মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাউন্ট এভারেস্টের (Mount Everest) উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮.৮৫ কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ এই শৃঙ্গ। এর উচ্চতা ধীরে ধীরে আরও বাড়ছে জানিয়ে চমৎকৃত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে 'নেচার জিওসায়েন্স' জার্নাল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিষয়টি এই উঠে এসেছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই বিশ্বজুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
প্রতি বছর লম্বায় বাড়ছে এভারেস্ট! (Mount Everest)
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক অ্যাডাম স্মিথ, চিনের ইউনিভার্সিটি অফ জিওসায়েন্সের ভূবিজ্ঞানী জিং-জেন দাই এই গবেষণায় যুক্ত। গবেষকদের দাবি, প্রতি বছর মাউন্ট এভারেস্টের (Mount Everest) উচ্চতা যত বৃদ্ধি পায়, তার ১০ শতাংশই ঘটে এই আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ডের জেরে। প্রতি বছর ০.০১-০.০২ ইঞ্চি করে উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে মাউন্ট এভারেস্টের। বর্তমান দিনে ঝোড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টিপাত এবং নদীর জলস্রোতের ধাক্কায় ভূমিক্ষয় ঘটছে এবং সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে উঠে আসছে ভূগর্ভের মাটি, যা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে গত ৫ কোটি বছর ধরেই উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে হিমালয় পর্বতমালার। কিন্তু মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি তার চেয়ে অনেক বেশি বলে উঠে এসেছে নয়া গবেষণায়। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ০.০৮ ইঞ্চি করে উচ্চতা বাড়ছে এভারেস্টের, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেকটাই বেশি। এর জন্য অরুণ নদীকে দায়ী করা হচ্ছে। অরুণ নদীর গতিপথও অদ্ভুত বলে মত গবেষকদের। তাঁদের মতে, সাধারণত গাছের মতো শাখাপ্রশাখা থাকে নদীর। অরুণ নদীটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে এসে হঠাৎই ইংরেজি হরফ এল-এর মতো আকার নিয়েছে। একেবারে ৯০ ডিগ্রি কোণে হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য একটি নদী এসে মেশাতেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন: ইএসআই হাসপাতালে আগুন, ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু ১ রোগীর
এভারেস্ট ছাড়াও অন্য পর্বতশৃঙ্গও বাড়ছে
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, আজ থেকে প্রায় ৮৯ হাজার বছর আগে কোশী নদী মিশে যায় অরুণ নদীর (River) সঙ্গে। সেই থেকে এভারেস্টের (Mount Everest) উচ্চতা ৪৯ থেকে ১৬৪ ফুট বেড়ে গিয়েছে। কোশী নদী এবং অরুণ নদী পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পর ওই অঞ্চলে ব্যাপক ভূমিক্ষয় হয়। প্রচুর পরিমাণ পাথর, মাটি সরে দিয়ে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ওজন কমে যায় ভূত্বকের। ওই শূন্যস্থান পূরণে নীচের অংশের মাটি উপরের দিকে উঠে আসে, ঠিক যেমন মালপত্র সরিয়ে নিলে নৌকা জলের উপরে উঠে আসে। শুধুমাত্র মাউন্ট এভারেস্ট নয়, ৭ লোৎসে, ৭ মাকালু পর্বতশৃঙ্গেরও উচ্চতা লাগাতার বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। মাকালু অরুণ নদীর কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। মাউন্ট এভারেস্টের তুলনায় উচ্চতা সামান্য বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মাউন্ট এভারেস্ট-সহ আশেপাশের সব পর্বতশৃঙ্গেরই উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে।
গবেষকরা কী বললেন?
এই গবেষণার অন্যতম অধ্যাপক লন্ডন কলেজের পড়ুয়া অ্যাডাম স্মিথ বলেন, জিপিএস থেকে জানা গিয়েছে কত দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এভারেস্টের উচ্চতা। ভূমিক্ষয় হওয়ায় আইসোস্ট্যাটিক পদ্ধতিতে উচ্চতা বাড়তেই থাকবে। এই গবেষণা প্রমাণ করছে পৃথিবীতে মাউন্ট এভারেস্টের মতো শৃঙ্গও জিওলজিক্যাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তনশীল। পৃথিবী ক্রমশ পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এটা তার জ্বলন্ত উদাহরণ বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours