মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পনেরো দিনের মধ্যেই ফের দুই দিনের সফরে দিল্লি আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। শনিবার, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। গত ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) তৃতীয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার আসছেন পূর্ব নির্ধারিত দ্বিপাক্ষিক সফরে। প্রসঙ্গত, মোদি প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয় বার শপথগ্রহণের পর হাসিনাই প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি প্রথম ভারত সফরে আসছেন।
হাসিনার সফরসূচি
হাসিনার সচিবালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ২টোয় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবেন হাসিনা (Sheikh Hasina)। সেদিন সন্ধ্যায় দিল্লিতে হাসিনার সঙ্গে সৌজন্যসাক্ষাৎ করবেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার সকালে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে শুরু হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) উপস্থিতিতে দু-দেশের শীর্ষস্তরের বৈঠক। তার আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সেখান থেকে রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন হাসিনা। বেলার দিকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সম্মানে দুপুরে রাষ্ট্রীয় মহাভোজের আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় দিল্লি বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন হাসিনা।
নিরাপত্তা বিষয়ে কথা
বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) এই সফরে ১২ থেকে ১৪টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে যেসব চুক্তি বা সমঝোতার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে সেগুলির কয়েকটি রিনিউ করা হবে হবে। জানা গিয়েছে, এই বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তার বিষয়টি। মায়ানমার পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা এবং মনিপুরে সংকট, এই অঞ্চলে চিনের প্রভাবসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হবে।
অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা
এছাড়া বৈঠকে গুরুত্ব পাবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। ভারতের বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুই দেশই নিজেদের মধ্যে থাকা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। তাই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে এই নিয়েও আলোচনা হবে।’
তিস্তা চুক্তির পাশে গঙ্গা জলচুক্তি
তিস্তার পাশাপাশি এবারের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে গঙ্গা জলচুক্তি। ২০২৬-এ যেটির মেয়াদ শেষ হবে। সেই চুক্তির নবীকরণ ঢাকার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে। বাংলাদেশের বিদেশসচিব জানান, তিস্তা নিয়েও সেখানে নতুন কিছু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তিস্তা চুক্তির বিষয়টি যে পর্যায়ে আছে তাতে খুব তাড়াতাড়ি ইতিবাচক কিছু ঘটবে এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা হচ্ছে, তিস্তা ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্প বা সংরক্ষণের বিষয়ে সম্প্রতি ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে।’ তিস্তা প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করতেও আগ্রহী ভারত।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, উদ্বোধন-শিলান্যাস ৮৪ প্রকল্পের
চিনকে নিয়ে চিন্তা
ইতিমধ্যেই তিস্তা প্রকল্প নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছে চিন। যা ভাল চোখে দেখছে না দিল্লি। তিস্তা মহা প্রকল্পে একটি জলাধার নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশে বর্ষার সময় তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টির জল ধরে রাখা হবে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে দুই দেশের জল নিয়ে টানাপোড়েনের অবসান ঘটতে পারে। ওই প্রকল্পে অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে মুখিয়ে আছে চিন। নয়া দিল্লির আশঙ্কা, বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তের ওই প্রকল্পে চিনের অংশগ্রহণ ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে বিপদের কারণ হতে পারে। নয়াদিল্লির উদ্বেগকে মর্যাদা দিয়ে ঢাকা ওই প্রকল্প নিয়ে এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। হাসিনার এবারের সফরে ওই প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে কথা হতে পারে। জুলাই মাসেই বেজিং সফরে যাওয়ার কথা হাসিনার। তার আগে মুজিব-কন্যার ভারত সফর দুই দেশের কাছেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কুটনৈতিক মহল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours