মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘‘পরীক্ষায় পাস করতে কে না টুকলি করে!’’ পাঠক বিশ্বাস করুন কি না করুন! ঠিক এটাই ছিল উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের বিবৃতি। তাঁর এই মন্তব্যেই প্রতিফলিত হয়, সমাজবাদী পার্টির আমলে রাজ্যের সংস্কৃতি ঠিক কেমন ছিল। উত্তরপ্রদেশে ঠিক এমন অপসংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন একদা মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব (Akhilesh Yadav) ও তাঁর পরিবার।
পরীক্ষায় নকল, এমন সংস্কৃতি পিতার কাছেই শিখেছিলেন অখিলেশ
যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে সমগ্র রাজ্যে পরীক্ষায় টুকলি করা এক প্রকার রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে কোনও বোর্ডের পরীক্ষায় গণ-টোকাটুকির ছবিই ধরা পড়ত। তা ছিল সম্পূর্ণ বৈধ। অখিলেশ যাদব এবং তাঁর পিতা মুলায়ম সিং যাদব প্রকাশ্যেই মন্তব্য করতেন যে পরীক্ষা ব্যবস্থায় টুকলি করা কোনও অপরাধ নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নিজেদের বক্তব্য রাখার সময় প্রকাশ্যেই গণ-টোকাটুকিকে সমর্থন করতেন অখিলেশ। উত্তরপ্রদেশের একদা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এমন সংস্কৃতি তাঁর পিতার কাছ থেকেই শিখেছিলেন। ১৯৯৩ সালে মুলায়ম সিং যাদব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হলে তিনি পূর্ববর্তী বিজেপি সরকারের আনা পরীক্ষায় 'নকল বিরোধী আইন'কে সরিয়ে দেন।
যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) ক্ষমতায় আসার পরেই এমন চিত্র বদলে যেতে শুরু করে
১৯৯৩ সালে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনে মুলায়ম সিং যাদব প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি জিতলে, প্রথম যেটা করবেন সেটা হচ্ছে 'অ্যান্টি কপি ল'কে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দেবেন। তিনি এই কাজটাই করেছিলেন। শপথ নেওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত কার্যকরও করেন। পরীক্ষা ব্যবস্থায় নকলের কথা বলতে তাঁর এতটুকু লজ্জাবোধও হত না। উত্তরপ্রদেশে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের কেউ এর প্রতিবাদও জানাননি। উত্তরপ্রদেশের নাম সারা ভারতেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল সমাজবাদী পার্টির শাসনে। ছাত্রদেরও সারাদেশে নীচু চোখে দেখা হত। কারণ উত্তরপ্রদেশের টুকলি করা ছিল একেবারে বৈধ। এরপরে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পরে উত্তরপ্রদেশের টুকলি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম হন। শুধু তাই নয়, উত্তরপ্রদেশে পরীক্ষায় চিটিং-এর ওপর সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার্থীদের পাশ করানো হত মোটা টাকার বিনিময়ে। সরবরাহ করা হত টুকলি। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পরেই এমন চিত্র বদলে যেতে শুরু করে।
যোগী (Yogi Adityanath) রাজ্যে সব পরীক্ষা কেন্দ্রে বসেছে সিসিটিভি
এমন কিছু জায়গাকে পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বাছা হত সমাজবাদী পার্টির আমলে, যেখানে গণ টোকাটুকি চলত। যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতা আসার পরেই কেন্দ্রগুলিকে চিহ্নিত করেন। সেগুলিকে পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বাতিল বলে ঘোষণা করেন। এর পাশাপাশি পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়। যে সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে কোনও সীমানা ছিল না, সেখানে দেওয়াল দেওয়ার কাজও শুরু হয়। এর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাও ঘটত, সমাজবাদী পার্টির আমলে। যোগী আদিত্যনাথ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তা রোধ করা গিয়েছে।
অখিলেশের ডিগ্রি কেলেঙ্কারী
এর পাশাপাশি যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) সরকার উত্তরপ্রদেশে অভ্যুদয় প্রকল্প এনেছে। যেখানে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের সহজেই আইএএস, আইপিএস, বিসিএস, এনডিএস, নিট এবং জয়েন্ট এন্টাসের মতো পরীক্ষার কোচিং বিনামূল্যে দেওয়া হয়। নিজের ডিগ্রি হিসেবে অখিলেশ বারবার দাবি করতেন যে তিনি নাকি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়নের সময় এগুলোকে তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া থেকে কোর্স সম্পূর্ণ না করেই তিনি ফিরে এসেছিলেন। অন্যদিকে এমনটাই দেখা যায় লালু প্রসাদ যাদবের ক্ষেত্রেও। তাঁর কন্যা মিশা ভারতী টাটা মেডিক্যাল কলেজের মতো একটা বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পান শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা হওয়ার সুবাদে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours