মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কফি এমন এক পানীয়, যা অবসর সময় হোক বা কর্মব্যস্ততা, সব কিছুরই সঙ্গী। মুহূর্তের মধ্যে রিফ্রেশমেন্ট নিয়ে আসার ক্ষমতা আছে এর। কফিকে সহজ ভাষায় একটি এনার্জি ড্রিংকও বলা যেতে পারে। কারণ এতে থাকে ক্যাফেনাইন নামক পদার্থ, যা আমাদের এনার্জিকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বাঙালির চা-এর আড্ডা কখনও কখনও কফির (Coffee) আড্ডাতেও পরিণত হয়। সেই কারণেই তো অনেকে ছুটে যান কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে।
ভারতে কফি উৎপাদনের অবস্থান কী?
ভারতে কিন্তু এই কফির (Coffee) আগমনের এক ইতিহাস আছে, যা অনেকেরই অজানা। আসলে এই পানীয় একটি মধ্যপ্রাচ্যের আভিজাত্য পানীয় হিসাবেই পরিচিত ছিল, যা আস্তে আস্তে সমগ্র বিশ্বে ও আমদের ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে সব থেকে বেশি কফি উৎপন্ন হয় দক্ষিণ ভারতে। মূলত পৃথিবীর সব থেকে বেশি কফি উৎপাদনকারী দেশ গুলি হল ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, কলম্বো, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া। এই দেশগুলির মধ্যে বাদ যায় না ভারতও। কারণ কফি উৎপাদনের দিক থেকে ভারতও অনেক বড় স্থান দখল করেছে বিশ্ব দরবারে। ২০১৫ অর্থবর্ষতে ভারতে প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন ব্যাগ কফি উৎপাদন হয়েছিল। প্রত্যেক বছর ভারত থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কফি রফতানি হয় বিদেশের মাটিতে। ভারতে এই কফির প্রচলন কীভাবে শুরু হয়?
ভারতে কীভাবে কফি উৎপাদন শুরু হয়? কী এর ইতিহাস?
অনেক তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রথম ভারতে কফির আগমন হয়। এর আগে কফি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের একটি পানীয় হিসেবে পরিচিত ছিল। এরপর সেখান থেকে আস্তে আস্তে তুরস্ক এবং আশপাশের বিভিন্ন দেশে এই কফির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
ভারতে কফির আগমন হয়েছিল একটু অন্যরকম ভাবে, যা শুনলে অনেকেই অবাক হন। শোনা যায়,১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বাবাবুুদান নামক এক মুসলিম হজ যাত্রী মক্কা থেকে ফেরত আসার সময় নিজের দাড়িতে লুকিয়ে মোট সাতটি কফির (Coffee) বীজ ভারতে নিয়ে আসেন। এইভাবে নিয়ে আসার কারণ ছিল তখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে কাঁচা কফির বীজ আনা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ওই ব্যক্তি আরব থেকে এইভাবে কফি বীজ ভারতে নিয়ে আসেন। ভারতে আসার পর কর্নাটকের চন্দ্রগিরি পাহাড় এলাকায় এগুলি রোপন করেন। সেই সময় থেকে শুরু হয় ভারতের মাটিতে এই কফির চাষ।
কফির বাণিজ্যিক বিক্রি কবে ও কারা শুরু করেন?
ভারতে এই কফি জনপ্রিয় হওয়া এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সব থেকে বেশি অবদান রেখেছেন ওলন্দাজরা। ওলন্দাজরা সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারত দখল করেছিল। সেই সময় তারাই ভারতে কমার্শিয়াল ভাবে কফি (Coffee) বীজ রফতানি ও বিক্রি শুরু করে।
ব্রিটিশ আমলেও কফি উৎপাদন থেমে থাকেনি, বরং পায় আরও বেশি জনপ্রিয়তা
ব্রিটিশরা ওলন্দাজদের মতো কফির জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে তুলতে ভীষণভাবে সাহায্য করেছিল। উনবিংশ শতাব্দীর সময় ভারতে কফি চাষ আরও বেশি করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ভারতে কফি চাষের শুরু থেকে আরবিকা কফির উৎপাদন সব থেকে বেশি ছিল। কিন্তু এই কফি (Coffee) প্রচুর ব্যয়বহুল এবং উৎপাদনে পরিশ্রম ছিল অনেক বেশি। তাই ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে থাকল এই আরবিকা কফি। তাই উৎপাদন হতে শুরু করল রোবাস্টা কফি। এটি খেতেও যেমন স্ট্রং তেমন জনপ্রিয়তাও অর্জন করে বেশি।
কফি বোর্ডের ইতিহাস
এরপর ১৯০৭ সালে তৈরি হয় ভারতীয় কফি বোর্ড। কফি নিয়ে শুরু হয় নানান গবেষণা। ভারতীয়দের জন্য কফি (Coffee) কিভাবে আরও সস্তায় রফতানি করা যেতে পারে, তা নিয়েও শুরু হয় অনেক গবেষণা। ১৯৯৫ সালে কফির জনপ্রিয়তা যখন শীর্ষে পৌঁছে যায় তখন এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার সমস্ত দায়ভার গ্রহণ করে ভারতীয় কফি বোর্ড। ভারতে অনেক কফি ব্র্যান্ড জন্ম নেয় এই সময়ে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours