Navratri 2022: জানুন মাতা কুষ্মান্ডার কাহিনী, আজ মহাচতুর্থীর দিন আরাধিতা হন দেবী

Durga Puja 2022: হাসির দ্বারা তিনি এ জগৎ বা বিশ্বসংসার সৃষ্টি করেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁকেই...
WhatsApp_Image_2022-09-29_at_1216.40
WhatsApp_Image_2022-09-29_at_1216.40

শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: পুরাণে কথিত আছে, হাসির দ্বারা তিনি এ জগৎ বা বিশ্বসংসার সৃষ্টি করেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তাঁকেই জগজ্জননী মানেন ভক্তরা। তিনিই সূর্যের তেজ স্বরূপা। তিনিই আসুরিক শক্তির বিনাশক। নবরাত্রির চতুর্থীতে ভক্তদের দ্বারা আরাধিত হন দেবী কুষ্মান্ডা।  

পুরাণ অনুযায়ী, এ বিশ্ব যখন তৈরি হয়নি, প্রাণের স্পন্দন যখন কোথাও ছিল না, চারিদিকে যখন ঘন অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই ছিল না তখন এক মহাজাগতিক দৈব আলোকরশ্মি ক্রমশ নারী মূর্তির আকার ধারণ করতে থাকে। দৈব ক্ষমতার অধিকারী, জগতের সৃষ্টিকত্রী এই নারী মাতা কুষ্মান্ডা নামে পরিচিত। মহাবিশ্বে প্রাণের উৎস, শক্তির উৎস, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথের সৃষ্টিকর্ত্রী তিনি‌। তিনি সূর্যের কেন্দ্রে অবস্থান করেন। দিন ও রাত্রি তাঁর জন্যই হয়। জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ডের গতি তাঁর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় বলে মনে করেন ভক্তরা।

সৌরমন্ডলকে পরিচালিত করেন দেবী কুষ্মান্ডা। তাঁর মুখমন্ডল সূর্যের মতোই দীপ্তিমান। তেজোদীপ্ত। পণ্ডিতমহলের মতে— 'কু’ শব্দের অর্থ কুৎসিত এবং ‘উষ্মা’ শব্দের অর্থ ‘তাপ’; ‘কুষ্মা’ শব্দের অর্থ তাই দুঃখ–দেবী জগতের সমস্ত দুঃখ এবং কষ্ট হরণ করে নিজের উদরে ধারণ করেন বলে তাঁর নাম ‘কুষ্মাণ্ডা’ মনে করা হয়। দেবাদিদেব মহাদেব যেমন সমুদ্র মন্থনের সময় সমস্ত বিষ নিজের শরীরে ধারণ করে দেবতাদের রক্ষা করেছিলেন একই ভাবে মাতা কুষ্মান্ডা এ জগতের সকল অশুভ প্রভাব, দুঃখ, কষ্ট, রোগ, যন্ত্রণা, পীড়াকে হরণ করে তাঁর ভক্তদের রক্ষা করেন। 

আরও পড়ুন: আজ নবরাত্রির তৃতীয় দিনে পূজিতা হন মাতা চন্দ্রঘন্টা, জানুন তাঁর পৌরাণিক কাহিনী

ভক্তরা মনে করেন, যখন এ বিশ্বে অসুরদের অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল তখন আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী কুষ্মান্ডা। দেবী সিংহ সওয়ার। তিনি অষ্টভূজা। আটটি হাত সাজানো রয়েছে অস্ত্র তথা অন্যান্য সামগ্রী দ্বারা। চারটি হাতে রয়েছে - চক্র, গদা, তির ও ধনুক। অন্য চারটি হাতে রয়েছে জপমালা, পদ্ম, কলস এবং কমণ্ডলু। দেবীর হাতে অস্ত্র ছাড়াও দুটো পাত্র উল্লেখ করা হয়েছে। একটিতে থাকে অমৃত ও অপরটিতে থাকে রক্ত। অর্থাৎ দেবী কুষ্মান্ডার একহাতে সৃষ্টি ও অপর হাতে ধ্বংস। দেবীর বাহন সিংহকে ধর্মের প্রতীক বলে মনে করা হয়। ধর্মের স্থাপন এবং ধর্মকে বহন করে মাতা কুষ্মান্ডার সিংহ। 

মাতা কুষ্মান্ডার সামনে কুমড়ো বলির প্রথা চালু আছে। দেবী কুষ্মান্ডার ভক্তরা মায়ের উদ্দেশ্যে শ্রিংগার সামগ্রী নিবেদন বা অর্পণ করে থাকেন। যেমন - সিঁদুর, কাজল, চুড়ি, বিন্দি, পায়ের আংটি, চিরুনি, আয়না, পায়ের পাতা, সুগন্ধি, কানের দুল, নাকের পিন, গলার মালা, লাল চুনরি ইত্যাদি। ভক্তদের বিশ্বাস মাতা কুষ্মান্ডাকে মালপোয়া, দই থেকে তৈরি যে কোনও পদ এবং হালুয়া নৈবেদ্য তে ভক্তি পূর্বক অর্পণ করলে মাতা প্রসন্ন হন। তিনি তাঁর ভক্তদের জীবনকে সুখী, শান্তি, সমৃদ্ধি, যশ, আয়ু দ্বারা পরিপূর্ণ করে তোলেন। ভক্তদের ব্রহ্ম জ্ঞানও তিনিই দান করেন।

আরও পড়ুন: নবরাত্রি কেন পালন করা হয়? এর তাৎপর্য জানেন?

"সুরসম্পূর্ণকলশম্ রুধিরালুপ্তমেব চ দধানা হস্তপদ্মভ্যাম কুষ্মাণ্ড শুভদস্তুমে"- এই বৈদিক মন্ত্রের দ্বারাই আরাধনা করা হয় মাতা কুষ্মান্ডাকে ।

উত্তরপ্রদেশের কাশীতে মাতা কুষ্মান্ডার মন্দির খুব বিখ্যাত। ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দিরে অষ্টভূজা মাতা কুষ্মান্ডা স্বয়ং অবস্থান করেন এবং জগতের কল্যাণে রোগ, ভয়, দুঃখ হরণ করে ভক্তদের সুখ, আয়ু, যশ প্রদান করেন। কাশীর এই অঞ্চলে মাতা কুষ্মান্ডা মা দুর্গা নামেই অধিক পরিচিত। লোককথা অনুযায়ী, তিনি কাশীর দক্ষিণ দিককে রক্ষা করে চলেছেন। কাশীর অসি নদীর সঙ্গম স্থলে রয়েছে মাতা কুষ্মান্ডার অধিষ্ঠান। দেবী কুষ্মান্ডার এই মন্দির বেশ বড়ো এবং বহুচূড়া বিশিষ্ট‌। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে মাতা কুষ্মান্ডা অবস্থান করেন। নবরাত্রির চতুর্থীর দিনে ভক্তদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায় এখানে।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles