Mohan Bhagwat: স্বাধীনতা-৭৫ এর সংকল্প হোক আত্মনির্ভর ভারত

আজ ৭৫ বছর পর, ভারত কি সম্পূর্ণ আত্মনির্ভর হতে পেরেছে! ভারতকে যদি বিশ্বমঞ্চে যথার্থ অবদান রাখতে হয়, তবে প্রথমে তাকে সবদিক দিয়ে স্বনির্ভর হতে হবে।
mohan_bhagbwat
mohan_bhagbwat

 মোহনরাও ভাগবত

আগামী কাল, ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসব উদযাপনের জন্য ইতিমধ্যেই নানা কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং সারা বছরব্যাপী সেসব চলবে। আমরা এখন একটি উৎসবের ভাবে আছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমাদের সামনে কোনও চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা নেই। অনেক সমস্যার সমাধান ইতিমধ্যে হলেও আরও কিছু নতুন সমস্যাও দেখা দিয়েছে। তবে সমস্যা যাই থাক, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের আনন্দ আমরা যাপন করব এবং এটাই স্বাভাবিক।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, বহু শতাব্দী পর, আমরা আমাদের ইচ্ছানুযায়ী স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করতে এবং স্বশাসনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে, আমাদের জাতীয় পতাকার নীচে, বিশাল ভারতের অবস্থান। এই স্বাধীনতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভারতের মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না-হয়ে দাসত্ব ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রাম করেছিল। ভৌগোলিক দিক থেকে, বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের এই সংগ্রাম ছিল সর্বব্যাপ্ত এবং সর্বাঙ্গীণ। সমাজের সকল শ্রেণি তাদের সামর্থ্য, ক্ষমতা ও শক্তি অনুযায়ী স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রেখেছিল। যেসব কারণ আমাদের স্বাধীনতার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল সেগুলি সম্পর্কে দেশের মানুষ ক্রমশ সচেতন হয়ে উঠেছিল।  


একদিকে যখন স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সংগ্রাম জোরদার হতে থাকে, অন্যদিকে তখন সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করার এবং সম্মিলিত স্বার্থে কাজ করার জন্য জাগ্রত করার প্রচেষ্টাও গ্রহণ করা হয়েছিল। এই নিরলস প্রচেষ্টার জন্যই ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, আমরা আমাদের ইচ্ছানুযায়ী, আমাদের পছন্দ অনুযায়ী, আমাদের নিজস্ব লোকদের দ্বারা আমাদের দেশ পরিচালনার অধিকার অর্জন করেছি। ভারতের মাটি থেকে আমরা ব্রিটিশ শাসকদের বিদায় জানিয়ে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা এবং প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করি। সুতরাং, খুব সঙ্গতভাবেই আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার ৭৫ বছর আমরা  উত্সাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপন করছি।  


দীর্ঘসময়ের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য মানুষ, যাঁরা প্রকৃত বীর, তাঁরা নিজের  জীবনসহ সবকিছু বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাঁদের দৃঢ় চরিত্র, দেশপ্রেম এবং মাতৃভূমির প্রতি ভক্তি সম্পর্কে সমগ্র সমাজকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তাঁদের বীরত্ব ও ত্যাগের কাহিনি প্রচার করতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে অনেক ছোট-বড় ঘটনা অথবা ছোট-বড় কাজ ছিল যা আমাদের জাতির উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। মাতৃভূমির জন্য যে লক্ষ্যে তাঁরা স্থির ছিলেন এবং যে দায়িত্ব তাঁরা জীবন দিয়ে পালন করেছিলেন—তা শ্রদ্ধার সঙ্গে  স্মরণে রাখা উচিত। দেশে কেন স্বরাজ্য দরকার? বিদেশি শক্তি দেশের নাগরিকদের জন্য এবং তথাকথিত উন্নয়নের কাজ করলেও, কেন তাদের দ্বারা একটি দেশ শাসিত হওয়া উচিত নয়? আত্মনিয়ন্ত্রণের ও আত্মপ্রকাশের অধিকার যেকোনও সমাজের জন্য মৌলিক। এইভাবে, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা সহজাত অনুপ্রেরণা দেয়। একটি দেশ তখনই যথার্থভাবে পরিচালিত হতে পারে যখন সেটি স্বাধীন হয় এবং নিজের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে। স্বামী বিবেকানন্দ একবার বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক জাতির সৃষ্টি হয় অর্থবহ কিছু অবদান রাখতে।’ অবদান রাখতে হলে জাতিকে একইসঙ্গে স্বাধীন ও সক্ষম হতে হবে। এগুলো মৌলিক, তাই অপরিহার্যও। স্বামীজির মতো, কয়েকজন মহান ব্যক্তি ভারতবাসীকে জাগাবার কাজ করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য সশস্ত্র ও নিরস্ত্র বিপ্লবকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তাঁদের নিজস্ব ভাষায় বর্ণনা করেছেন, শুধু স্বাধীনতা অর্জনই অপরিহার্য নয়, বরং কীভাবে তার প্রয়োগ ও সংরক্ষণ হচ্ছে তাও বিবেচ্য। 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ এবং মহাত্মা গান্ধী তাঁর ‘হিন্দ-স্বরাজ’ উদ্ধৃতির মাধ্যমে স্বাধীন ভারত সম্পর্কে ধারণাগুলি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সাভারকর তাঁর বিখ্যাত ‘স্বতন্ত্র-দেবী আরতি’তে স্বাধীন দেশে সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ এবং শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছেন। আমরা বি আর আম্বেদকরের অবদান অস্বীকার করতে পারি না। দুটি বিখ্যাত বক্তৃতায় তিনি স্বাধীনতার অর্থ, উদ্দেশ্য, যুক্তি এবং একটি মহান জাতি গঠনের জন্য প্রতিটি ভারতীয়ের কর্তব্য পরিষ্কার করেছেন। অমৃত মহোৎসব উদযাপনের এই শুভক্ষণে আমাদের আত্মসমীক্ষা করা উচিত যে, স্বাধীনতার উদ্দেশ্য যদি স্বনির্ভরতা অর্জন করা হয়, তবে আজ ৭৫ বছর পর, ভারত কি সম্পূর্ণ আত্মনির্ভর হতে পেরেছে! ভারতকে যদি বিশ্বমঞ্চে যথার্থ অবদান রাখতে হয়, তবে প্রথমে কি তাকে সবদিক দিয়ে স্বনির্ভর হতে হবে? ভারত  কি সমস্ত ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে হবে।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles