Jallianwala Bagh: আজ জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ১০৫ বছর পূর্তি, জানুন সেই ইতিহাস

জালিওয়ানাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কবিগুরু ১৯১৯ সালের ৩১ মে ত্যাগ করেন নাইট উপাধি...
terror(1)
terror(1)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ১০৫ বছর পূর্তি। ১৯১৯ সালের আজকের দিনেই পা়ঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ প্রাজ্ঞণে বর্বোরিত গণহত্যার সাক্ষী থেকেছিল গোটা বিশ্ব। ঘটনার প্রতিবাদে 'নাইটহুড' উপাধি ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রাওলাট আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনে সামিল হয়েছিল গোটা দেশ। এগিয়ে এসেছিল পাঞ্জাবও। সেখানকার জালিয়ানওয়ালাবাগে (Jallianwala Bagh) জনসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সমাবেশ চলাকালীন চারদিক ঘিরে ব্রিটিশ পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছিলেন হাজারের বেশি মানুষ। জখম হন ১ হাজার ২০০ জন।

১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে জড়ো হয়েছিল আবালবৃদ্ধবনিতা 

১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রাওলাট আইন (Jallianwala Bagh) পাশ করা হয়েছিল। আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিনা বিচারে যে কাউকে কারারুদ্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। আইনটি পাশ হতেই, ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন দেশের হাজার হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামী। আইনের প্রতিবাদে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে জড়ো হয়েছিল আবালবৃদ্ধবনিতা। বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ পুলিশবাহিনী সমাবেশ স্থলের চারদিক ঘিরে ফেলে। কোনও বিক্ষোভকারী যাতে পালাতে না পারেন, তারজন্য সমস্ত প্রস্থানের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চলে নির্বিচারে গুলি। শত শত লোক নিহত হন।

কুয়ো থেকেই ২ শতাধিকের বেশি লাশ উদ্ধার করা হয় 

জখম হন আরও বেশি। জানা যায় রাউলাট আইন প্রবর্তনের পরেই সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিক্ষোভকারীরা সচেতন ছিল না। সভাস্থলের মধ্যে একটি কুয়ো ছিল। যখন চারদিক ঘিরে ব্রিটিশ বাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছে, তখন অনেক বিক্ষোভকারীর প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় কুয়োতে পড়ে মৃত্যু হয়। অনেকে আবার ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে কুয়োর (Jallianwala Bagh) মধ্যে পড়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল। কুয়ো থেকেই ২ শতাধিকের বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয় সারা দেশ।

মাথায় রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ডায়ারের 

এরপরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে তদন্তের জন্য হান্টার কমিশন গঠন করে ব্রিটিশ সরকার। সরিয়ে দেওয়া হয় জেনারেল ডায়ারকে। ১৯২৭ সালে ২৩ জুলাই মাথায় রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ডায়ারের। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় জালিয়ানওয়ালাবাগের (Jallianwala Bagh) ঘটনা পিছু তাড়া করেছিল তাঁকে।

বিপ্লবী উধম সিংয়ের গুলিতে প্রাণ হারান ও’ডায়ার 

ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, জেনারেল ডায়ার ঘটনাস্থলে থাকলেও, তিনি কিন্তু গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি। পঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ফ্রান্সিস ও’ডায়ারই গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে এর ফলই ভুগতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৪০ সালে ১৩ মার্চ লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে বিপ্লবী উধম সিংয়ের (Jallianwala Bagh) গুলিতে প্রাণ হারান ও’ডায়ার।

স্মৃতিসৌধ নির্মাণ

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫১ সালে ভারত সরকার জালিয়ানওয়ালাবাগে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে। প্রতি বছর আজকের দিনটিকে নিয়মিতভাবে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আসা হচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিবাদ

প্রসঙ্গত, গীতাঞ্জলি কাব্য লেখার জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপরেই ১৯১৫ সালে ৩ জুন সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ইংরেজরা নাইটহুড উপাধি সম্মানে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালের ৩১ মে তিনি ত্যাগ করেন সেই উপাধি। কারণ জালিওনাবাগের হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারেননি কবিগুরু। ঘটনার প্রতিবাদ হিসেবে তিনি উপাধি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শোনার পরে কবিগুরু মনে করেছিলেন ব্রিটিশদের এই বর্বরোচিত আচরণ বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিত। এরপরই তিনি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গান্ধীজিকে তাঁর এই প্রস্তাবের কথা তিনি চিঠি লিখে জানান। চিঠিতে লেখেন, ‘‘আই ডু নট ওয়ান্ট টু এম্বারাস দ্য গভর্মেন্ট নাও’’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'নাইটহুড' ত্যাগের চিঠি, ব্রিটিশ সরকারের কাছে পাঠানো আজ এক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে রয়েছে।

 

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

 

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles