মাধ্যম বাংলা নিউজ: মধ্যযুগ থেকেই ভারত ব্যবসার একটি অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। আর এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অনেক ধনী ব্যবসায়ী, বণিক, মহাজনরা। এঁরাই বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলে ভারতীয় ব্যবসার দিকটিকে উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। বর্তমান ভারতের কিছু ধনী ব্যবসায়ীর নাম মাথায় আনলে প্রথম সারিতে যাঁদের নাম আসে, তাঁরা হলেন মুকেশ আম্বানি, রতন টাটা, গৌতম আদানি প্রমুখ। কিন্তু আপনি কি জানেন স্বাধীনতার কয়েকশো বছর আগে এমন এক ভারতীয় ব্যবসায়ী ছিলেন, যিনি কিনা বর্তমানের আম্বানি, টাটা, আদানির থেকেও কয়েকগুণ সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। সেই সময় তিনি (Virji Vora) ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মধ্যে একজন। তাঁর নাম বীরজি ভোরা।
কে এই বীরজি ভোরা (Virji Vora)? কী পরিচয় তাঁর?
বীরজি ভোরা মুঘল যুগে তৎকালীন সুরাটের একজন ভারতীয় বণিক (Virji Vora) ছিলেন। জন্ম ১৫৯০ এর দশকে, ১৬১৯ থেকে ১৬৭০, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ফ্যাক্টরি রেকর্ডস তাঁকে সেই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আখ্যা দিয়েছিল।
বীরজি ভোরা (Virji Vora) কোন কোন ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন?
বীরজি ভোরা (Virji Vora) একজন খুচরো ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তৎকালীন সময়ে সোনা, মরিচ, এলাচ ছাড়াও অনেক এরকম দামী পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় তিনি প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার সম্পদের মালিক ছিলেন, যা মুদ্রাস্ফীতির হিসেব ধরলে বর্তমান ভারতের ধনী ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানির সম্পত্তির থেকেও প্রায় কয়েকগুণ বেশি ছিল। তাঁর ব্যবসার পদ্ধতি ছিল অনন্য, যা তাঁকে সাফল্যের জায়গায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।
কী ছিল তাঁর (Virji Vora) ব্যবসার পদ্ধতি?
সঠিক ব্যবসা পদ্ধতি যে কোনও মানুষকে তাঁর সাফল্যে নিয়ে যেতে বিপুলভাবে সাহায্য করে। বীরজি ভোরা (Virji Vora) সেরকম নিজস্ব ব্যবসা পদ্ধতির সাহায্যেই সেই সময়ের সব থেকে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৬১৯ থেকে ১৬৬৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সঙ্গে একচেটিয়া ব্যবসা করে গেছেন, তাঁর এই ব্যবসার পদ্ধতিও ছিল অনেকটাই আলাদা। কোনও পণ্য বিক্রি করার আগে তিনি সেই পণ্যের সমস্ত স্টক নিজে ক্রয় করে নিতেন। এর পর একচেটিয়া বিপুল অর্থ লাভ রেখে সেই পণ্য তিনি বিক্রয় করতেন। এতে তাঁর অর্থ লাভ হত পাহাড় সমান। এছাড়াও তিনি নিজে মহাজন হিসেবেও কাজ করতেন। সেই সময়ের বড় বড় ব্যবসায়ীকে তিনি অনেক টাকা ঋণ দিতেন। ইংরেজরাও তাঁর কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন। মুঘল যুগে সম্রাট ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য জয়ের যুদ্ধের সময় অর্থ সংকটে ভুগছিলেন। সেই সময় নিজের দূত পাঠিয়ে স্বয়ং বীরজি ভোরার কাছে টাকা ধার চেয়ে পাঠান, যা ভাবলে অবাক হতে হয়। তাছাড়াও তিনি মুঘল সম্রাট শাহজাহানকেও ৪ টি আরবি ঘোড়া উপহার স্বরূপ পাঠিয়ে ছিলেন।
এত সাফল্যের মাঝেও ব্যর্থতা পিছু ছাড়েনি বীরজি ভোরার (Virji Vora), কী এমন ঘটেছিল?
এই মহান সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতাও তাঁর (Virji Vora) জীবনে এসেছিল। ১৬৬৪ সালে সুরাটে একবার উপস্থিত হন ছত্রপতি শিবাজি। সেই সময় বীরজির বাড়ি, গুদাম একদম ধ্বংস করে দিয়েছিলেন মারাঠা সম্রাটের সৈনিকরা। তাঁর সাথে প্রচুর পরিমাণে টাকা, হিরে, মুক্তসহ বিভিন্ন দামি পণ্য লুট করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এর পরেও বীরজি নিঃস্ব হয়ে পড়েননি, সুরাটের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিল তাঁর সম্পত্তি। কিন্তু আবার ১৬৭০ সালে ফের শিবাজি সুরাটে আক্রমণ করেন। সেই সময় আবার ক্ষতির মুখে পড়েন বীরজি। এই বছরই মৃত্যু হয় বীরজি ভোরার। কিন্তু আজও তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী ব্যক্তির আখ্যা নিয়ে বেঁচে আছেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours