আসলে কতখানি বিপজ্জনক? শরীরে কী প্রভাব পড়ছে? চিকিৎসকরা কিন্তু জানাচ্ছেন, উদযাপনের জোয়ারে সতর্কতা জরুরি। তা না হলে পুজোর চারদিনের এই লাগামছাড়া আনন্দের মাশুল গুনতে হবে বছরভর!
কোন ধরনের সমস্যার ইঙ্গিত করছেন চিকিৎসকরা?
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাত জেগে থাকা একেবারেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। শরীরের প্রয়োজন নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্রাম। যেমন শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মমাফিক খাবার, পরিমাণমতো জল জরুরি, তেমনি সময় মতো ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই পুজোর (Durga Puja 2023) সময় রাতভর ঠাকুর দেখেন। ফলে, শরীর প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পায় না। এর ফলে একাধিক সমস্যা তৈরির আশঙ্কা থাকে। শরীরে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্নায়ুর কার্যশক্তি কমে যায় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাই রাত জেগে ঠাকুর দেখলে একদিকে যেমন ক্লান্তি গ্রাস করে, তেমনি কাজ করার শক্তি কমে। পাশপাশি, মস্তিষ্কের সক্রিয়তাও কমে। ঠিকমতো বিশ্রাম না হলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকতে পারে না। কারণ, রাতে ঘুমের সময়েই আমাদের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। যা মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মানুষের স্মৃতিশক্তিকেও বাড়িয়ে দেয়। রাতে অন্তত সাত-আট ঘণ্টা না ঘুমোলে মস্তিষ্কের পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয় না।
রাত জেগে ঘোরার (Durga Puja 2023) জেরে ত্বকের একাধিক সমস্যা হতে পারে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাতে ঘুমোলে ত্বকের বিশ্রাম হয়। যা অত্যন্ত জরুরি। চোখের নীচের কালো দাগ কমানো, ত্বক খসখসে না হতে দেওয়া কিংবা চামড়া কুঁচকে যাওয়ার মতো সমস্যা এড়াতে নিয়ম করে ঘুমোনো জরুরি। তাই রাত জেগে ঠাকুর দেখা ত্বকের সমস্যা বাড়াতে পারে।
সারা রাত জেগে থাকলে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে কিডনি আর লিভারে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পুজোর সময় রাত জেগে শুধু প্যান্ডেল থেকে আরেক প্যান্ডেলে ঘোরা হয় না। অধিকাংশের চলে রাতভর ভুরিভোজ। অনেকেই গভীর রাতে অতিরিক্ত তেলমশলা দেওয়া নানান খাবার খান। ফলে, হজমের সমস্যা দেখা দেয়। একদিকে পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি, আরেকদিকে অতিরিক্ত তেলমশলা দেওয়া খাবার লিভার এবং অন্ত্রে চাপ তৈরি করে। ফলে, নানান জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে। পাশপাশি সময় মতো না ঘুমোলে অন্ত্রের কার্য শক্তি কমে। ফলে, পেটের একাধিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
কী পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক মহল? (Durga Puja 2023)
পুজোর চার দিন একটানা কখনই রাত জাগার পরিকল্পনা করা উচিত নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, এতে শরীরে একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। নানান হরমোন ভারসাম্য হারবে। ফলে, শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। একদিনের বেশি পুরো রাত জেগে ঠাকুর দেখার (Durga Puja 2023) পরিকল্পনা বছরভর স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরির কারণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শরীর যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়, সে দিকে নজর রেখে উৎসবের পরিকল্পনা করতে হবে। রাত জেগে ঠাকুর দেখলে খাবারে বাড়তি নজর দিতে হবে। রাত দশটার পরে একেবারেই বাইরের খাবার খাওয়া চলবে না। হালকা খাবার খেয়ে একদিন রাত জাগা যেতে পারে বলেও তাঁরা জানাচ্ছেন। পাশপাশি জল খাওয়ার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। রাত জাগলে হজমের সমস্যা এড়াতে ও ত্বক সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত পরিমাণ জল খেতে হবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours