ED: জ্যোতিপ্রিয়-ঘনিষ্ঠ বারিক ট্রাকচালক থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক! উল্কার গতিতে উত্থান কোন পথে?

North 24 Parganas: বসিরহাটে বালু ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডি হানা, কে এই আব্দুল বারিক?
ED_(2)
ED_(2)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে আব্দুল বারিক বিশ্বাসের উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) বসিরহাটের সংগ্রামপুরের বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি (ED)। সন্দেশখালি, বনগাঁর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর শতাধিক জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে বারিকের ডেরায় যায় ইডির তদন্তকারী দল। মঙ্গলবার সংগ্রামপুরে বারিকের বাড়ি লাগোয়াই রয়েছে তাঁর চালকল। সেখানেও তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। পাশাপাশি তল্লাশি চালায় তাঁর কারখানা ও নিউটাউনের ফ্ল্যাটে।

কে এই আব্দুল বারিক বিশ্বাস? (ED)

ট্রাক চালক থেকে কোটিপতি! স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারিকের উত্থান অনেকটাই সিনেমার গল্পের মতো। বর্তমানে পেশায় কোটিপতি ব্যবসায়ী বারিক এককালে ছিলেন ট্রাকচালক। সেই সময় গরু পাচারের কাজে ব্যবহৃত হত বসিরহাটের একাধিক 'করিডর'। বসিরহাটের স্বরূপনগর থেকে শুরু করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ে চলত পাচারের কারবার। সূত্রের খবর, ট্রাক চালানোর সুবাদেই পাচারকারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল তাঁর। কোথা থেকে গরু আনা হত, কোথা থেকে সীমান্ত পার করতে হত, বাংলাদেশে কারা সেই গরু কিনতেন, সীমান্তে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হত এই কারবারের সঙ্গে, সে সব তথ্যও জেনে নিয়েছিলেন। এ ভাবেই ধীরে ধীরে নিজের পরিধি বর্ধিত করতে শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর শুরু করেন নিজের 'সাম্রাজ্য' তৈরির প্রস্তুতি। শোনা যায়, এক সময়ে শুধু বসিরহাট বা বনগাঁ এলাকাতেই নয়, গোটা রাজ্যেই সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচারের কারবারে অন্যতম বড় নাম হয়ে ওঠে আব্দুল বারিক।

আরও পড়ুন: টয়োটা ফরচুনার, পাজেরো, জিপ কম্পাস, মারুতি জেন, তৃণমূল ব্লক সভাপতির গ্যারাজ যেন শো-রুম

সোনাপাচারে জেলও খেটেছেন

রেশন দুর্নীতিতে ইডি (ED) হানার আগে সোনা পাচারের অভিযোগ ছিল বারিকের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে প্রচুর সোনা-সহ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল শুল্ক দফতর। কয়েক বছরের জন্য জেলেও গিয়েছিলেন। পরে, অবশ্য জামিনে মুক্তি পান। জেল থেকে মুক্তির পর অবশ্য 'ভাবমূর্তি'-তে কিছুটা বদল আনার চেষ্টা করেন তিনি। পাচারের কারবারের বদলে শুরু করেন একাধিক ব্যবসা। ইট ভাটা, কয়লা, ট্রাকের ব্যবসা শুরু করেন। এমনকী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালু করেন। এরপর ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বারিকের। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে, নেতাদের সঙ্গে দেখা যেতে থাকে তাঁকে। সূত্রের দাবি, সেই সময়েই জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে 'ঘনিষ্ঠতা' তৈরি হয় বারিকের।

বারিককে গুরু মানতেন এনামূল

মুর্শিদাবাদের এনামূল হক জেরায় স্বীকার করেছিলেন, বারিকের হাত ধরেই তিনি গরু পাচার শুরু করেন। গরুর সঙ্গে সোনা পাচারেও হাত পাকানোর অভিযোগ রয়েছে বারিকের নামে। প্রতি ১০ গ্রাম সোনা বাংলাদেশ থেকে সীমান্তের এই পারে এনে দিলেই মুনাফা ৪ হাজার টাকা! সোনা পাচার মামলায় ইডি (ED) গ্রেফতার করেছিল বারিককে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। ২০১৫ সালে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইডি।

জ্যোতিপ্রিয় মদতেই রমরমা বারিকের!

সারদা চিটফান্ড মামলায় বারিকের নাম উঠে আসে। বারিকের মাধ্যমে চিটফান্ডের টাকা পাচার হয়েছে বলে ইঙ্গিত মেলে। ওই সময় বারিক জামিন পাওয়ার পর দীর্ঘদিন লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যান। এরপরই ধীরে ধীরে রাইস মিল থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করেন বারিক। আগাগোড়া জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বারিককে মদত দেন বলে অভিযোগ। ২০২১ সালে ফের বারিকের নাম উঠে আসে সিবিআইয়ের হাত ধরে। গরুপাচার মামলার তদন্তে উঠে আসে বারিকের নাম। এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বারিক বিশ্বাসের দাদা গোলাম উত্তর ২৪ পরগনা (North 24 Parganas) জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে গোলামের স্ত্রী নির্বাচনে জেলা পরিষদের টিকিট পান। গোলামের স্ত্রী সাফিজা বেগম এখনও তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য।

রেশন দুর্নীতির টাকা বিনিয়োগ!

বারিক বিশ্বাস সোনা পাচারে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিন পেয়ে রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে ইটভাটা এবং অ্যাগ্রো প্রোডাক্টের ব্যবসা শুরু করেন। কলকাতা, নিউটাউন, রাজারহাট, বসিরহাট এলাকায় প্রচুর সম্পত্তিও কেনা হয়েছে। ওই কোম্পানিরগুলির আড়ালেই বারিক বেআইনি পাচার ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। রেশন দুর্নীতির টাকাও এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে বিনিয়োগ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে ইডি।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles