মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডাক্তারের একটিমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে, আবার ভুল সিদ্ধান্ত মানুষকে মারতেও পারে। এমনই ধারণা দিয়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞান বা চিকিৎসক মানব সমাজে অপরিহার্য। সেদিক থেকে বিচার করলে একজন ভাল চিকিৎসকের কখনও কাজের অভাব হয় না। তাই কেরিয়ার অপশন হিসেবে ডাক্তারি বহু যুগ থেকেই প্রথম সারিতে পড়ে। এমবিবিএস (ব্যাচেলর অফ মেডিসিন এবং ব্যাচেলর অফ সার্জারি) ডিগ্রির মাধ্যমে, প্রচুর ভাল কেরিয়ারের সুযোগ তৈরি হয়। চিকিৎসক হতে চাইলে সবার আগে এমবিবিএস ডিগ্রি (MBBS) প্রয়োজন। এই ডিগ্রি থাকলে একজন চিকিৎসক যেকোনও দিকে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন।
এমবিবিএস ডিগ্রি কী
ছোটবেলায় চিকিৎসকের সেট নিয়ে খেলার সময় থেকেই মনে মনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে অনেকেই। সেই স্বপ্নকেই বাস্তব করার তাগিদে চলতে থাকে পড়াশোনা। তবে, দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর চিকিৎসকের পেশায় যাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন নিট প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করা। এক কথায় বলা যায় চিকিৎসক হওয়ার প্রথম ধাপ নিট পরীক্ষা। নিট পরীক্ষা দিয়ে ভারতে এমবিবএস পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এমবিবিএস পাঁচ বছরের ডিগ্রি কোর্স। পড়ার শেষে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হয়। তারপর মেলে নিজের কাজ।
কাজের সুযোগ
চিকিৎসা পরিষেবায় কাজ করার স্বপ্ন বহু পড়ুয়াই দেখে থাকেন। সেই কারণে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই তাঁরা ব্যাচেলর অফ মেডিসিন, ব্যাচেলর অফ সার্জারি অর্থাৎ এমবিবিএস ডিগ্রির অধীনে স্নাতকস্তরে পড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ডিগ্রি কোর্সে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর কোন বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার পথে এগোবেন, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলতে থাকে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস
জেনারেল প্র্যাকটিশনার: এমবিবিএস (MBBS) স্নাতকরা সাধারণ চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতে পারেন। মানুষ প্রথমেই অসুস্থ বোধ করলে একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে যান। তারপর তাঁর পরামর্শ মতো বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করান। এমবিবিএস পাশ করে একজন চিকিৎসক সাধারণ যে কোনও রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক: এমবিবিএস স্নাতকরা বিভিন্ন বিশেষায়িত ক্ষেত্র যেমন কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, ডার্মাটোলজি ইত্যাদিতে উচ্চতর শিক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা নির্দিষ্ট শারীরিক সিস্টেম বা চিকিৎসা শাখায় গভীর দক্ষতা অর্জন করেন।
সার্জন: এমবিবিএস স্নাতকরা সার্জারি প্রশিক্ষণ নিয়ে সার্জন হতে পারেন। তারা সাধারণ সার্জারি থেকে শুরু করে অর্থোপেডিক্স, নিউরোসার্জারি, এবং কার্ডিয়াক সার্জারি সহ বিভিন্ন শাখায় কাজ করতে পারেন।
পেডিয়াট্রিশিয়ান: শিশুদের স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষজ্ঞ পেডিয়াট্রিশিয়ান হওয়ার জন্য এমবিবিএস স্নাতকরা প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তারা শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেন।
সরকারি এবং বেসরকারি সেক্টরে সুযোগ
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা: এমবিবিএস (MBBS) স্নাতকরা সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পে চাকরি পেতে পারেন। এ ধরনের চাকরিতে স্থিতিশীলতা এবং সমাজের সেবা করার সুযোগ রয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতাল: বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলিতে এমবিবিএস স্নাতকদের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এই সেক্টরে কেরিয়ারের উন্নতি এবং উচ্চতর আয়ের সুযোগ রয়েছে।
শিক্ষা এবং গবেষণা: মেডিকেল কলেজ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা এবং গবেষণা করতে পারেন এমবিবিএস স্নাতকরা। এই ক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রমে অবদান রাখা এবং নতুন প্রজন্মের চিকিৎসক তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।
প্রশাসনিক কাজ: এমবিবিএস স্নাতকরা স্বাস্থ্য প্রশাসনেও নিজেদের কেরিয়ার গড়তে পারেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিচালনা, নীতি নির্ধারণ এবং প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন: গুজরাট থেকে বাংলা, রাজস্থান থেকে কর্নাটক! জানেন ভারতের পেশা-বৈচিত্র্য
বিকল্প কেরিয়ার
মেডিক্যাল লেখক: এমবিবিএস স্নাতকরা (MBBS) চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়বস্তু নিয়ে লেখালেখির কাজ করতে পারেন। তাঁরা চিকিৎসা জার্নাল, বই এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য বিষয়বস্তু তৈরি করতে পারেন।
মেডিক্যাল কনসালটেন্ট: বিভিন্ন কোম্পানি এবং সংগঠনের জন্য মেডিকেল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন এমবিবিএস স্নাতকরা। তাঁদের চিকিৎসা জ্ঞান কোম্পানির পণ্য উন্নয়ন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নীতি প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে।
পাবলিক হেলথ: পাবলিক হেলথ নিয়েও অনেক সময় এমবিবিএস স্নাতকরা কাজ করেন। তাঁরা জনস্বাস্থ্য নীতি, স্বাস্থ্য প্রচারণা এবং রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিতে কাজ করতে পারেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours