মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অবশেষে ভারতে পৌঁছল অত্যাধুনিক সামরিক পণ্য সরবরাহকারী বিমান ‘সি-২৯৫’ এয়ারলিফটার (C-295 Airlifter)। এধরনের ৫৬টি বিমান কিনছে ভারত। এর ফলে, এক ধাক্কায় ভারতীয় বায়ুসেনার (Indian Air Force) ধার ও ভার অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এবার চিন-সীমান্তের মতো দুর্গম জায়গায় অতি সহজেই অস্ত্র ও রসদ পৌঁছে দিতে পারবে বায়ুসেনা।
চিন-সীমান্তে নিমেষেই পৌঁছে যাবে বাহিনী, অস্ত্র-রসদ
দীর্ঘদিন ধরেই বর্তমানে ব্যবহৃত পুরনো আমলের এবং তুলনামূলক ছোট ও কম শক্তিশালী অ্যাভরো-৭৪৮ বিমানকে অবসরে পাঠিয়ে তার জায়গায় নতুন শক্তিশালী, আরও প্রযুক্তিগত উন্নত এবং সর্বোপরি অধিক সক্ষমতার একটি পণ্য সরবরাহকারী বিমানের খোঁজে ছিল ভারতীয় বায়ুসেনা (Indian Air Force)। অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় বায়ুসেনাকে। বিশেষ করে ভারত-চিন সীমান্ত অঞ্চলে এই সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। সেনা ট্রাকে করে সড়কপথে বাহিনী বা সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছতে অনেক বিলম্ব হয়। এবার ‘সি-২৯৫’ (C-295 Airlifter) চলে আসায় অবশেষে বায়ুসেনার সেই সমস্যা আর থাকবে না। এর ফলে লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিমে মতো দুর্গম অঞ্চলে অতি সহজে এবং কম সময়ের মধ্যে অস্ত্র ও রসদ পৌঁছে দিতে পারবে বায়ুসেনা।
ভদোদরায় পৌঁছল ‘সি-২৯৫’
বায়ুসেনা সূত্রে খবর, বুধবার গুজরাটের ভদোদরার বায়ুসেনাঘাঁটিতে স্পেন থেকে প্রথম বিমানটি এসে পৌঁছেছে। বাহরিন থেকে বিমানটি চালিয়ে নিয়ে এসেছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন পিএস নেগি। গত ১৩ তারিখ, স্পেনের সেভিয়া শহরে একটি অনুষ্ঠানে এয়ার চিফ মার্শাল ভিআর চৌধুরী এবং স্পেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েকের উপস্থিতিতে প্রথম ‘সি-২৯৫’ (C-295 Airlifter) বিমানটি ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তুলে দিয়েছিল বিমান নির্মাতা সংস্থা ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’। বায়ুসেনার (Indian Air Force) সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির কাছে হিন্ডন বায়ুসেনাঘাঁটিতে নির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানটিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
৫৬টি ‘সি-২৯৫’ কিনেছে বায়ুসেনা
জানা গিয়েছে, ২ বছর আগে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এয়ারবাসের সঙ্গে ৫৬টি ‘সি-২৯৫’ (C-295 Airlifter) বিমান কেনার চুক্তি করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, যার মূল্য প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। চুক্তি মোতাবেক, ৫৬টি বিমানের মধ্যে প্রথম ১৬টি একেবারে ফ্লাই-অ্যাওয়ে কন্ডিশনে (সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায়) ভারতে উড়িয়ে আনা হবে। বাকি ৪০টি ভারতে তৈরি হবে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতে বিমানগুলি তৈরি হবে গুজরাটের ভাদোদরায়, টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস-এর কারখানায়।
‘সি-২৯৫’-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য
বিমানটি ১৩ ঘণ্টা টানা কম জ্বালানী খরচ করে উড়তে পারে। একটি ইঞ্জিনের সাহায্য এটি সাড়ে ১৩ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। ২টি ইঞ্জিন ব্যবহার করলে, এই বিমান ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে। এছাড়া, এই বিমানে মিড-এয়ার রিফুয়েলিং ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ, যুদ্ধবিমানের মতো মাঝ-আকাশেই জ্বালানি ভরতে সক্ষম ‘সি-২৯৫’ এয়ারলিফটার (C-295 Airlifter)। টেক অফের জন্য এই বিমানের প্রয়োজন মাত্র ৪২০ মিটার রানওয়ে। ল্যান্ডিংয়ের জন্য প্রয়োজন এর অর্ধেক। ফলে, ছোট বা সম্পূর্ণ তৈরি না হওয়া এয়ারস্ট্রিপ থেকেও উড়ান দিতে পারবে এটি। এয়ারবাসের তরফে জানানো হয়েছে, কাঁচা, নরম এবং বালুকাময় অথবা ঘাসের এয়ারস্ট্রিপ থেকে অসাধারণ শর্ট টেক-অফ এবং ল্যান্ডিং (STOL) করার ক্ষমতা রয়েছে ‘সি-২৯৫’ বিমানের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours