মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উমা আসছেন ঘরে ঘরে (Durga Puja 2023)। শিউলির গন্ধ আর কাশফুলের শুভ্রতায় প্রকৃতিও আহ্বান করতে প্রস্তুত ঘরের মেয়ে উমাকে। কৈলাস থেকে সপরিবারে আসছেন দেবী দুর্গা বাঙালির মন্দিরে মন্দিরে। কিন্তু মলানদিঘির ঘটক পরিবারের দেবী দুর্গা পুত্রকন্যাদের সঙ্গে নয়, দুই সখী জয়া-বিজয়ার সঙ্গে আসেন এবং চারদিন ধরে ধুমধামের সঙ্গে পূজিতা হন। কিন্তু এমন কেন? পুত্র-কন্যা নয়, দুই সখী জয়া-বিজয়া কেন? প্রশ্নের উত্তরে দুই প্রবীণ সদস্য গিরিজাশঙ্কর ভট্টাচার্য এবং শ্যামাচরণ ভট্টাচার্য বলেন, “দেবীর সৃষ্টির মধ্যেই এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। দেবীর সৃষ্টি হয় ধ্যানের মন্ত্রের মধ্য দিয়ে, সেই সময় তাঁর পুত্রকন্যাদের সৃষ্টি হয়নি। দেবী মহিষাসুর বধে যান তাঁর দুই সখী জয়া-বিজয়াকে নিয়ে। দেবীর রণংদেহী মূর্তির আরাধনা করা হয় তাই পুত্রকন্যাদের সঙ্গে নয়, তাঁর সঙ্গে থাকেন দুই সখী”।
ভট্টাচার্য কীভাবে হয়ে গেল ঘটক?
কাঁকসা থানার মলানদিঘির ঘটক পরিবার। আসলে এই পরিবারের আদি পদবী ছিল ভট্টাচার্য। হেতমপুরের মহারাজা মলানদিঘির ভট্টাচার্য পরিবারকে সংস্কৃত ভাষায় শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত হওয়ার জন্য ঘটক পদবী উপাধি হিসাবে দেন। সেই থেকেই এই পরিবার মলানদিঘির ঘটক পরিবার (Durga Puja 2023) নামেই পরিচিত। মলানদিঘির ঘটক পরিবার সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত পরিবার। এই পরিবারের এক গর্বের ইতিহাস রয়েছ। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত পরিবারের ইতিহাস গর্বে ভরিয়ে দেয় জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের। শ্যামাচরণ ভট্টাচার্যের পিতা ছিলেন কাব্যতীর্থ অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য আর গিরিজাশঙ্কর ভট্টাচার্যের পিতা ছিলেন সপ্ততীর্থ বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। বিদ্যাসাগর মহাশয় তখন বিধবা বিবাহ নিয়ে বিভিন্ন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতের কাছে মতামত নিচ্ছিলেন, সেই সময় বিদ্যাসাগর মহাশয় মলানদিঘির ঘটক পরিবারের বিখ্যাত শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ন্যায়রত্ন তর্কালঙ্কার বিষ্ণুপদ ভট্টচার্য মহাশয়ের কাছে পরামর্শ চেয়ে চিঠি পাঠান। বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে দেখান বিধবা বিবাহ হিন্দু শাস্ত্রমতে শাস্ত্রসম্মত। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার পত্রালাপ হয় উভয়ের মধ্যে। জানা গিয়েছে, সেই চিঠি আর এখন ঘটক পরিবারের হাতে নেই। পরিবার সুত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক সেই চিঠিগুলি গবেষণার জন্য নিয়ে যান। কিন্তু তারপরে আর ফেরত দেননি তিনি। এভাবেই মহামূল্যবান চিঠি হাতছাড়া হয়ে যায় ঘটক পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে।
আনুমানিক ৪০০ বছরের পুরনো (Durga Puja 2023)
মলানদিঘির ঘটক পরিবারের দেবী দুর্গা ঠিক কত বছরের, তা পরিবার সূত্রে বলা সম্ভব হয়নি। অনুমান ৪০০ বছরের কাছাকাছি তাঁদের পরিবারের এই দেবী দুর্গা। কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তারও কোনও ইতিহাস নেই বর্তমান প্রজন্মের কাছে। ঘটক পরিবারের দেবীর আরাধনা (Durga Puja 2023) সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিবারের দেবীর আরাধনায় শুদ্রজাত কোনও ব্যক্তির দান গ্রহণ করা হয় না। সপ্তমীর দিন নবপত্রিকা আনা হয়। পরিবারের নিজস্ব তালপাতার পুঁথি থেকে পাঠ করা হয় মন্ত্র। এই মন্ত্র আসলে ধ্যান মন্ত্র। মহাষ্টমীতে সন্ধীপুজোর আগে এক চক্রাকারের ভিতরে প্রাকৃতিক রঙে আটতি পদ্ম আকারের পাপড়ি আঁকা হয়। এই সময় তালপাতার পুঁথি থেকে ধ্যান মন্ত্র পাঠ করা হয়। এরপরে বলি দেওয়া হয় চালকুমড়ো এবং আখ। পুর্বে ঘটক ছাগবলির প্রথা ছিল। কিন্তু প্রায় ৫৫ বছর আগে অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য এই ছাগবলি প্রথা তুলে দিয়ে চালকুমড়ো বলি প্রথা নিয়ে আসেন। পরিবারের গৃহবধূদের মধ্যে সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে সিঁদুর খেলার প্রচলন আছে। সপ্তমীতে নবপত্রিকা আসার পরে, অষ্টমীতে বলির পরে এবং বিজয়াতে নিরঞ্জনের জন্য বরণের পরে। মহিলারা নবপত্রিকা নিরঞ্জনের পরে নবপত্রিকার ভিতরে থাকা হলুদ প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours