মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কিছুটা দূরেই অবস্থান আদ্যাপীঠের (Kali Puja 2024)। এখানে দেবী কালী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে বিরাজ করেন বলে ভক্তদের বিশ্বাস। কথিত আছে, এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শিষ্য শ্রী অন্নদা ঠাকুর। আদ্যাপীঠ মঠের অবস্থান প্রায় ২৭ বিঘা জায়গা জুড়ে। এই পীঠের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে অজস্র অলৌকিক কাহিনিও। দেবী আদ্যার মূর্তি ছাড়াও দেখতে পাওয়া যায় এখানে রাধাকৃষ্ণ এবং শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মূর্তিও। গবেষকরা বলেন, মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদা ঠাকুরের বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তাঁর পৈতৃক নাম অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য। বাংলার ১৩২১ সালে অন্নদা ঠাকুর চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় কবিরাজি পড়তে আসেন। এই সময়ে কলকাতার বর্তমান আমহার্স্ট স্ট্রিটে এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতেন অন্নদাচরণ। সেখান থেকেই কবিরাজি পাশ করেছিলেন বৃত্তি সমেত। তাঁর বন্ধুর বাবার সাহায্যে কবিরাজির চেম্বারও তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়।
স্বপ্নাদেশে কী নির্দেশ পান অন্নদাশঙ্কর
কথিত আছে, এই সময়ে অন্নদা ঠাকুরকে স্বপ্নাদেশ দেন আদ্যা মা (Adyapeath)। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও সেই স্বপ্নাদেশে এসেছিলেন। ওই স্বপ্নাদেশে, শ্রী রামকৃষ্ণ তাঁকে (অন্নদাচরণকে) ইডেন গার্ডেন্সে গিয়ে ঝিলের পাশে নারকেল এবং পাকুর গাছের কাছ থেকে কালী মূর্তি (Kali Puja 2024) নিয়ে আসতে বলেন। ঝিলের পাশ থেকে অন্নদাচরণ ১৮ ইঞ্চি আদ্যা মায়ের কোষ্ঠী পাথরের মূর্তি পান। ঘটনাক্রমে, সেদিন ছিল রামনবমী তিথি। রাতেই দেবী তাঁকে দেখা দিয়ে বলেন, ‘‘অন্নদা কাল বিজয়া দশমী, তুমি আমায় গঙ্গায় বিসর্জন দিও।’’ দেবীর এই কথা শুনে অন্নদা একপ্রকার আঁতকে ওঠেন। তিনি ভাবতে থাকেন, পুজোপাঠ করিনি তাই হয়তো দেবী রাগ করে চলে যাচ্ছেন। তখন দেবী বলেন, ‘‘সহজ সরল প্রাণের ভাষায় যে ভক্ত নিজের ভোগ্য বস্তু আমাকে নিবেদন করেন, সেটাই আমার পুজো। যদি কোনও ভক্ত আমার সামনে আদ্যাস্তোত্র পাঠ করে, তাহলে আমি বিশেষ আনন্দিত হই।’’ এরপরেই দেবী আদ্যাস্তোত্র পাঠ করেন, অন্নদা ঠাকুর তা লিখে রাখেন। স্বপ্নের মধ্যেই বিজয়া দশমীতে আদ্যাদেবীকে (Kali Puja 2024) বিসর্জন দেন অন্নদা। তবে স্বপ্নাদেশে পাওয়া সেই মাতৃমূর্তির ছবি নিজের মনে রেখে দিয়েছিলেন অন্নদা ঠাকুর। পরে তা থেকেই তৈরি হয় বর্তমান মূর্তিটি। বাংলার ১৩২৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাঁকে স্বপ্নেই সন্ন্যাসী দীক্ষা দেন বলে জানা যায়।
আদ্যাপীঠের ভোগ
আদ্যাপীঠে রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে ৩২ সের চালের রান্না হয়। দেবী আদ্যার (Adyapeath) জন্য সাড়ে ১২ সের চাল রান্না হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্য রান্না হয় সাড়ে ১২ সের চাল। সেই ভোগ পঞ্চব্যঞ্জনে নিবেদন করা হয়। এর সঙ্গে থাকে পরমান্ন ভোগ। অন্নদা ঠাকুরের নির্দেশ অনুযায়ী, বড় মন্দিরে ভোগ যায় না। মন্দিরের পাশে ভোগালয়ে তা সাজিয়ে রাখা হয়। সেখানেই নিবেদন করা হয় ভোগ। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, শুধুমাত্র পরমান্ন ভোগই যাবে দেবীর কাছে। আজও সেই রীতি বজায় রয়েছে আদ্যাপীঠে (Kali Puja 2024)। রাতে পরমান্ন ভোগ দেওয়া হয় ঘি এবং উৎকৃষ্ট চাল সহযোগে। বাংলার ১৩৩৫ সালে অন্নদা ঠাকুর পুরীতে প্রয়াত হন বলে জানা যায়। তাঁর ভক্তরা আজও পালন করে চলেছেন অন্নদা ঠাকুরের দেওয়া শিক্ষা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours