মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে কাঁথির কিশোরনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অন্যতম। আনুমানিক ১৭১৭ সালে প্রথম এই পুজো শুরু হয়। স্বর্গীয় রাজা যাদবরাম রায় দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশে পুজো শুরু করেন। বর্তমানে পুজোর (Durga Puja 2023) বয়স ৩০০ বছরের বেশি।
পুজোর বেশ কিছু ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য (Durga Puja 2023)
রাজাও নেই, রাজত্বও নেই। তবুও বিগত তিন শতাব্দী ধরে ধর্মীয় সকল রীতিনীতি ও পরম্পরা মেনে আজও কিশোরনগর রাজবাড়িতে পুজো হয়ে আসছে। রাজকীয়তা বা জৌলুস কমলেও দিনে দিনে রাজবাড়ির পুজো ঘিরে বেড়েছে মানুষের টান ও ভালোবাসা। কিশোরনগর রাজবাড়ির পুজোর বেশ কিছু ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, এখানে মায়ের ঘট পশ্চিমমুখী। এছাড়াও পুজোয় হোমের আগুন জ্বালানো হয় সূর্যের আলোতে, আতস কাচ ব্যবহার করে। যদি বৃষ্টির কারণে আতস কাচ কাজ না করে, তবে ব্যবহার করা হয় বিশেষ চকমকি পাথর। এক সময় এখানে মায়ের কাছে বলি দেওয়ার প্রথা থাকলেও এখন আর তা হয় না। পশু বলির পরিবর্তে আখ ও চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয় (Durga Puja 2023) রীতি মেনে। এখানে মায়ের প্রসাদ হিসেবে কাজুবাদাম দিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের ভোগপ্রসাদ দেওয়া হয়।
হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন (Durga Puja 2023)
কিশোরনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন ঘটোত্তলনের মধ্য দিয়ে। ঠাকুর এখানে এক চালার। মন্দির পাকা হলেও ঐতিহ্য মেনে মায়ের মন্দিরে মায়ের মাথার উপরে আজও রয়েছে খড়ের চালা। নিয়ম মেনেই মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, সন্ধিপুজো, মহানবমী এবং দশমীর পুজো ও বিসর্জন হয়। মহাষ্টমীর দিন অঞ্জলি দেওয়ার জন্য মানুষজন ভিড় করে রাজবাড়ির দালানে। নিয়ম মেনেই সন্ধিপুজো হয় একশোটি প্রদীপ জ্বালিয়ে। পুজোর (Durga Puja 2023) দিনগুলিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন রাজবাড়ির পুজো দেখতে, পুষ্পাঞ্জলি দিতে, প্রসাদ খেতে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার হাজার হাজার মানুষ ছাড়াও পাশের রাজ্য ওড়িশা থেকে বহু মানুষ আসেন কাঁথির কিশোরনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে। রাজবাড়ির গড় বা ময়দানে নবমীর দিন বসে বিশাল আখের মেলা। ঠাকুর দেখে বাড়ি ফেরার সময় মানুষজন কিনে নিয়ে যান আখ। লক্ষ লক্ষ টাকার আখ বিক্রি হয় এই মেলায়। আজও এখানে পরম্পরা মেনে প্রতিমা কাঁধে চাপিয়েই বিসর্জন হয়। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সামিল হন কাঁথি শহরের শত শত মানুষ।
মন্দির হয়ে ওঠে মিলনক্ষেত্র
রাজকীয়তা বা জৌলুস কমলেও কিশোরনগর রাজবাড়ির পুজো (Durga Puja 2023) ঘিরে মানুষের আগ্রহ কিন্তু কমেনি। কর্মসূত্রে বা বৈবাহিক সূত্রে সারা দেশে বা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা রাজ বাড়ির সদস্যরা মিলিত হন পুজোর দিনগুলিতে। রাজবাড়ির সদস্যরা, তাঁদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনরা সকলে মিলিত হন পুজো উপলক্ষ্যে। কিশোরনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর মন্দির হয়ে ওঠে এক মিলনক্ষেত্র।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours