মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ব্যাপক ও তীব্র ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী বিক্ষোভের জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ (Bangladesh)। সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন বিশ্ববাসী। ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল। গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি এলাকায় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আর সেই ঘটনা কভার করতে গিয়ে ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদি হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। একই দিনে পুলিশের গুলিতে আহত হন একাত্তর টিভির প্রতিবেদক নাদিয়া শারমিন। সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে বিশেষ করে জুলাই মাসে মিডিয়ার ওপর আক্রমণ বেড়ে যায়।
আটজন সাংবাদিক নিহত, শতাধিক জখম (Bangladesh)
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের বিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল। হাসিনা অবশেষে ভারতে চলে আসেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এবছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এ পর্যন্ত আটজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। শতাধিক আহত হয়েছেন। গত এক দশকের মধ্যে এটা সর্বোচ্চ সংখ্যা। ওপার বাংলার এক সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘‘দেশব্যাপী (Bangladesh) উত্তাল অবস্থার মধ্যে পড়ে আমি জখম হয়েছিলাম। আর এটা ছিল আমার অভিজ্ঞতার সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা। খবর পেয়ে আমি ছুটে গিয়েছিলাম। আমার মতো অন্যান্য মিডিয়া হাউসের সাংবাদিকরা গিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছিলাম, আমার আশেপাশের সব জায়গায় মানুষকে গুলি করছিল। আমি যদিও নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেই নিউজ কভার করতে গিয়েছিলাম। আর ওই সেফটি গিয়ারের কারণে আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেহেদি কোনও নিরাপত্তার কোনও কিছু না নিয়ে এই হিংসাত্মক প্রতিবাদ কভার করছিল। তাঁর মিডিয়া হাউস থেকে বুলেট-প্রুফ ভেস্ট এবং একটি হেলমেট পেলে হয়তো তিনি বেঁচে থাকতেন।’’ শারমিন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অনেক মিডিয়া আউটলেট সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি, যদিও তাঁরা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কাজ করছেন।’’
আরও পড়ুন: প্ররোচনা দিয়ে করা হয়েছিল খ্রিস্টান, ফের সনাতন ধর্মে ফিরলেন প্রায় ১৫০ হিন্দু
উদ্বেগ প্রকাশ করলেন এক সাংবাদিক
ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ নামে এক সাংবাদিক গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন টেলিভিশন স্টেশনের জন্য কাজ করেছেন। তিনিও একই রকম মতামত শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের প্রায়ই প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় (Bangladesh) পাঠানো হয়। এছাড়াও, অনেক সাংবাদিকের এই ধরনের ঘটনাগুলির প্রতিবেদন করার সময় কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয় সে সম্পর্কে প্রাথমিক নিরাপত্তা জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আর এই অভাব তাদের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। ফলে, অনেককেই প্রাণ হারাতে হয়েছে। জখমও হয়েছেন বহুজন।’’
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একটি প্রধান উদ্বেগ
বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশ বর্তমানে ১৮০-এর মধ্যে ১৬৫ নম্বরে রয়েছে, যা দেশের সর্বনিম্ন র্যাঙ্কিং। আর নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কোনও উন্নতি তো হইয়নি, উল্টে অবনতি হয়েছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের (Bangladesh) দমন-পীড়নে সহায়তা করার অভিযোগে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অনেক আইনি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন যে মামলাগুলি প্রমাণ ভিত্তিক নয় এবং এটি একটি খারাপ নজির স্থাপন করতে পারে।
১৬৭ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডও বাতিল
হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সেদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশের (Bangladesh) সরকারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তিন দফায় বাংলাদেশের ১৬৭ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডও বাতিল করেছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার, এমনটাই অভিযোগ। এনিয়ে আমেরকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘‘আমরা চাই সব সাংবাদিকের স্বাধীনতা ও অধিকারকে যথাযথভাবে সম্মান দেখানো হোক।’’ যদিও অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য বলেছে যে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকারের (Interim Government) প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, ‘‘হাসিনা বিরোধী অস্থিরতার সময় যারা নিহত হয়েছেন তাদের বিষয়ে প্রশাসন তদন্ত করছে। আর তিনি সাংবাদিকদের সুরক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, মিডিয়া সংস্থাগুলিকে অবশ্যই সাংবাদিকদের সুরক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে যখন সংঘাতের পরিবেশে প্রতিবেদন করা হয়। সংস্থার এই বিষয়ে দেখার দায়িত্ব।’’ তবে, সরকারের কোনও ভূমিকার বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কোনও কিছু বলেননি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours