Rashmela 2024: হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ ধর্মের সংমিশ্রণে তৈরি রাসচক্র ঘুরিয়েই শুরু হয় কোচবিহারের রাস উৎসব

Madan Mohan Bari Temple Cooch Behar: ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, আর্থিক-তিন দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ কোচবিহারের মদনমোহনের রাস মেলা
rash-mela-cooch-behar
rash-mela-cooch-behar

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের রাস জগৎ-বিখ্যাত। বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ এই মদনমোহনের পুজো দেখতে হাজির হন। ১৮১২ সাল নাগাদ মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ ভেটাগুড়িতে রাসপূর্ণিমার দিন বিশেষ পুজো করে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেন। সেই উপলক্ষ্যে ভেটাগুড়িতে ১৫ দিন ব্যাপী মেলা বসে। পরবর্তীতে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ বৈরাগিদিঘির পাড়ে মদনমোহন মন্দির গড়ে তুললে সেখানে রাস উৎসব শুরু হয়। পাশাপাশি মন্দিরের পাশের মাঠে বিশাল এলাকা জুড়ে মেলা বসে, যা রাসমেলা বলে পরিচিত।

কোচবিহারে রাস উৎসবের সূচনা

কোচবিহারের রাজ পরিবারের কুলদেবতা মদনমোহন। ১৮৯০ সালে কোচবিহারের তৎকালীন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় কোচবিহারের রাজপ্রাসাদ থেকে মদনমোহন দেবকে নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। তারপর থেকেই এই রাস উৎসবের সূচনা। বংশপরম্পরায় এই রাস উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ রাসচক্র তৈরি করে আসছে আলতাফ মিঞার পরিবার। এবছরও তার অন্যথা হয়নি। আলতাফ মিঞা অসুস্থ হলেও, তাঁর ছেলে এবার ঐতিহ্যবাহী সেই রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন। হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মের সংমিশ্রণে তৈরি এই রাসচক্র, যা ঘুরিয়ে পুণ্য অর্জন করেন অগণিত মানুষ। ১৫  দিনের এই উৎসব উপলক্ষে মদনমোহনবাড়ি চত্বরে বসে মেলা। থাকে যাত্রাপালা, ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান। এছাড়াও কোচবিহারের লোকসংস্কৃতির ছোঁয়া দেখা যায় মদনমোহন মন্দিরের সাংস্কৃতিক মঞ্চে। শুধুমাত্র কোচবিহার জেলা নয়, পার্শ্ববর্তী অসম থেকেও প্রচুর মানুষ ভিড় জমান এই উৎসবে।  

বিপুল ভক্ত সমাগম 

বর্তমান সময়ে এই মেলা জেলা কোচবিহারের পাশাপশি উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন ও বড় মেলা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমে কোচবিহারের মধ্যে। দূর-দূরান্তের মানুষ এই মেলার সময় মদনমোহন বাড়িতে আসেন ঘুরতে। একটা সময় এই মেলার ও মদনমোহনবাড়ি মন্দিরের দায়িত্ব ভার সামলাতেন রাজারা। তবে বর্তমানে এই মেলার ও মদনমোহন বাড়ি মন্দিরের দায়িত্ব পালন করেন দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মকর্তারা। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল ধারা জানান, “মেলা উপলক্ষে বহু ভক্তরা মন্দিরে এসে থাকেন। তাই মন্দিরের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে। এছাড়া মন্দিরের রঙ ও সংস্কারের কাজ করা হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়।” তিনি আরও জানান, “দীর্ঘ প্রাচীন এই মেলাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বড় আবেগের বিষয় রাস মেলার রাসচক্র। প্রাচীন সমস্ত নিয়ম-রীতি পালন করা হচ্ছে প্রথা মেনে।” 

আরও পড়ুন: টাটাকে বাঁচিয়েছিল এই মহিলার হিরে, চেনেন ভারতের প্রথম মহিলা টেনিস অলিম্পিয়ানকে?

মেলা ঘিরে বিশাল আয়োজন

আগে রাজারা রাসচক্র ঘুরিয়ে এর সূচনা করলেও বর্তমানে কোচবিহারের জেলাশাসক এই রাস উৎসবের সূচনা করেন। এখন রাসচক্র ঘুরিয়ে ১৫ দিন ব্যাপী রাস উৎসবের সূচনা করেন জেলাশাসক। আগে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাসমেলা উপলক্ষে মানুষ কোচবিহার আসতেন। সে সময় বিশেষ ট্রেনও চলত। এখনও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আসেন। কোচবিহারের রাসমেলায় গেলে ওপার বাংলার জামদানি শাড়ি থেকে শুরু করে পদ্মার ইলিশ ও খেজুরের গুড় সবই মিলবে। ভারতেরও বিভিন্ন রাজ্য থেকে ব্যবসায়ীরা যোগদান করেন এই মেলায়। প্রায় কয়েক’শ কোটি টাকার কেনাবেচা হয় কোচবিহারের রাসমেলায়। এ বছর রয়েছে আরও চমক। বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল, ভুটান, মালেশিয়া, তাইওয়ান ও ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীরাও যোগদান করে কোচবিহারের রাসমেলায়। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে কোচবিহারের এই রাসমেলার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি আর্থিক দিক থেকেও।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles