মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতে পতিতাবৃত্তিকে (Prostitution) পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা বা যৌনকর্মীদের (sex workers) আইনি সুরক্ষা প্রদান করার লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme court)। সবকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশকে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, সাবালক ও স্বেচ্ছায় আসা যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে অযথা হেনস্থা ও ফৌজদারি পদক্ষেপ গ্রহণ যেন না করা হয়। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, পেশা যাই হোক, যৌনকর্মীদের সমমর্যাদা ও সমান অধিকার প্রাপ্য। ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।
শীর্ষ আদালতে একটি আবেদনের শুনানি চলছিল যেখানে বলা হয়েছিল, কোভিড-১৯ (covid-19) অতিমারীর কারণে যৌনকর্মীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেই মামলার শুনানিতে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য গঠিত একটি প্যানেলের সুপারিশের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ।
বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের (L Nageswara Rao) নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই সংক্রান্ত ছ’টি নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, যৌনকর্মীরা আইনের সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। ফৌজদারি আইন অবশ্যই বয়স এবং সম্মতির ভিত্তিতে সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। যখন এটা স্পষ্ট যে যৌনকর্মী একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এবং সম্মতিতে যৌনকর্মে অংশ নিচ্ছেন, পুলিশকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা বা কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এটা বলার দরকার নেই যে, পেশা যাই হোক না কেন, সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে (Article 21) এদেশের প্রতিটি ব্যক্তির একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার রয়েছে।
আরও পড়ুন: ক্ষমতার অপব্যবহার! দিল্লি থেকে আই এএস অফিসারকে বদলি লাদাখে, স্ত্রীকে পাঠানো হল অরুণাচল
আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, অনৈতিক ট্র্যাফিক (প্রতিরোধ) আইন, ১৯৫৬-এর অধীনে কর্তব্যরত কর্তৃপক্ষেকে মনে রাখাতে হবে যে, সাংবিধানিক সুরক্ষা এই দেশের সমস্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। আদালতের মতে, কোনও যৌনকর্মী যদি যৌন নিপীড়নের শিকার হন, তাঁকে আইন অনুযায়ী দ্রুত শারীরিক পরীক্ষা করে তদন্ত শুরু করতে হবে। যৌনকর্মীদের চিকিৎসা সহায়তা সহ সবধরনের পরিষেবা প্রদান করতে হবে, যা একজন যৌন নিপীড়িতাকে আইন অনুযায়ী দেওয়া প্রয়োজন।
আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে যে কোনও পতিতালয়ে অভিযানের সময় যৌনকর্মীদের "গ্রেফতার করা বা শাস্তি দেওয়া বা হয়রানির শিকার হওয়া" উচিত নয় কারণ "স্বেচ্ছায় যৌনকর্ম বেআইনি নয় এবং শুধুমাত্র পতিতালয় চালানো বেআইনি।" আদালতের মতে, “এটা লক্ষ্য করা গেছে যে যৌনকর্মীদের প্রতি পুলিশের মনোভাব প্রায়শই নৃশংস এবং সহিংস। যেন তাঁরা এমন একটি শ্রেণিভুক্ত, যাঁদের অধিকার স্বীকৃত নয়।
শীর্ষ আদালতের অভিমত, মা যৌনপেশায় আছেন, শুধু সেই যুক্তিতে সন্তানকে তাঁর মায়ের কাছ থেকে সরিয়েও নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি কোনও যৌনকর্মী যদি তাঁর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে যান, তা হলে সেটিও সমান মনোযোগের সঙ্গে দেখতে হবে পুলিশকর্মীদের। পুলিশ এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে যৌনকর্মীদের অধিকারের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া উচিত। সমস্ত মৌলিক মানবাধিকার এবং সংবিধান স্বীকৃত সমস্ত নাগরিকের জন্য রক্ষিত অন্যান্য অধিকার যৌনকর্মীদেরও প্রাপ্য।
পুলিশের উচিত, সকল যৌনকর্মীদের সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা এবং তাঁদের মৌখিক এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা না করা। যৌনকর্মীদের ওপর কখনই হিংসা বা তাঁদের কোনও যৌন কার্যকলাপে বাধ্য করা উচিত নয় বলে জাবনিয়েছে বেঞ্চ।
সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশেও কিছু নির্দেশিকা বজায় রাখতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চের নির্দেশ, কোনও ঘটনা ঘটলে যৌনকর্মীদের পরিচয় যেন প্রকাশ্যে না আসে, সে ব্যাপারে গণমাধ্যম, সংবাদপত্রকে সতর্ক থাকতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট এই সুপারিশগুলোর ব্যাপারে কেন্দ্রের মতামতও জানতে চেয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৭ জুলাই। সে দিন এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের অভিমত শুনবে শীর্ষ আদালত।
+ There are no comments
Add yours