West Bengal Dengue: বেসরকারি পরীক্ষাগারে গেলেই ধরা পড়ছে ডেঙ্গি! আর সরকারি কেন্দ্রে?

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা একশো ছুঁতে চললো, তারপরেও ডেঙ্গি রোধে সরকারের সক্রিয় ও স্বচ্ছ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
dengue
dengue

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দিন কয়েক আগে কসবার বাসিন্দা রাজীব বসু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করেন। সরকারি পরীক্ষাগার থেকে রক্ত পরীক্ষা করান। ডেঙ্গি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কয়েক দিন পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফের চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা হয়। বেসরকারি পরীক্ষাগার থেকে রক্ত পরীক্ষা করালে রিপোর্ট আসে পজিটিভ। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসক জানান প্রথম রিপোর্ট ভুল হওয়ায় ডেঙ্গি চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে গিয়েছে। তার জন্যই শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

গিরিশ পার্কের বাসিন্দা বছর ২৬-র পৌষালী মিত্রের তিন দিন জ্বর থাকার পরে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তার ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছিল। কিন্তু তারপরেও জ্বর কমছিল না। পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয়, যে এরপরে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। তখন রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যায় পৌষালী ডেঙ্গি আক্রান্ত। প্লেটলেট তখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়, চিকিৎসকেরা তাঁদের জানান, ডেঙ্গি চিকিৎসায় অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। রিপোর্ট প্রথমে ঠিকমতো পাওয়া গেলে হয়তো ভোগান্তি কম হতো।

দ্রুত রোগ নির্নয় জরুরি

ডেঙ্গি চিকিৎসায় দ্রুত রোগ নির্ণয় জরুরি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যেহেতু ডেঙ্গি চিকিৎসার কোনও টিকা নেই, কোনও বিশেষ ওষুধ নেই, মূলত নজরদারির মাধ্যমে ডেঙ্গি চিকিৎসা করে রোগীকে সুস্থ করা হয়, তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় জরুরি। তাহলে প্রথম থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্লেটলেট গণনা করে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখলে, রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটার আগেই তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু রাজীব বাবু বা পৌষালীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা অনেকটা দেরিতে শুরু হয়েছে। কারণ, রিপোর্ট বিভ্রাট।

রাজীববাবু কিংবা পৌষালীর অবস্থা কোনও ব্যতিক্রম নয়। ডেঙ্গি রিপোর্ট নিয়ে একাধিক জায়গায় বিভ্রাটের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের একাংশ জানাচ্ছেন, টানা তিন দিন জ্বর থাকলে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কিন্তু অনেক সময়েই রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে। জ্বর কমছে না। বমি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসক ফের রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। তখন বেসরকারি পরীক্ষাগার থেকে রিপোর্ট করালে অনেকেরই সেই ডেঙ্গি রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। 

আরও পড়ুন: টেট চাকরিপ্রার্থীকে কামড়-কাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা

চিকিৎসকদের মত

রাজ্যের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি রিপোর্ট নিয়ে বিভ্রান্তির একাধিক ঘটনা ঘটছে। মূলত কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই অভিযোগ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এক চিকিৎসক বলেন, "ডেঙ্গির মতো সংক্রামক রোগে মানুষ প্রথমে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভরসা করে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে মানুষের ভরসা মর্যাদা পাচ্ছে না। সরকার চাইছে যে ভাবে হোক ডেঙ্গি সংক্রমণের গ্রাফ কম দেখাতে। এটা যে কত বড় ক্ষতি হচ্ছে, সেটা এখনও  প্রশাসনের বোধগম্য হচ্ছে না।"

ডেঙ্গি চিকিৎসা সময় মতো শুরু না করলে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই রিপোর্ট সময় মতো পাওয়া জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গি সংক্রমণ হয়েছে কিনা সেটা সময় মতো না জানতে পারলে, শুধু রোগীর চিকিৎসায় দেরি হবে তাই না, আক্রান্তের থেকে অন্যদের মধ্যেও ডেঙ্গি সংক্রমিত হতে পারে। তাই বিপদ কমাতে ডেঙ্গি পরীক্ষা নির্ভুল হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলেই মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তবে, ডেঙ্গিই শুধু নয়। ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও এই রিপোর্ট বিভ্রাট হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়ার রিপোর্টও সরকারি পরীক্ষাগার থেকে করানোর পরে বেসরকারি পরীক্ষাগারে দ্বিতীয়বার করলেই দেখা যাচ্ছে নেগেটিভ রিপোর্ট পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। তাই ডেঙ্গির মতোই মশাবাহিত আরেকটি সংক্রামক রোগ বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সরকারের তথ্য গোপনের প্রবণতার জেরেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। তারপরেও সরকারের হুঁশ ফিরছে না। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা একশো ছুঁতে চললো কিন্তু তারপরেও সরকারের ডেঙ্গি রোধে সক্রিয় ও স্বচ্ছ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles