Ancient Indian Scientists: প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিদ সুশ্রুত, পদার্থবিদ কণাদের অজানা গল্পগুলো জানুন

আজকে আমরা প্রাচীন ভারতের দুইজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী (Ancient Indian Scientists) সুশ্রুত এবং মহর্ষি কণাদের জীবনী এবং কাজ সম্পর্কে জানব
susfruta_and_kanad
susfruta_and_kanad

শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: বিগত পর্বে আমরা আলোচনা করেছি প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চা সম্পর্কে। আজকে আমরা প্রাচীন ভারতের দুইজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী (Ancient Indian Scientists) সুশ্রুত এবং মহর্ষি কণাদের জীবনী এবং কাজ সম্পর্কে জানব।

প্রথম পর্ব: সনাতন ধর্মে ঋষি এবং বেদের ভূমিকা জানুন

সুশ্রুত

সুশ্রুত ছিলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসক। বলা ভালো, শল্য চিকিৎসার জনক ছিলেন তিনি। তাঁর রচিত গ্রন্থ "সুশ্রুত সংহিতা" চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি অমূল্য গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রাচীন বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্রে তাঁকে বিশ্বামিত্রের পুত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। আচার্য সুশ্রুত, প্লাস্টিক সার্জারি জনক হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে আজ সমাদৃত।

দ্বিতীয় পর্ব: আলোর গতিবেগ, মহাকর্ষ বল, পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব নির্ণয়ের বিষয়ে বেদে কী বলা আছে জানেন?

সুশ্রুতের চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে অনেক রকমের কাহিনী প্রচলিত আছে। সে সব  কাহিনীগুলি সম্পর্কে একটু জানা যাক। কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগেকার কথা, সে সময় বর্তমান ভারতের বারাণসীর কাছাকাছি কোনও একটি জনপদ ছিল। একদিন মধ্যরাত্রে এক চিকিৎসকের দরজায় হঠাৎ এক আগুন্তক উপস্থিত হল। জোরে জোরে দরজার কড়া নাড়ছেন আর চিকিৎসককে ডাকছেন। দরজা খুলতেই ওই আগুন্তক চিকিৎসকের পায়ের উপরে এসে পড়ল এবং কাঁদতে থাকল। চিকিৎসক লক্ষ্য করলেন আগুন্তকের নাক কাটা গেছে এবং ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে।
আচার্য সুশ্রুত তাকে অভয় বাণী দিলেন যে সব ঠিক হয়ে যাবে। শান্ত হয়ে বসো। এরপর ওই ব্যক্তিকে মাদুরের উপর বসালেন চিকিৎসক। জল ও ভেষজ নির্যাস দিয়ে তার মুখ পরিষ্কার করলেন। তারপর কিছুটা মদ্যপান করালেন রোগীটিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে রোগী ঝিমিয়ে পড়ল। এবার একটি লতা থেকে বড় মাপের একটি পাতা ছিড়ে নিয়ে নাকের উপর বসিয়ে, নাকের মাপ অনুযায়ী পাতাটি চারপাশ থেকে কেটে নিলেন, এরপর রোগীর গাল থেকে ঠিক পাতার মাপের কিছুটা মাংস আগুনে পুড়িয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে সেটি তার বিকৃত নাকের উপর বসিয়ে নাকের মতো করে মুড়ে দিলেন এবং নিখুঁত সেলাই করে জুড়ে দিলেন সেই নতুন নাক। তার আগে অবশ্য দুটো সরু নল নাকের অস্থায়ী ছিদ্র হিসেবে স্থাপন করেছিলেন সুশ্রুত। গালে যে অংশ থেকে মাংস কেটে নেওয়া হয়েছিল সেখানে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছিল তার আগেই। এরপর রোগীটিকে কিছু ওষুধ পত্র দিয়ে সেগুলি নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিলেন। এমন অজস্র কাহিনী প্রচলিত রয়েছে প্রাচীন ভারতীয় এই শল্যচিকিৎসক সম্পর্কে।
আনুমানিকভাবে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আচার্য সুশ্রুত। শোনা যায় বিশ্বামিত্র মুনির বংশধর ছিলেন তিনি। কথিত আছে, বারাণসীতে দেবদাস ধন্বন্তরির কাছে চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিলেন সুশ্রুত। পরে শল্যবিদ্যার পাশাপাশি চিকিৎসার অন্যান্য শাখাতেও তিনি সমান দক্ষতা অর্জন করেন। শল্যবিদ্যার প্রথাগত পদ্ধতির উদ্ভাবক এবং ব্যাখ্যাকার ছিলেন আচার্য সুশ্রুত। সংস্কৃত ভাষায় তাঁর লেখা সুশ্রুত সংহিতা চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এই গ্রন্থে তিনি শল্য চিকিৎসার জন্য ১২ রকমের যন্ত্রপাতির কথা বলেছেন। সুশ্রুত সংহিতাতে ১৮৪টি অধ্যায় রয়েছে, এখানে তিনি আলোচনা করেছেন ১১২০টি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে। ৭০০ এর অধিক বিভিন্ন উদ্ভিদের কথা তিনি এই গ্রন্থে বলেছেন যেখান থেকে ওষুধ তৈরি করা যায়, ৬৪ ধরনের খনিজেরও আলোচনা তিনি এই গ্রন্থে করেছেন যা থকে ওষুধ তৈরি হতে পারে। ৫৭ ধরনের প্রাণীজ উৎসের কথা বলেছেন যেখান থেকে ওষুধ তৈরি হতে পারে। সুশ্রুতই ছিলেন প্রথম চিকিৎসক যিনি পেট কেটে সন্তান প্রসব করানোর কথা বলেছেন, অর্থাৎ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার নাম "সিজারিয়ান সেকশন"। মূত্রস্থলীতে জমা পাথর বের করা, দেহের ভেঙে যাওয়া হাড় জুড়ে দেওয়া, চোখের ছানি অপারেশনের বিভিন্ন কাহিনী শোনা যায় সুশ্রুত সম্পর্কে। এখন যেমন রোগীকে অজ্ঞান করে অস্ত্র প্রচার করা হয় তখন তিনি রোগীকে মদ্যপান করাতেন। শিক্ষক হিসেবেও তিনি অনেক গুণী ছিলেন। লাউ, তরমুজ কেটে শিষ্যদের অস্ত্রোপচারের প্রাথমিক পাঠ দিতেন এবং ছুরি কীভাবে ধরতে হয় সেগুলো শেখাতেন। শল্যচিকিৎসা এবং ওষুধপত্র সম্পর্কে  গ্রিক দার্শনিক হিপোক্রিটাসের লেখা শপথ আজও নিতে হয় ডাক্তারি ছাত্রদের। সুশ্রুত তারও প্রায় দেড়শ বছর আগে তাঁর শিষ্যদের জন্য এমন শপথ চালু করেন।

তৃতীয় পর্ব: প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চা 


মহর্ষি কণাদ

সপ্তম শ্রেণীতেই পড়ানো হয় পরমাণুর গঠন সংক্রান্ত অধ্যায়। ডালটনের তাঁর পরমাণুবাদে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার আগে ভারতীয় ঋষি কনাদ পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যান। কনাদ ভারতীয় দার্শনিক (Ancient Indian Scientists) ছিলেন বলে মনে করা হয় এবং খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৬০০ বছর আগে তিনি পরমাণুর ধারণা দেন। তিনি বলেন যে সমস্ত পদার্থই ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা তৈরি। মহর্ষি কণাদ আরও বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন কনভুক, কনভক্ষ, যোগী, উলুক, কাশ্যপ। কথিত আছে দিনের বেলায় গহন অরণ্যে গভীর ধ্যানে তিনি মগ্ন থাকতেন এবং যখন রাত্রিবেলায় সবাই নিদ্রিত থাকতো তখন তিনি খাবারের সন্ধানে বের হতেন এরকম বৃত্তি উলূক বা প্যাঁচারই হয় সাধারণত। তাই অনেকে মনে করেন তাঁর উলূক নামকরণ হয়েছে। মহাভারতের শান্তি পর্বে এরকম একটি কাহিনীর উল্লেখ রয়েছে যদিও সেটি কণাদ সম্পর্কে বলা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়না। শ্লোকটি হল, উলুকঃ পরমো বিপ্র মার্কন্ডেয় মহামুনিঃ।

 আরও কথিত আছে যে কণাদ কঠোর যোগাভ্যাসের ফলে ভগবান শিবের বরপ্রাপ্ত হন। শিব কণাদের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে উলূকের রূপ ধরে তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন এবং ছটি পদার্থের উপদেশ দান করেন, বায়ু পুরাণেও কণাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে বলা হচ্ছে যে কণাদ ছিলেন পরম শৈব। আবার কণাদ এই নাম ন্যায়-কন্দলিতেও উল্লেখ রয়েছে। ক্ষেতে পড়ে থাকা শস্য কণা ভক্ষণ করতেন বলেই তাঁকে কণভূক বা কণভক্ষ বলা হত বলে অনেকে মনে করেন। আবার এটাও মনে করা হয় যে কণাদ কাশ্যপ গোত্রীয় ছিলেন বলে তাঁর দর্শনকে কাশ্যপীয় দর্শন বলা হয়। কণাদের দর্শন বৈশেষিক দর্শন নামে পরিচিত।

হিন্দু পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী কনাদ ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানী (Ancient Indian Scientists)। তিনি বিশেষ নামক একটি সূক্ষ্ম পদার্থ আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর মতে পদার্থ মূলত ১০ প্রকার। এর মধ্যে ছয়টি ভাব পদার্থ এবং বাকি চারটি অভাব পদার্থ। ছয়টি ভাব পদার্থ হল দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ, সমব্যয়। অভাব পদার্থগুলি হল প্রাগ অভাব, ধ্বংস অভাব, অনন্য অভাব, অত্যন্ত অভাব।পদার্থের পরমাণু সম্পর্কে প্রথম তথ্য ও প্রদান করেছিলেন এই প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক। তাঁর মতে একমাত্র পরমাণু সত্ রূপ নিত্য পদার্থ এবং সমস্ত জড় পদার্থ পরমাণুর সংযোগের ফলে উৎপন্ন হয়েছে।
ভারতীয় ষড়দর্শনের মধ্যে অন্যতম হলো বৈশেষিক দর্শন। এই দর্শনের প্রবক্তা স্বয়ং ভারতীয় দার্শনিক কণাদ। এই দর্শনে উল্লিখিত পদার্থ তত্ত্বের জ্ঞান প্রাচীনকালে যে কোন ছাত্রদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ। 

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles