মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটিকে বাংলাদেশের (Bangladesh Protest) সকলেই চেনেন। কারণ, বহু ইতিহাসের সাক্ষী দেশের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) এই বাসভবন। আন্দোলনকারীদের লাগাতার আন্দোলনে পিছু হঠলেন হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। বোনকে নিয়ে দেশত্যাগ করলেন। আর তারপরই তাঁদর পৈত্রিক বাসভবনে চলল তান্ডব।
ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হল মুজিবের স্মৃতি বিজড়িত ভবন! (Bangladesh Protest)
ধানমন্ডির (Bangladesh Protest) বাড়ির সিঁড়ির মাঝ বরাবর রাখা ছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের বুলেটবিদ্ধ দেহের সাদা-কালো ছবি। পাঁচ দশক আগে বাংলাদেশে রক্তাক্ত পালাবদলের সময় ওখানেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিব-কন্যা হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সেই বাড়িটিকে পরিণত করেছিলেন সংগ্রহশালায়। সোমবার তাঁর সরকারের পতনের পরেই উন্মত্ত জনতা ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিল মুজিবের স্মৃতি বিজড়িত সেই ভবনটি।
আরও পড়ুন: পরপর মন্দিরে হামলা, নেতাকে হত্যা! বাংলাদেশে ফের টার্গেট হিন্দুরা
গণভবন থেকে আসবাবপত্র নিয়ে চলে যান উন্মত্ত জনতা!
সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঢাকার বাসভবন, গণভবন (Bangladesh Protest) ছেড়ে 'নিরাপদ আশ্রয়ের' উদ্দেশ্যে রওনা হন হাসিনা এবং তাঁর বোন। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গণভবনে চড়াও হন কয়েক হাজার মানুষ। চলতে থাকে যথেচ্ছ লুটপাট। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম 'প্রথম আলো' লিখেছে বহু সাধারণ মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েন। তাঁদের হাতে গণভবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্রও দেখা যায়। গণভবনের ভিতর থেকে ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে নানা আসবাব সামগ্রী নিয়ে বেরিয়ে আসার ছবি, ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেই রকমই একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করেন বাংলাদেশের এক ছাত্র আন্দোলনকারী। ভিডিও বিবরণে লেখা 'হাসিনার রুমে'। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাথায় বাংলাদেশের পতাকার ফেট্টি বাঁধা এক তরুণ জুতো পায়ে উঠে পড়েছেন একটি পরিপাটি নীল চাদরে মোড়া বিছানায়। পায়ের ওপর পা তুলে বিছানায় শুয়ে তিনি চিৎকার করে জানাচ্ছেন, তাঁরা গণভবনের দখল নিয়েছেন।
মাংসের হাড় চিবোচ্ছেন আন্দোলনকারীরা!
একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গণভবনের (Bangladesh Protest) পাকশালে রান্না করা খাবারে দেদার ভোজ সারছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ (সেই ভিডিও সত্যতা যাচাই করেনি মাধ্যম)। তবে সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশের অনেকেই ওই ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, আন্দোলনকারীরা গণভবনের রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছেন। সোমবার হাসিনার পদত্যাগের খবর আসে অকস্মাৎই। তাঁকে যে বাড়ি ছাড়তে হতে পারে, সে খবর সম্ভবত জানা ছিল না গণভবনের রান্নাঘরের দায়িত্বে যিনি বা যাঁরা থাকেন তাঁদেরও। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে থরে থরে সাজানো রয়েছে ভাত, ডাল, মাংসের পাশাপাশি নানা পদ। ভিডিওতে দেখা যায়, সেই খাবারে হামলে পড়েছেন কিছু তরুণ। তারিয়ে তারিয়ে মাংসের হাড় চিবোচ্ছেন তাঁরা।
<
Scenes inside Prime Minister's Residence (Ganabhaban):
— Amit Thakur 🇮🇳 (@Amit_Thakur_BJP) August 5, 2024
- Protesters are looting
- Eating & drinking
- Laying at Sheikh Hasina's bedroom
- Swimming at PM office pic.twitter.com/AJ1DbFEjxf
p>
ধানমন্ডির বাড়িতে দুই মেয়ে বাদে সপরিবারে খুন হন বঙ্গবন্ধু
প্রসঙ্গত, পাকিস্তান সরকার এবং সেনা নিপীড়নের প্রতিবাদে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে আমি প্রস্তুত।" তাঁর সেই বক্তৃতা সূচনা করেছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। যার পরিণামে সে বছরের ডিসেম্বরেই বদলে গিয়েছিল এশিয়ার মানচিত্র। কিন্তু স্বাধীনতার পরে মুজিবের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ভোরে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সরকারি বাসভবনে অভ্যুত্থানকারী সেনাদের গুলিতে নৃংশস ভাবে খুন হয়েছিলেন তিনি। শুধু মুজিব নন, ঢাকা শহরের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ফজিলা তুন্নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালও নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিবের দুই কন্যা, হাসিনা এবং রেহানা। ঘটনাচক্রে, সোমবার তাঁরা দু'জন সেনার কপ্টারে ঢাকা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আগুন ছাই হয়ে গেল মুজিবের স্মৃতি বিড়জিত ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডের সেই সংগ্রহশালা।
'জয় বাংলা' স্লোগান বদলে হয়েছিল- 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ'!
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেনার সমর্থনে প্রেসিডেন্ট হওয়া খোন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকার বাংলাদেশ বেতারের নাম পাল্টে রেডিও বাংলাদেশ করেছিল। ৭১'-এর মুক্তিযুদ্ধে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া 'জয় বাংলা' স্লোগান বদলে গিয়ে চালু হয়েছিল - 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ'। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী জেল থেকে বেরিয়ে আসে তার পরবর্তী এক বছরের মধ্যেই। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের সমর্থকদের কোণঠাসা করা শুরু হতে থাকে বলে অভিযোগ। সেনাপ্রধানের কুর্সিতে বসে ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমান, হুসেন মহম্মদ এরশাদ এমনকী, অবাধ ভোটে ক্ষমতা দখলকারী খালেদা জিয়ার আমলেও সেই সেই ধারা বজায় থাকার অভিযোগ উঠেছে বারে বারে। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের ভোটে জিতে হাসিনা (Sheikh Hasina) দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সেই ধারা কিছুটা বদলেছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন। এবার হাসিনা বিরোধী আন্দোলেন 'নিষিদ্ধ' জামাতে ইসলামির সক্রিয় অংশগ্রহণ কি আবার ফিরিয়ে আনবে সেই পুরনো স্মৃতি। মুজিবের মূর্তি ভাঙা এবং ধানমন্ডির সংগ্রহশালায় অগ্নিসংযোগ 'ইঙ্গিতবাহী' বলেই মনে করছেন তাঁরা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours