মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সোনার 'খনির শ্রমিক হয়েও কানাকড়ি নাই'! একদা সোনার আঁতুরঘর কর্নাটকের কোলার গোল্ড ফিল্ড (KGF) এখন শূন্য-মরুপ্রায়। যেখানে একদা সোনালি আভা চিকচিক করত সেখানে এখন শুধুই অন্ধকার। সোনার খনির লক্ষাধিক শ্রমিকের ঘরে এখন 'নুন আন্তে পান্তা ফুরোয়'। কাজ নেই, খাবার নেই, জল নেই, জীবনধারণের নূন্যতম পরিষেবা পেতে তাঁদের যেতে হয় ১০০ কিলোমিটার দূরে বেঙ্গালুরুতে। ২০০১ সালে বন্ধ হয়েছিল সোনার খনি। কেটে গিয়েছে দু দশকের বেশি সময়। প্রতিদিন অবহেলাই সঙ্গী হয়েছে কোলারের। ক্ষমতায় এসেই কোলার নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছিল কেন্দ্রের মোদি সরকার। অবশেষে তা বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। কোলারে ফের সোনার খনি চালু করার কেন্দ্রের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে কর্নাটক (Karnataka) সরকার।
কোলারে সোনার খনি নিয়ে প্রস্তাব
সুপারস্টার যশের কেজিএফ (KGF) সিরিজের দুটি ছবি কর্নাটকের কোলারে অবস্থিত সোনার খনির উপর ভিত্তি করে তৈরি। সেখানকার অতীত ও বর্তমানের কিছু অংশ ফুটে উঠেছিল সিনেমায়। বাস্তবের সেই 'সোনার শহর'-কে ভুলতেই বসেছিল মানুষ। এবার তার পুনরুত্থানের স্বপ্ন দেখছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। কোলারে সোনার খনি আবার নতুন করে চালু করার ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র। গত সপ্তাহে কেজিএফ-এর খনি নতুন করে খোলার কেন্দ্রীয় প্রস্তাবে সায় মিলেছে কর্নাটক সরকারের তরফে। পাশাপাশি কেজিএফ-এর হাজার একর জুড়ে থাকা ১৩টি খনি বর্জ্যের পাহাড় নিলামে তোলার প্রস্তাবেও সায় দিয়েছে ওই রাজ্যের সরকার। অনুমান করা হয়, কোলারে (KGF) এর ১৩টি বর্জ্য পাহাড়ে প্রায় ৩.৩০ কোটি টন নিষ্কাশিত বর্জ্য পড়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রতি এক হাজার বর্জ্যের পক্রিয়াকরণ করলে এক গ্রাম করে সোনা মিলবে।
কোলার ঘিরে নতুন আশা
কেজিএফের (KGF) খনিগুলি ‘ভারত গোল্ড মাইনস লিমিটেড’ (বিজিএমএল) সংস্থার মালিকানাধীন। বিজিএমএল একটি সরকারি সংস্থা, যা ১৯৭২ সালে কেজিএফে তৈরি করা হয়েছিল। তবে কেজিএফ খনির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই গুরুত্ব হারায় এই সংস্থা।সোনার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০১৫ সালে কেন্দ্রের তরফে বিজিএমএল-সহ পুরনো খনিগুলি আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।সেই মতোই কেন্দ্রের তরফে কেজিএফ চালু করতে কর্নাটক সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায় কেন্দ্র। কর্নাটকের (Karnataka) আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এইচকে পাতিল জানিয়েছেন, কেজিএফ খনি নতুন করে চালু হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরির সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন: বালিকা বধূ রূপা এখন ডাক্তার! মাত্র ৮ বছরে বিয়ে, দুই সন্তানের মা অবশেষে স্বপ্নপূরণ
কীভাবে বন্ধ হল কোলার
১৮৭৫ সালে কোলারে সোনার খনি (KGF) গড়ে তোলে ব্রিটিশরা। ১৯৩০ সালে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কোলার গোল্ড ফিল্ডে কাজ করতেন। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় সরকার এটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সময়ে বেশির ভাগ খনির মালিকানা তুলে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের হাতে। কিন্তু ব্রিটিশরা বিপুল পরিমাণ সোনা দ্রুত তুলে নেওয়ায় ধীরে ধীরে কোলারে সোনার পরিমাণ কমতে থাকে। এককালে যেখানে এক টন আকরিক থেকে অন্তত ৪৫ গ্রাম সোনা পাওয়া যেত, সেখানে প্রতি টনে তিন গ্রাম করে সোনা মেলে। পরিকল্পনার অভাবে বিপুল পরিমাণ লোকসানের পর কর্নাটকের (Karnataka) কোলার গোল্ড ফিল্ড ২০০১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তরপর থেকে ভারতের উপর সোনার আমদানির বোঝাও বেড়ে যায়। এবার সেই খনির হৃত গৌরব ফেরানোর চেষ্টায় কেন্দ্র সরকার।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours