মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সারান্ডা। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও সেরা শাল অরণ্য (Saranda Forest)। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এই সারান্ডা ফরেস্ট, যার মধ্যমণি হল কিরিবুরু আর মেঘাতাবুরু। এখান থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থিত শতাধিক বছরের প্রাচীন 'মুর্গা মহাদেব' মন্দির। স্থানীয় মানুষজন এই মন্দিরকে অত্যন্ত পবিত্র ও জাগ্রত বলে বিশ্বাস করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে মানত করে পুজো দিলে সকল মনোস্কামনা পূরণ হয়।
উৎসবের আবহে সেজে ওঠে এই মন্দির (Saranda Forest)
ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলা ও ওড়িশার প্রায় সীমান্ত অঞ্চল নোয়ামুন্ডি। এই শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় তিন ৪-৫ কিমি দূরে টিসকো টাউনশিপের কাছে মুর্গা পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরটির শিল্পশৈলী অনেকটাই ওড়িশার মন্দিরগুলির শিল্পশৈলীর মতো। মন্দিরের প্রবেশের যে তোড়ণদ্বার রয়েছে, তার শীর্ষদেশে রয়েছে নীলকন্ঠ মহাদেবের নীল রঙের মুখাবয়ব। মূল মন্দিরটির প্রবেশদ্বারের দুই পাশে দুটি সিংহ মূর্তি। মন্দির চত্বরে রয়েছে একটি ষাঁড়ের মূর্তি, যাকে অনেকে নন্দী বলেন। অনেকটাই লাল এবং গেরুয়া রঙের মন্দিরটির অভ্যন্তরে পূজিত হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান মহাদেব। প্রতিদিন এখানে অসংখ্য ভক্ত সমাগম হয় মহাদেবের কাছে পুজো দিয়ে মনোস্কামনা পূর্ণ করার অভিপ্রায় নিয়ে। শিবরাত্রি এবং দুর্গাপুজোর সময় এখানে প্রবল আড়ম্বরে এবং পবিত্রতার সঙ্গে পুজোপাঠের আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় তখন। রীতিমতো উৎসবের আবহে সেজে ওঠে এই মন্দির।
প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়
মন্দিরের কাছেই রয়েছে একটি সুন্দর ছোট্ট ঝর্ণা। অনেকেই এই ঝর্ণাধারায় স্নান করে তারপর পুজো দেন এই মন্দিরে। সবুজের গালিচায় মোড়া পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরের আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ। এই মন্দিরের কাছাকাছি থাকার জায়গা তেমন নেই । সাধারণত পর্যটকরা এই মন্দির ঘুরে নেন খুব কাছের সারান্ডা অরণের কিরিবুরু মেঘাতাবুরু থেকেই। এবার আসা যাক কিরিবুরু মেঘাতাবুরু (Kiriburu and Meghahatuburu) থেকে। প্রকৃতপক্ষে কিরিবুরু আর মেঘাতাবুরু দুটি আলাদা আলাদা পাহাড় চূড়া। একটি পাহাড় থেকে অন্যটিতে পায়ে হেঁটেই ঘুরে আসা যায়। সারান্ডার গভীর অরণ্যের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই কিরিবুরুকে (Saranda Forest) বলা হয় ৭০০ পাহাড়ের দেশ। এখান থেকে নাকি আশেপাশের অঞ্চলের ৭০০টি পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। তাই এই নাম। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০০ ফুটের মতো উচ্চতায় অবস্থিত এই বনাঞ্চল এক সময় ছিল সিংভূমের রাজাদের শিকার করার স্থান। বর্তমানে এই অঞ্চল প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটকদের কাছে এক অত্যন্ত প্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
প্রাণভরে উপভোগ করা যায় অরণ্যের শিহরণ (Saranda Forest)
শাল, মহুয়া, পলাশ, শিমুলের এই অরণ্যে দেখা মেলে বুনো শুকর, বন্য কুকুর, যাদের স্থানীয় ভাষায় বলে ঢোল, হাতি এবং জানা-অজানা হরেক রঙের, হরেক কিসিমের পাখির। এখানে এলে এক যাত্রায় দেখে নেওয়া পুন্ডিল ফলস, সান-সেট পয়েন্ট প্রভৃতি। আর প্রাণভরে উপভোগ করা যায় অরণ্যের শিহরণ। সঙ্গে এই মুর্গা মহাদেব মন্দির দর্শনের পুণ্য তো রইলই। তবে মনে রাখা দরকার, এখানে ঘোরাঘুরির জন্য সর্বদা সঙ্গে গাড়ি রাখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সুবিধার এবং অপেক্ষাকৃত কম খরচ হয় প্যাকেজ ট্যুরে ঘুরে নিলে। সেক্ষেত্রে জঙ্গলে সাফারি, এবং অন্যান্য ঝক্কির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন?
কিরিবুরু থেকে মুর্গা মহাদেব (Saranda Forest) যাওয়ার পথ হবে এই রকম। কিরিবুরু-বড়া জামদা-নোয়ামুন্ডি। আর কিরিবুরু যাওয়ার জন্য প্রথমে আসতে হবে বড়া জামদা। কলকাতা থেকে আসছে হাওড়া-বরবিল জন শতাব্দী এক্সপ্রেস। বড়া জামদা থেকে গাড়ি বা ট্রেকারে সামান্য পথ কিরিবুরু। থাকার জন্য এখানে কিরিবুরুতে আছে সেইল (SAIL )-এর গেস্ট হাউজ। বুকিং-এর জন্য প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ০৯৮৩৬৪৬৮১৭৮ নম্বরে। আর গাড়ি বা প্যাকেজের প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ০৮৯৮১৬১২১০০ নম্বরে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours