মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ (Cyclone Dana) ল্যান্ডফল করার পর শুক্রবার সকাল থেকে বেলা যত বেড়েছে, তত বেড়েছে বৃষ্টির পরিমাণ। এমন ভারী বৃষ্টি হয়েছে যে মাঠে মাঠে হাঁটু সমান জল জমে গিয়েছে। পচন ধরেছে সবজিতে। দু'দিন আগেও গোটা মাঠ জুড়ে থাকা ফুলকপি, লঙ্কা, টম্যাটো, ক্যাপসিক্যামের গাছ সবই জলের তলায়। ভাসছে সবজির পাতা, গাছ। মাথায় হাত কৃষকদের। সকলের গলাতেই হতাশার সুর।
জলের তলায় সবজি ভাণ্ডার! (Cyclone Dana)
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ও ক্যানিংকে সবজির ভাণ্ডার বলা হয়। এবার সেই সবজি খেত জলের তলায়। ভাঙড়-সহ ক্যানিংয়ে একাধিক অঞ্চলে সবজি ও ধান চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি (Cyclone Dana) হয়েছে। ভাঙড়ের ভগবানপুর অঞ্চল চালতেবাড়ি অঞ্চল শানপুকুর অঞ্চল, ভোগালী অঞ্চল, ডাবু, সাতমুখী, গোলাবাড়ি-সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার লঙ্কা, সিম, কাঁকরোল, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পটল, পালং-সহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান চাষিরা। বাদ যায়নি দুধের সর ধানও। ধান ক্ষেতে হাঁটু সমান জলের উপর সুয়ে আছে। শীতকালের কথা ভেবে ভাঙড়ের দুটি ব্লকের ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যারা রবি শষ্যের চাষ করেছিলেন তাঁদের মাথাতেও হাত। চাষিদের দাবি, ভারী বর্ষনে মাঠ ভরা উচ্ছে, পটল, লঙ্কা, ফুলকপি, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, টম্যাটো, ক্যাপসিক্যামের গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটানা বৃষ্টিতে শাক জাতীয় সবজি যেমন পালং, লেটুসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের আশঙ্কা, এখন বৃষ্টি থামলেও কালীপুজোর (Kali Puja) সময় সবজির দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। উল্টে কমবে জোগান। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ভাঙড়-সহ ক্যানিংয়ের চাষিরা। ভাঙড়-সহ ক্যানিংয়ের এই সবজি কলকাতা-সহ রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যেতেন।
মাঠেই জমা জলে গড়াগড়ি খাচ্ছে ধান
নিউ টাউন লাগোয়া হাতিশালা, কোঁচপুকুর, সাতুলিয়াতে মাচা পদ্ধতিতে লাউ, কুমড়ো, চাল কুমড়ো চাষ হয়। এক টানা বৃষ্টি (Cyclone Dana) এবং ঝোড়ো হাওয়ার কারণে মাচার খুঁটি আলগা হয়ে মাঠেই মুখ থুবড়ে পড়েছে লাউ, কুমড়ো। কাদায় গড়াগড়ি যাচ্ছে গাছের ডালপালা। জমি থেকে গাছ তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন চাষিরা। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মাচা ভেঙে পড়েছে। গাছ, ফল সব পচে যাচ্ছে। এই বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আউশ ধানের। দানা ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগে পাকা ধান তোলা গেলেও কাঁচা ধান তোলা যায়নি। মাঠেই জমা জলে গড়াগড়ি খাচ্ছে সোনার ফসল। ফসল হওয়ার আগেই চাষের জমিতে জল জমে যাওয়ায় সবজি ফলন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। যার ফলে সবজির দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। দ্রুত জল নিকাশের জন্য প্রশাসনের কাছে কংক্রিট ড্রেন করে দেওয়ার অনুরোধ ও জানালেন চাষিরা।
কলকাতার বাজারগুলিতে শুক্রবারের সবজির দাম
এমনিতেই গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগের কারণে, সবজি আনাজের দাম হু-হু করে বেড়েছে। কলকাতার (Cyclone Dana) বাজারে শুক্রবার, কেজি প্রতি জ্যোতি আলুর দাম ৩০-৩২ টাকা, চন্দ্রমুখী আলুর দাম ৫০-৫৫ টাকা, পটল ১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০-৭০ টাকা পিস, টম্যাটো ১০০-১২০ টাকা, বেগুন ৯০-১১০ টাকা, বাঁধাকপি ৪৫-৫৫ টাকা, কচু ৪৫-৫৫ টাকা, কুমড়ো ২৫-৩৫ টাকা, গাজর ৮০-১১০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা, রসুন এবং লঙ্কার দামও বাড়ছে। আদা ১২০-২০০ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১৫০-২২০ টাকা, রসুন ৩৫০-৪২০ টাকা, এবং ধনেপাতা ২৮০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফলের বাজারও চড়া
ফলের বাজারও ছিল বেশ চড়া। আপেল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজিতে ২০০ টাকায়, বেদানা ২৫০-৩০০, নাশপাতি ১৫০-২০০, পেয়ারা ও শশা ৬০-৮০। শাঁখ আলু ১০০ টাকা, পানিফল ৬০-৮০, বাতাবি লেবু ২৫-৩০ টাকা কেজিতে। প্রতি পিস নারকেলের দাম ৫০-৬০ টাকা, আনারসের ১০০ টাকা। বড় আকারের আখের দাম ২০-২৫ টাকা, কাঁঠালি কলা ৬০-১০০ টাকা ডজন। ধানের শিষ ১০-২০ টাকা পিস। শিস ডাব ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এর ওপর দানা-র ঘায়ে সবজি নষ্ট হওয়ায়, কালীপুজোর আগে বাজার আরও চড়া হওয়ার আশঙ্কা করছে সকলে। ফলে, আম বাঙালির মাথায় হাত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours