Ramakrishna 167: “মৌমাছি, কেবল ফুলের উপর বসে মধুপান করে, বিষয়রসের দিকে যায় না”

Kathamrita: “বন্যে এলে আর বাঁকা নদী দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হয় না”……‘কথামৃত’ থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
Ramakrishna_
Ramakrishna_

শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ২৯শে মার্চ

কর্মেন্দ্রিয়াণি সংযম্য য আস্তে মনসা স্মরন্‌ ৷
ইন্দ্রিয়ার্থান বিমূঢ়াত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে ॥
                                           (গীতা, ৩।৬)

নরেন্দ্র প্রভৃতি নিত্যসিদ্ধ—তাদের ভক্তি আজন্ম 

(অমৃত ও ত্রৈলোক্যের প্রতি)—নরেন্দ্র, রাখাল-টাখাল এই সব ছোকরা, এরা নিত্যসিদ্ধ, এরা জন্মে ঈশ্বরের (Ramakrishna) ভক্ত। অনেকের সাধ্যসাধনা করে একটু ভক্তি হয়, এদের কিন্তু আজন্ম ঈশ্বরে ভালবাসা। যেন পাতাল ফোঁড়া শিব—বসানো শিব নয়।

নিত্যসিদ্ধ একটি থাক আলাদা। সব পাখির ঠোঁট বাঁকা নয়। এরা কখনও সংসারে আসক্ত (Kathamrita) হয় না। যেমন প্রহ্লাদ।

সাধারণ লোক সাধন করে, ঈশ্বরে ভক্তিও করে। আবার সংসারেও আসক্ত হয়, কামিনী-কাঞ্চনে মুগ্ধ হয়। মাছি যেমন ফুলে বসে, সন্দেশে বসে, আবার বিষ্ঠাতেও বসে। (সকলে স্তব্ধ)

নিত্যসিদ্ধ যেমন মৌমাছি, কেবল ফুলের উপর বসে মধুপান করে। নিত্যসিদ্ধ হরিরস পান করে, বিষয়রসের দিকে যায় না।

সাধ্য-সাধনা করে যে ভক্তি, এদের সে ভক্তি নয়। এত জপ, এত ধ্যান করতে হবে, এইরূপ পূজা করতে হবে—এ-সব ‘বিধিবাদীয়’ ভক্তি। যেমন ধান হলে মাঠ পার হতে গেলে আল দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হবে। আবার যেমন সম্মুখের গাঁয়ে যাবে, কিন্তু বাঁকা নদী দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হবে।

রাগভক্তি প্রেমাভক্তি ঈশ্বরে আত্মীয়ের ন্যায় ভালবাসা(Kathamrita), এলে আর কোন বিধিনিয়ম থাকে না। তখন ধানকাটা মাঠ যেমন পার হওয়া। আল দিয়ে যেতে হয় না। সোজা একদিক দিয়ে গেলেই হল।

বন্যে এলে আর বাঁকা নদী দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হয় না। তখন মাঠের উপর এক বাঁশ জল! সোজা নৌকা চালিয়ে দিলেই হল।

“এই রাগভক্তি, অনুরাগ, ভালবাসা না এলে ঈশ্বরলাভ হয় না।”

সমাধিতত্ত্ব—সবিকল্প ও নির্বিকল্প 

অমৃত—মহাশয়! আপনার এই সমাধি অবস্থায় কি বোধ হয়?

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—শুনেছ, কুমুরে পোকা চিন্তা করে আরশুলা কুমুরে পোকা হয়ে যায়, কিরকম জানো? যেমন হাঁড়ির মাছ গঙ্গায় ছেড়ে দিলে হয়।

অমৃত—একটুও কি অহং থাকে না?

শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—হাঁ, আমার প্রায় একটু অহং থাকে। সোনার একটু কণা, সোনার চাপে যত ঘষ না কেন, তবু একটু কণা থেকে যায়। আর যেমন বড় আগুন আর তার একটি ফিনকি। বাহ্যজ্ঞান চলে যায়, কিন্তু প্রায় তিনি একটু  ‘অহং’ রেখে দেন—বিলাসের জন্য! আমি তুমি থাকলে তবে আস্বাদন হয়। কখন কখন সে আমিটুকুও তিনি পুঁছে ফেলেন। এর নাম ‘জড়সমাধি—নির্বিকল্পসমাধি। তখন কি অবস্থা হয় মুখে বলা যায় না। নুনের পুতুল সমুদ্র মাপতে গিছিল, একটু নেমেই গলে গেল। ‘তদাকারকারিত’। তখন কে আর উপরে এসে সংবাদ দেবে, সমুদ্র কত গভীর!

আরও পড়ুনঃ “বিবেক, বৈরাগ্যরূপ হলুদ মাখলে তারা আর তোমাকে ছোঁবে না”

আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?"

আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?"

আরও পড়ুনঃ “পঞ্চবার আঠার ষোল, যুগে যুগে এলাম ভাল...শেষে কচে বারো পড়ে মাগো, পঞ্জা-ছক্কায় বন্দী হলাম”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles