মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ। আর সেই কলেজে অতিথি শিক্ষকের ক্লাস পিছু পারিশ্রমিক শুনলে চমকে উঠবেন। এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন নাথালিয়ান মুর্মু কলেজে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। অতিথি শিক্ষকের বেতন ১০০ টাকা প্রতি ক্লাস! সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৫টি ক্লাস করা যাবে। দেওয়া হবে না যাতায়াত ও বাড়তি কোনও খরচ। নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতেই একথার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এনিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল, এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
কলেজে কতজন গেস্ট লেকচারার নিয়োগ করা হবে?
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর তপনে এই কলেজ স্থাপিত হয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা-১৮০০ জন। এ বছরও ৫৮০ জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন এ কলেজে। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এই কলেজে যত সংখ্যক পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক আছেন তা যথেষ্ট নয়। তাই গেস্ট লেকচারার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ৬ জন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। ২ জন বাংলা, ২ জন এডুকেশন, ১ জন রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ১ জন দর্শনের অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ হবে। আগামী ২০ তারিখ ইন্টারভিউ। তার আগেই এই বিতর্ক দানা বেধেছে। বালুরঘাটের নেট পাশ যুবক অসীম বর্মন এ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে বলেন, 'একজন শিক্ষকের মাইনে ক্লাস প্রতি ১০০ টাকা? আবার বলছেন ১৫টির বেশি ক্লাস দেবেন না। সে হিসাবে মাসে তো ৭ হাজার টাকা হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে পড়াশোনার কোনও দামই নেই।'
কলেজ কর্তৃপক্ষের কী বক্তব্য?
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রণয় নারাজিনারি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি অমলকুমার রায়ের বক্তব্য, কলেজে অধ্যাপকের সংখ্যা খুবই কম। অথচ ক্লাসের চাপ বাড়ছে। তাই গেস্ট টিচার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পদের জন্য ক্লাস প্রতি ১০০ টাকা খুবই কম মানছেন তিনি। তবে, একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের ফান্ড থেকে এই বেতন দিতে হবে। আমাদের কলেজের অত সামর্থ্য নেই। বাধ্য হয়েই এই পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে।
কী বললেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, কলেজে ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষকের অভাব থাকায় কলেজের পরিচালন সমিতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেকেই বেকার রয়েছেন যাঁরা স্কুল বা কলেজে পড়াতে ইচ্ছুক। তাঁরা এখানে শিক্ষকতা করতে পারবেন। তারজন্য সামান্য কিছু সাম্মানিক দেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে অনেকেরই উপকার হবে। অনেকেই তো বিনা পয়সায় নানা জায়গায় পড়ান। সেক্ষেত্রে কলেজের যা সামর্থ্য, তাই দিচ্ছে। এতে বিতর্ক হওয়ার কিছু নেই।
কী বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি?
এই বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ গেস্ট লেকচারার নিয়োগ করছে। তাকে ১০০ দিনের কাজের চেয়ে কম টাকা দেওয়া হচ্ছে, এর থেকে লজ্জার কি আছে? মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী এসব দেখতে পাননা। তারা বিদেশে হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন। বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল, এটাতেই স্পষ্ট।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours